জুলহাজ ইব্রাহিম
চট্টগ্রামঃ এখন পৌষের শেষ। কিন্তু নগরীর শপিং সেন্টারগুলোতে প্রচুর শীতবস্ত্র অবিক্রীত পড়ে আছে।
শীত মওসুমের শুরু থেকে এ বছর গরম কাপড়ের বাজার তেমন জমেনি। দোকানিদের আশা ছিল শীতের প্রকোপ বাড়লে শীতবস্ত্রের বিক্রিও বাড়বে। কিন্তু তাদের সে আশায় গুড়েবালি। শীত বেড়েছে, কিন্তু বিক্রি বাড়েনি মোটেও। মূল্য ছাড়ের অফার দিয়েও বিক্রি বাড়ানো যায়নি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আফমি প্লাজা, সানমার ওশান সিটি, ইউনুস্কো সিটি সেন্টার, গুলজার টাওয়ার ও নিউমার্কেটসহ অন্যান্য শপিং সেন্টারের শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা গত বছরের তুলনায় অনেক কম। ক্রেতাদের অপেক্ষায় মলিন মুখে বসে আছেন দোকানিরা। কিছু কিছু দোকানে অল্প পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে শীতের কাপড়। এসব শপিং সেন্টারগুলোতে ‘শৈল্পিক’, ব্লু মুন, ওয়েস্টউড, জেন্টলপার্ক, জেন্টলম্যানসহ বিভিন্ন ব্রান্ডের দোকানগুলোতে শীতবস্ত্রের মূল্য ছাড়ের নানা অফার দেয়া এরপরেও শীতবস্ত্রের বিক্রি গত বছরের তুলনায় অনেক কম বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
নিউমার্কেটের ‘শৈল্পিক’ এর সেলসম্যান মো. সালাউদ্দিন বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, ”এবছর শীতের কাপড়ের বিক্রি খুবই কম। মার্কেটের প্রায় সব দোকানই ক্রেতা শূন্য। অতীতে মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ৭০/৮০ হাজার টাকার শীতবস্ত্র বিক্রি হতো। অথচ এবছর দৈনিক গড়ে ২০ হাজার টাকারও বিক্রি হচ্ছে না। করোনাকালীন সময়ে অধিকাংশ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে এবারের শীতবস্ত্রের বাজারে।”
করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের শংকায় সাধারণ মানুষে দোকানবিমুখ।
ইউনুস্কো সিটি সেন্টারের ‘আরবান ভগ’ এর সত্ত্বাধিকারী পাভেল শিকদার বিজনেসটুডে২৪ কে বলেন, ” অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর শীতের কাপড়ের দাম কিছুটা কম হওয়া সত্ত্বেও বিক্রির হার অনেক কম। কম দামের পাশাপাশি মূল্য ছাড়ের বিভিন্ন অফারে এবছর ডেনিম জ্যাকেট বিক্রি হচ্ছে ৮’শ টাকা থেকে ১২’শ টাকায়, লেদারের জ্যাকেট মান অনুযায়ী ১ হাজার টাকা থেকে ১৫’শ টাকা ও হুডি বিক্রি হচ্ছে ৩’শ টাকা থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত। শীতের তীব্রতা বাড়লেও শীতের কাপড়ের ক্রেতা এখনো পর্যন্ত বাড়েনি সেই হারে।”
তবে কিছুটা ভিন্নচিত্র পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজারে। তাইওয়ান, কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানিকৃত পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজার হিসেবে পরিচিত খাতুনগঞ্জ ও জহুর হকার্স মার্কেটে ক্রেতাদের সমাগম ও বিক্রির হার নগরীর অন্যান্য শপিং সেন্টার অপেক্ষা বেশি। ব্যবসায়ীদের ভাষায় ‘গাইড’ নামে খ্যাত এসব আমদানিকৃত পুরাতন শীতের কাপড়ের অধিকাংশ ক্রেতাই নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের।
গাইডের কাপড় কিনতে আসা ক্রেতা মো. রফিক বলেন, ”আমি শহরে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাই। শীতের প্রকোপ বেড়েছে, তাই পরিবারের সদস্যদের জন্য কম দামে পুরাতন শীতের কাপড় কিনতে এসেছি।”
জহুর হকার্স মার্কেটের পুরাতন শীতবস্ত্রের বিক্রেতা মো. জামাল জানালেন, আগে এসব ‘গাইডে’র কাপড়ের অধিকাংশ ক্রেতা ছিল দিনমজুর বা শ্রমিক। কিন্তু করোনাতে মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়ায় অনেক নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষই এবছর কম দামের এসব কাপড় কিনতে আসছেন। তাই শীতের প্রথম দিকে এক দফা বিক্রি শেষ করে আমরা আবারো গাইডের কাপড় তুলেছি দোকানে।”