হ্যা, সত্যিই বলছি।।
তার ব্যাগে রয়েছে নিজের ‘হৃৎপিন্ড’। তার কিছুতেই বাঁচার কথা নয়। আজরাইল এসে জান কবজ করে নেয়ার কথা। কিন্তু বিজ্ঞান ঠেকিয়ে দিয়েছে অনিবার্য মৃত্যু।
মানব দেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংগ, হার্ট বা হৃৎপিন্ড। যা প্রতি মুহুর্তে আমাদের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। শরীরের সেই অবিচ্ছেদ্য অংশ পিঠে বয়ে বেড়ান তিনি। এটা কোন অলৌকিক ঘটনা না, এটা বাস্তব এক ঘটনা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক অন্যতম সফলতা এটি। মৃত মানুষকে জীবন দানের মতই সফলতা এটি। ভদ্র মহিলার নাম ‘সেলওয়া হোসেন’ তিনি এখন পরিপূর্ণ সুস্থ, ও স্বাভাবিক ভাবে চলা ফেরা করতে পারেন। হাসতে পারেন কাঁদতে পারেন। তার সকল অনুভুতি ও এক্টিভিটিজ সবই স্বাভাবিক রয়েছে।
আজ থেকে ছয় মাস আগে সেলওয়া বুকে ব্যাথা অনুভব করেন। তখন তিনি স্থানীয় হাসপাতালে যান। সেখানে তার অবস্থা সঙ্কটাপন্ন বুঝতে পেরে অপেক্ষাকৃত ভাল হাসপাতালে রেফার করা হয়। সেখানকার ডাক্তাররা তার অবস্থা বিবেচনা করে ব্রিটেনের বিখ্যাত ‘হেরেফিল্ড’ হাসপাতালে পাঠান। ওখানে তার শারীরিক অবস্থার পরীক্ষা নিরীক্ষা করে হার্ট সচল রাখা সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকরা জানিয়ে দেন। তা হলে আর কি বিকল্প আছে?। তখন ডাক্তারদের বোর্ড বসে তার পরিবারের সাথে আলোচনা করে। তাতে এলো এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত । তার শরীরে হার্ট সরিয়ে সেখানে বসানো হয় প্লাস্টিকের চেম্বার, যা মানবদেহের হার্টের কাজ করবে। এবং প্লাস্টিকের এই চেম্বার সচল রেখে বায়ুর চাপ সৃষ্টি করতে প্রয়োজন হয় একটি ‘পাম্প’। এই পাম্প সচল রাখতে দরকার হয় একটি মোটরের। এবং সেই মোটর সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি ব্যাটারির। এবং এই ব্যাটারি, পাম্প ও মেশিন তিনি বয়ে বেড়ান তার পিঠের ঐ ব্যাগে। ঐ ব্যাগের পাম্প সাদা দুটি পাইপের মাধ্যমে হাওয়া দিয়ে তার বুকে স্থাপন করে দেয়া প্লাস্টিকের চেম্বার চালু রাখে, যা তার দেহে হার্টের কাজ করে রক্ত প্রবাহ সচল রাখে। ফলে বেঁচে আছেন সেলওয়া হোসেন। এবং স্বাভাবিক ভাবেই বেঁচে আছেন।
বিশ্বের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি কৃত্রিম ‘হার্ট’ নিয়ে বেঁচে আছেন। তার এই চিকিৎসায় সর্বমোট খরচ হয়েছে ৯৬ লাখ টাকা। সামনে আরো গবেষণার মাধ্যমে এই চিকিৎসার ব্যয় আরো কমিয়ে আনা সক্ষম হবে। তখন আরো অনেককে এই চিকিতসা নিয়ে বেঁচে থাকতে দেখা যাবে।
সেলওয়া’র এই বেঁচে থাকাকে নিঃসন্দেহে ডাক্তারদের দ্বারা জীবন দান বলা যায়। কারণ, তিনি বাংলাদেশ বা অনুন্নত দেশে থাকলে আজ বেঁচে থাকতন না্ এমনকি তিনি তার পিঠের ঐ ব্যাগ ছাড়াও বেঁচে থাকতে পারবেন না, ডাক্তাররা বলেছেন ব্যাগের মেশিনে কোন সমস্যা হলে সেলওয়া সর্বোচ্য ৯০ সেকেন্ড বেঁচে থাকতে পারবেন।
লেখা: মাহমুদুল হাসান