প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারের গৃহীত কৃষিবান্ধব নীতি ও কার্যক্রমে দানাদার খাদ্য, মাছ, গোশত ও ডিম উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ স্বয়ংসম্পূর্ণ এবং দুগ্ধ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে।
রবিবার ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উপলক্ষে গতকাল শনিবার এক বাণীতে তিনি একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ধান, পাট, আম, পেয়ারা আলু প্রভৃতি ফসল ও ফল উৎপাদনে বাংলাদেশ শীর্ষ আটটি দেশের মধ্যে রয়েছে। কৃষির উন্নয়নে এ সাফল্য সারা বিশ্বে বহুলভাবে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে। নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিতসহ কৃষিপণ্যের রফতানি বাড়াতে উত্তম কৃষিচর্চা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। একইসাথে স্থাপন করা হয়েছে অ্যাক্রিডিটেড ল্যাব ও আধুনিক প্যাকিং হাউজ।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসঙ্ঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও ১৬ অক্টোবর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য ‘কাউকে পশ্চাতে রেখে নয়। ভালো উৎপাদনে উত্তম পুষ্টি, সুরক্ষিত পরিবেশ এবং উন্নত জীবন’ বর্তমান সংকটাপূর্ণ বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে যথাযথ ও সময়োপযোগী হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা দেশব্যাপী ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। এতে কৃষিনির্ভর শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। রাজধানীর সাথে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার নিরবচ্ছিন্ন, সাশ্রয়ী ও দ্রুত যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি। এ সেতুর মাধ্যমে নদীবিধৌত উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যসম্পদ আহরণ এবং সারাদেশে দ্রুত বাজারজাতকরণের ফলে এ অঞ্চলের কৃষি ও কৃষকের জীবনমান আরো উন্নত হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে কৃষি ও পরিবেশের সুরক্ষাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব কর্তৃক গৃহীত কৃষি ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিকল্পনা ও কার্যক্রমের ধারাবহিকতায় তিনি বিগত সাড়ে ১৩ বছরে কৃষিবান্ধব ও বাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। কৃষির উন্নয়ন ও কৃষকের কল্যাণকে সর্বোচ্চ বিবেচনায় এনে ‘রূপকল্প-২০৪১’ এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি-২০১৮, নিরাপদ খাদ্য আইন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ সহ উল্লেখযোগ্য কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন।
এছাড়া সরকার বন্যা, খরা, লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবনসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় ভাসমান চাষ, বৈচিত্র্যময় ফসল উৎপাদন, ট্রান্সজেনিক জাত উদ্ভাবন, পাটের জেনোম সিকোয়েন্স উন্মোচন ও মেধাস্বত্ব অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন,‘ কৃষির উন্নয়নে আমরা কৃষকদের জন্য সার, বীজসহ সকল কৃষি উপকরণের মূল্যহ্রাস, কৃষকদের সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ সুবিধা প্রধান, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুযোগসহ তাদের নগদ সহায়তা প্রদান করছি। কৃষি শিক্ষা-গবেষণা খাতে আরো বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যার ধারাবাহিকতায় খোরপোশের কৃষি আজ উৎপাদনমুখী ও বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন সরকারের পাশাপাশি সকলের অংশগ্রহণে নিরাপদ খাদ্যের মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের সুখী,সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।
তিনি ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২২’ উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
সূত্র : বাসস