Home First Lead পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক ব্র‌্যান্ডগুলো ফিরে আসছে

পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক ব্র‌্যান্ডগুলো ফিরে আসছে

ছবি সংগৃহীত
বন্দরে লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করার আহ্বান

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, ঢাকা:স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার হওয়ায় পোশাক খাতে আন্তর্জাতিক ব্র‌্যান্ডগুলো ফিরে আসছে। পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)। শনিবার সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, দু’মাসের বেশি সময়ের  শ্রমিক অসন্তোষের ফলে ৩০০ থেকে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের মতো পোশাক উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এ ছাড়া ৫ থেকে ৬ শতাংশ ক্রয়াদেশ অন্য দেশে চলে গেছে। তবে স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার হওয়ায় আবারও তারা ফিরছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ। ছবি সংগৃহীত

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-বিজিএমইএর জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি নাছির উদ্দিন, রকিবুল আলম চৌধুরী; পরিচালক শোভন ইসলাম, শামস মাহমুদ, রাজিব চৌধুরী, জাকির হোসেন, মহিউদ্দিন রুবেল, শেহরিন সালাম ঐশী, নুরুল ইসলাম, সাইফুদ্দিন সিদ্দিকী সাগর, রেজাউল আলম মিরু।

 গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে পোশাক শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। কোথাও কোথাও সহিংসতার ঘটনাও ঘটেছে। এই পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে পোশাক খাত বর্তমানে স্থিতিশীলতা অর্জন করেছে মন্তব্য করে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কিছু কার্যাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোতে স্থানান্তরিত হয়েছে।

তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে যেখানে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ, সেখানে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ আর ভারতের ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় প্রবৃদ্ধিতে পিছিয়ে যাওয়ার ঘটনায় বোঝা যায়, রপ্তানি আদেশ এসব দেশে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিজিএমইএ বোর্ডের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সরকারের নির্দেশনায় পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাবাহিনীর নেতৃৃত্বে যৌথবাহিনী গঠন হয়েছে এবং যৌথবাহিনী গার্মেন্টস অধ্যুষিত অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিতভাবে টহল পরিচালনা করেছে। বিজিএমইএ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় কমিউনিটি পুলিশিং চালু করেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে অগাস্ট মাসের বেতন পরিশোধে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়ায় বিজিএমইএ থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতা চেয়ে অর্থ উপদেষ্টাকে চিঠি দেয়া হয় ও বিজিএমইএ বোর্ড বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে দেখা করেন। বিজিএমইএ’র অনুরোধের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আগস্ট মাসের বেতনভাতা পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

শ্রম অসন্তোষে আশুলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত ৩৯টি পোশাক কারখানার সেপ্টেম্বর মাসের বেতনভাতা পরিশোধের ক্ষমতা ছিল না জানিয়ে তিনি বলেন, ওই সব কারখানা যাতে বিপদে না পড়ে, সেজন্য তাদেরকে সুদহীন সহজ শর্তের ঋণ দিতে অর্থ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, পোশাক শিল্পের ৪০ লাখ শ্রমিক যাতে ন্যায্য মূল্যে পণ্য পান, সেজন্য তাদের টিসিবি’র কর্মসূচিতে নেয়া হয়েছে।

শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিন মাস যাতে কোনো কারখানায় গ্যাস-বিদ্যুতের লাইনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা হয়, সেজন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। একইসঙ্গে ব্যাংক সুদের হার একক অঙ্কে নামিয়ে আনারও আহ্বান জানান।

প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে বিজিএমইএ কয়েকটি দাবি জানিয়েছে। দাবিগুলো হলো: শিল্পে সুষ্ঠু আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা; কাস্টমস বন্দর সংক্রান্ত প্রক্রিয়াগুলো সহজতর ও দ্রুততর করা; চট্টগ্রাম বন্দরে লোডিং ও আনলোডিংয়ে অহেতুক সময়ক্ষেপণ বন্ধ করা; আগামী ৩ মাস কারখানার ইউটিলিটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করা; ব্যাংক খাতের সংস্কার যেন উৎপাদন ও বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব না রাখে; কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কারণে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়; শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে যথাযথ নীতি সহায়তা প্রণয়নের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা; শিল্পে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা ও বিদ্যুতের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণসহ একটি টেকসই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি নীতি প্রণয়ন করা; সব ধরনের ঋণের বিপরীতে ঋণ শ্রেণিকরণ না করা এবং পুনঃতফসিলকরণের সুযোগ দেয়া; তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জরুরিভিত্তিতে সিএনজি স্টেশন থেকে সিলিন্ডারের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহের নির্দেশনা প্রদান করা; ঝুটসহ অন্যান্য রিসাইকেলিং উপযোগী বর্জ্য অপসারণকে বাইরের প্রভাবমুক্ত রাখা; পোশাক খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে প্রণোদনা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনা করা; পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য একটি নিরাপদ এক্সিট পলিসির ব্যবস্থা করা এবং  শিল্পে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে আইনের আওতায় কঠোর ব্যবস্থা নেয়া।