Home অন্যান্য ‘ফুলকলির সমাধি সৌধ’-এ ভিড় পর্যটকদের

‘ফুলকলির সমাধি সৌধ’-এ ভিড় পর্যটকদের

আবদুল জলিল, খাগড়াছড়ি থেকে: খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের কাছে অন্যতম দর্শনীয় স্থানের নাম জেলা প্রশাসকের হাতি তথা ‘ফুলকলি’র সমাধি।
খাগড়াছড়ি শহরের প্রবেশমুখে স্থাপিত নান্দনিক স্থাপত্যশৈলী ও ফুলকলির ইতিহাস জানতে প্রতিদিন শতশত পর্যটক ফুলকলির সমাধিতে ভিড় জমাচ্ছেন। স্থানীয়দের পাশাপাশি বাইরের পর্যটকদের কাছেও দিন দিন এর আকর্ষণ বাড়ছে৷
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ‘১৯৬২ সালে তৎকালীন সাব-ডিভিশনাল অফিসার বা মহকুমা প্রশাসক হাবিবুল ইসলামের সময়ে ফুলকলিকে রামগড় থেকে খাগড়াছড়ি নিয়ে আসেন। ১৯৬২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ত্রিশ বছর ধরে এ জেলার রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন কাজে অপরিসীম অবদান রেখেছে এ হাতিটি। বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতা দিবসে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় কুচকাওয়াজের সময় জেলা প্রশাসককে সালাম দিত এই ফুলকলি। এ ছাড়াও সত্তর থেকে আশির দশকের মধ্যে খাগড়াছড়িতে পাহাড়ের যে কোনো স্থানে গাড়ি খাদে পড়ে গেলে কিংবা দুর্ঘটনায় কবলিত হলে এ ফুলকলিকে দিয়ে তা উদ্ধার করা হতো। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়ার পর ১৯৯০ সালের ২৭ জুলাই ঝুমঝুম বৃষ্টির দিনে জেলার সর্বোচ্চ পাহাড় আলুটিলায় গেলে পাহাড়ের খাদে পড়ে যায় হাতিটি। সেই দিন ওই খাদেই আনুমানিক বিকেল পাঁচটার সময় ফুলকলি মারা যায়’।
দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষণের অভাবে ‘ফুলকলি’র সমাধিস্থল ছিলো জরাজীর্ণ এবং পরিত্যক্ত। খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়কের গোলাবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ফুলকলির সমাধিস্থলটি পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে উপেক্ষিত ছিল। তবে খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস স্ব-উদ্যোগে ফুলকলির সমাধিস্থলটি সংরক্ষণ করেন৷
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ফুলকলির সমাধি দেখতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। ফুলকলির ইতিহাস জানতে পর্যটকদের কৌতূহলেরও যেনো শেষ নেই। অবশ্য সমাধির পাশে দেয়ালে বিস্তারিত পড়ে অনেকেই জেনে নিচ্ছে কে ছিল এই ফুলকলি।
ফুলকলির কবর দেখতে আসা দর্শনার্থী এম ইদ্রিছ আলী বলেন, প্রাণীর প্রতি যে মানুষের ভালবাসা আছে এ সমাধি দর্শনে তার প্রমাণ মিলে৷ যিনি এ সমাধি সংরক্ষণ করেছেন আমি তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করতে চাই৷
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, খাগড়াছড়ির ইতিহাসের সঙ্গে হাতির অভিন্ন সম্পর্ক রয়েছে। বিশেষ করে এক সময় পিছিয়ে পড়া জনপদ পার্বত্য চট্টগ্রামের ভৌগোলিক গঠনের কারণে জেলা প্রশাসকরা পোষ্য হাতি ব্যবহার করতেন। ৯০ দশকের খাগড়াছড়ির তৎকালীন জেলা প্রশাসক খোরশেদ আনসার খান ‘ফুলকলি’র পিঠে চড়ে প্রত্যন্ত এলাকায় যেতেন।  ফুলকলির (হাতি) মৃত্যুর পর তিনি পরম মমতায় এটিকে সমাধিস্থ করেন। সেই সমাধি সংরক্ষণের অভাবে এতদিন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিল। সেই ফুলকলির স্মৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে হাতি ব্যবহারের ঐতিহ্য পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে তুলে ধরতে ‘ফুলকলির সমাধি সৌধ’ গড়ে তোলা হয়েছে।