- ১০ কোটি টাকার বই ফেরত আন্দরকিল্লায়
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: বছরের এ সময়ে ব্যস্ততা শুরু হয় স্কুল-কলেজের বিভিন্ন সহায়ক পুস্তক প্রকাশক ও লাইব্রেরিসমূহের। তা চলে সেই একেবারে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত। কিন্তু এবারে পরিস্থিতি একেবারে ভিন্ন। তারা হাত-পা গুটিয়ে বসে আছেন।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। পুস্তক বিক্রি নেই।
আন্দরকিল্লার ব্যবসায়ীরা জানালেন, তাদের দিনকাল খুব খারাপ যাচ্ছে। করোনাকালে অধিকাংশ কর্মচারি বিদায় করার পরও প্রতিমাসে প্রচুর লোকসান গুণতে হচ্ছে। একজন ব্যবসায়ী বললেন, পুস্তক বাদ দিয়ে অন্য কোন ব্যবসায় যাব সেই পুঁজিও নাই।
চলতি বছরের গোড়ার দিকে বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো বইয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ ফেরত এসেছে। বিভিন্ন সৃজনশীল গাইড বই,পাঠ্যবইয়ের সহায়ক বই, বিভিন্ন ক্লাসের ইংরেজি ও বাংলা গ্রামার । ফটিকছড়ি, সাতকানিয়া ও সীতাকুণ্ড থেকে ফেরত এসেছে প্রচুর বই। এতে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের প্রায় ১০ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান তাদের সমিতির নেতারা।
আরও জানান, ব্যবসা না থাকায় চরম অর্থসংকটে রয়েছে এর সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট বিপুল মানুষ। করোনার কারণে এপ্রিল ও মে মাস বইয়ের দোকান বন্ধ থাকার পর জুন থেকে দোকান খোলা হলেও বিক্রি নেই।আবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা তো অটো পাস। তাতে বই বিক্রি নেই।
নতুন বই প্রকাশনার হিড়িক পড়ে বছরের এ সময়ে । অনেক সহায়ক বই প্রকাশিত হয়। কিন্ত এ বছর তা বন্ধ। ব্যবসা না থাকায় অনেকে খরচ কমানোর জন্য দোকানের কর্মচারি বিদায় করেছেন। অল্প যে ক’জন তাদের বেতন দেয়াও মুশকিল হয়ে পড়েছে চলমান অবস্থায়।
আন্দরকিল্লার অপর এক দোকান মালিক বললেন,বই ব্যবসায় এত করুণ অবস্থা এই প্রথম। দোকানের ৪ মাসের ভাড়া বাকি। সারাদিনেও কোন ক্রেতা আসেন না।
অপর এক দোকান কর্মী জানালেন, আগে যেখানে প্রতিদিন ৮০ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকার বই বিক্রি হতো। গত ছয় মাস ধরে তা দৈনিক গড়ে ২ থেকে ৩ হাজার টাকায় নেমে এসেছে।
বাংলাদেশে পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির চট্টগ্রামে সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ । এগুলোগুলো হলো- গাজী প্রকাশনী,শিশু বাগ প্রকাশনী,অগ্রনী প্রকাশনী, এনেক্স লাইব্রেরি, জনতা বুক হাউস, রংধনু প্রকাশনী, চট্টগ্রাম প্রকাশনী, শরিফা প্রকাশনী, প্রিমিয়ার পাবলিকেশন।
এছাড়া, আরো শ’খানেক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অস্তিত্ব রয়েছে। এনেক্স লাইব্রেরির স্বত্ত্বাধিকারি রহিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের সামনে অন্ধকার। আগের তুলনায় ১ শতাংশও বিক্রি নেই। সারাদিনে ১ হাজার টাকারও বই বিক্রি হয়না। দোকানে প্রতি মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকার খরচ আছে। সেই টাকাটাও উঠে না। মাস শেষে কিভাবে নিজে চলবো আর দোকানের ভাড়া দিবো? জানি না কি হবে। সামনে স্কুল-কলেজ খোলার আশাও দেখছি না।’
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির অতিরিক্ত সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করিম বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, লাইব্রেরিতে লাখ লাখ টাকার বই অবিক্রীত পড়ে আছে। যদি সিলেবাস পরিবর্তন না হয় তবে আগের বইগুলো নতুন ভাবে বিক্রি করা হবে, না হলে বাতিল হয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, ইতিমধ্যে প্রায় ২০শতাংশ পাবলিকেশন বন্ধ হয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত আমরা সরকার থেকে কোনো প্রণোদনা পাইনি। যদি করোনা আবার থাবা দেয় তাহলে চট্টগ্রাম এর বাকী প্রকাশনাগুলো বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশংক প্রকাশ করেন তিনি।