Home পরিবেশ পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন

পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন

 

সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান: সুন্দরবন হচ্ছে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। ১৯৯৭ সালে এটি বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। বাংলাদেশের বহু দর্শনীয় স্থান ঘুরেছি কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে সুন্দরবন কখনও দেখা হয়নি। সেই আফসোস মেটাতেই এবার আমার ঘুরবাজ বন্ধুর সঙ্গে ঘুরে এলাম রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন।

বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, বাহারি গাছপালা, বন্য পশুপাখি ও জীবজন্তু ঘেরা গা ছমছম পরিবেশে সুন্দরবন ভ্রমণ ছিল খুব রোমাঞ্চকর। এ ভ্রমণ কাহিনী নিয়ে দারুণ একটি অ্যাডভেঞ্জার গল্পের বই লিখে ফেলা সম্ভব, সেখানে অল্প কথায় সুন্দরবন নিয়ে কিছু লেখা আমার কাছে যেন এক দুরূহ ব্যাপার।

ঢাকা থেকে বাসে করে আমরা ৬৮ জনের দলবল নিয়ে যাত্রা শুরু করি। বাসের ভেতর হইচই গান-বাজনা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে শেষ বিকালের দিকে পৌঁছে গেলাম খুলনায়। সেখানে একটা হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিলাম।

তারপর আবার বাসে করে পৌঁছে গেলাম মোংলা সমুদ্রবন্দরে। সেখানে নির্ধারিত জাহাজে উঠে যার যার অবস্থান বুঝে নিলাম। জাহাজে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা খুব ভালো ছিল। সবাই দলবদ্ধভাবে সুন্দরবন ঘুরে দেখা আর প্রতিদিনই প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত জাহাজের ডেকে বসে খোলা আকাশের নিচে গান-বাজনা ও জম্পেশ আড্ডায় মেতে থাকতাম। সকালে ঘুম ভাঙত বনের পাখিদের কলরবে। আমরা সবাই যেন আমাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব আবারও ফিরে পেয়েছিলাম।

এজেন্সির ব্যবস্থাপনায় আমাদের টিমের সঙ্গে যুক্ত হয় একজন গাইড ও তিনজন বন্দুকধারী নিরাপত্তাকর্মী। তাদের দিকনির্দেশনা ও সার্বিক সহযোগিতায় আমরা নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে হৈ-হুল্লোড় করে সুন্দরবন পরিদর্শন করি। সেখানে ঘুরে দেখার জন্য বন বিভাগের যাবতীয় ফরমালিটিজ এজেন্সি আগেই সম্পন্ন করে রাখে। সুন্দরবনের যেসব স্থানে দর্শনার্থীরা সাধারণত ভ্রমণ করে সেগুলো হল করমজল, হিরণ পয়েন্ট, কটকা বিচ, স্মরণখোলা, টাইগার পয়েন্ট, ডিমের চর ইত্যাদি। আমরা প্রায় সবগুলো স্থানেই ঘুরেছি। যেদিন সকালে জাহাজ সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে রওনা করে, আমাদের সবার সে কী উচ্ছ্বাস! যেন এক অজানা স্বপ্নপুরীর দেশে জাহাজ ঢেউ তুলে এগিয়ে যাচ্ছে।

সুন্দরবনের মোট আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার, যার বাংলাদেশের অংশে আছে ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার অংশ নিয়েই বাংলাদেশের সুন্দরবন।

জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১ হাজার ৮৭৪ বর্গকিলোমিটারজুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮টি উভচর প্রাণী। সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এ বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। সুন্দরবনের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও একই সঙ্গে বিপজ্জনক স্থান হচ্ছে হারবাড়িয়া।

এটি বাঘের বাড়ি নামে পরিচিত। এখানে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর নানা বৈচিত্র্যময় প্রাণী ও পাখি দেখা যায়। খুব কাছ থেকে হরিণ দর্শন মেলে। বানর ও বন্য শূকর তো অহরহ। সুন্দরী গাছ এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। পুরো এলাকা সুন্দরী, গোলপাতাসহ বিভিন্ন উদ্ভিদে ঢাকা। এছাড়া আছে জাম ও কেওড়া বৃক্ষ। এখানকার একটি দীর্ঘ কাঠের পথ গভীর ম্যানগ্রোভ বন ঘুরে দেখতে পর্যটকদের সহায়ক হিসেবে কাজ করে।

সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে কটকা বিচ অন্যতম। এ যেন সবুজে ঘেরা বিভিন্ন জীব বৈচিত্র্যের সমাহার। এখানকার সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার। এটি বিরল ও রাজকীয় বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল।

এখানে সকাল-সন্ধ্যা হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়ার মতো পাখিদের কলতান কানে বাজে। এছাড়া আছে হরিণ, বাঘ ও বিভিন্ন ধরনের বানর। এখানেও সুন্দরী, গোলপাতা, কেওড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ দেখা যায়।

করমজল পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। কারণ সুন্দরবনের প্রবেশপথে ও মোংলা বন্দরের সবচেয়ে কাছে করমজল অবস্থিত। পাখিপ্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি জায়গা। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বিমুগ্ধ হওয়ার মতো।

বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী তো আছেই। হরিণ ও কুমিরের প্রজনন কেন্দ্র এই করমজল। এছাড়া এখানে লবণাক্ত পানির কুমির, ডুব হাঁস, বানর, সাপ, শিয়াল, নদীর ডলফিন চোখে পড়ার মতো।

যেভাবে যাবেন : ঢাকা থেকে সুন্দরবনে যাওয়ার বেশ কিছু পথ আছে। সেটা নির্ভর করবে আপনার বাজেট ও দিনযাপনের ওপর। আমাদের মতো যেতে হলে, ঢাকা থেকে প্লেন, ট্রেন বা বাসে করে খুলনা যেতে হবে।

সেখান থেকে মোংলা বন্দরে এবং ওখান থেকে নৌপথে যাওয়ার জন্য জাহাজ, লঞ্চ, ট্রলার নিতে হবে। তবে খুলনা যাওয়ার আগেই কোনো ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস এজেন্সিতে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো। এতে করে সেখানে গিয়ে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না।

তাদের বিভিন্ন ধরনের প্যাকেজ আছে, বাজেটের মধ্যে পছন্দ মতো প্যাকেজ নিয়ে সুন্দরবন ঘুরে আসা যায়। এদের মাধ্যমে দুই দিন-তিন রাত প্যাকেজে সর্বনিু মাথাপিছু ২ হাজার ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার ৫০০ টাকা খরচ পড়বে। তবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গেলে খরচ আরও অনেক কম পড়বে কিন্তু এতে নিরাপত্তার ঝুঁকি থাকে।