বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
মানিকগঞ্জ:বহু প্রতিক্ষিত পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরদিন সদা যানজটের ফেরীঘাট পাটুরিয়ায় ২৬ জুন দিনব্যাপী সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে এক ভিন্ন চিত্র। সবকটি ফেরীঘাটের পল্টুনে ফেরীগুলো বাধা আছে গাড়ীর আশায়। কিন্তু অন্যান্য দিনের মতো ফেরী ঘাটে নেই কোন অপেক্ষমান বাস, ট্রাক বা ছোট কোন গাড়ী। একই সাথে চোখে পড়েনি ঘাটের ওপারে যাওয়ার মতো কোন মানুষজন। ফেরীঘাটের চিরচেনা দৃশ্য যেন একদিনের ব্যাবধানে উধাও হয়ে গেছে।
বিআইডব্লিউটিসি কতৃপক্ষর সাথে কথা বলে জানা গেল, ২৬ জুন সকাল হতে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত (শনিবারের ট্রাকসহ) পাটুরিয়া ঘাট পার হয়েছে এক হাজারের মতো।
পাটুরিয়া ঘাট নির্ভর জীবিকা যাদের তাদের মধ্যে ঘাটের হোটেল ব্যাবসা অন্যতম। এছাড়াও রয়েছে পান, সিগারেটের দোকান। চা সহ রয়েছে নানান ধরনের হকার বা ফেরি করে জিনিষ বিত্রিুর ব্যাবসা। এদের সবার সাথে কথা বলে জানা গেল তাদের ব্যাবসার পতনের কথা।
পাটুরিয়া ঘাটের হোটেল ব্যাবসায়ী আজম খান জানালেন, গত ২৩, ২৪ ও ২৫ জুন আমাদের হোটেলে যে পরিমান বিক্রি হয়েছিল আজ বিক্রি হয়েছে তার একশত ভাগের এক ভাগ। সারাদিন যা বিক্রি হয়েছে তা দিয়ে হোটেল কর্মচারীদের বেতন দেওয়া যাবে না। তাদের বেতন দিতে হবে আমার মূলধন থেকে। এভাবে হোটেল ব্যাবসা বাদ দিতে হবে বলেও তিনি আক্ষেপের সাথে জানালেন। একই কথা বলেছেন, ঘাটের হোটেল ব্যাবসায়ী রহমান আলী, আবেদ আলী, মোশারফ মিয়া, বনমালী দাসসহ ২১ জন হোটেল মালিক।
চার নম্বর ফেরী ঘাটে ফাষ্ট ফুটের ছোট দোকানদার প্রতিবন্ধি লিটন মিয়া। আগে প্রতিদিন চিপস, ড্রিংকস, বিস্কুটসহ নানান জিনিষ বিক্রি করতেন গড়ে চার/পাচ হাজার টাকা। কিন্তু সেতু চালুর পরেরদিন বিক্রি করেছেন মাত্র তিনশ টাকা। সে কিভাবে চলবে তা ভেবেই পাচ্ছে না। ঘাটের বয়োবৃদ্ধ নাজিমুদ্দিন মোল্লা (৬৭) বিগত পাচ বছর যাবত ঘাটে হকারি করে চা সিগারেট বিক্রি করে চার জনের সংসার চালান।
তিনি জানালেন, গত বিসুদবার চা সিগারেট বেচচি সতেরশ ট্যাকা। শুক্রবারও পনেরশ ট্যাকা বেচচি। আর শনিবার সেতু উদ্ভোধনের দিন বেচচি বারশ ট্যাকা। কিন্তু আজ রোববার দিন ভইর্যা বেচলাম খালি ষাট ট্যাকা। কথাগুলো বলে বিমর্ষ হয়ে গেলেন তিনি। নাজিমুদ্দিনের সাথে আরেক বয়োবৃদ্ধ সফি উদ্দিন (৬৪) হকারি করে আনারস বিক্রি করেন ঘাট এলাকায়। তিনিও প্রায় একই কথা বলেছেন। আগে প্রতিদিন আনারস বিক্রি হতো একশ ত্রিশ/চল্লিশ পিচ। আর রবিবার বিক্রি হয়েছে, তার ভাষায়, মাত্র তিন হালি দুই পিচ। যে ট্যাকা বেচচি তা দিয়া কি করমু? এভাবেই বললেন তার হতাশার কথা।
এমন হতাশা আর নিরাশার কথা বলেছেন, ঘাটের হকার নাসির, বাবলু, আলাল, রহম আলী, কেরামত আলী, হোচেন মিয়া, রাজ্জাক, হেকমত সহ শতাধিক হকার। হঠাৎ করেই এসব ব্যাবসায়ীদের মাথায় যেন আকাশ ভেংগে পড়েছে। তারা কোন কিছু ভাবতে পারছে না। তবে এদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা বলছেন, কিছুদিন গেলে ঘাটের অবস্থা কিছটা উন্নতি হবে। কারণ হিসাবে তারা বলছেন, অনেকে নতুন-নতুন সেতু পাড় হচ্ছেন শখ করেই। কিছুদিন গেলে এদের মধ্যে ভারী লোডেড ট্রাকগুলো আবার পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে পার হওয়া সুরু করবে। তখন হয়তো এতো করুন অবস্থা থাকবেন।