বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
বগুড়া: দেবরের জীবন বাঁচাতে নিজের ফুসফুস কেটে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নাজনীন হীরা। দুই সন্তানের জননী তিথির এ সিদ্ধান্ত মানবতার এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। পারিবারিক বন্ধনের এ বিরল ঘটনাটি বগুড়ার গাবতলী পৌরসভার জয়ভোগা দিঘাপাড়া গ্রামের।
জানা যায়, ওই এলাকার কৃষক নূরুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমান (২৮) দুই মাস আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। তাকে প্রথমে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে এবং পরে ঢাকায় শেখ রাসেল গ্যাষ্ট্রোলিভার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। স্বাস্থ্যের অবনতি হলে গত ২৩ সেপ্টেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ে একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মিজানুরের ফুসফুসের ৮০ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে। দ্রুত ফুসফুস প্রতিস্থাপন করতে হবে। অন্যথায় তাকে বাঁচানো যাবে না। তার চিকিৎসায় শুধু অপারেশনেই ব্যয় হবে প্রায় ৫০ লাখ টাকা। আর ফুসফুস কিনতে আরও লাগবে ১০ লাখ টাকা।
মিজানুরের বড় ভাই মুক্তার হোসেন জানিয়েছেন, মাত্র দেড় বছর আগে মিজানুর বিয়ে করে। এরপর থেকে মোবাইল ফোন ও এর বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবসা করে সংসার পরিচালনা করছিল। গত জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে হঠাৎ সে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়। নিজের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় মিজানুরের চিকিৎসা বাবদ এ পর্যন্ত ৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। তার ওপর ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য বিশাল অংকের অর্থের যোগান দেয়া পরিবারের পক্ষে সম্ভব হবে না। ফুসফুস কেনার টাকা না থাকায় দেবরকে বাঁচাতে তার (মুক্তার হোসেনের) স্ত্রী নাজনীন হীরা তিথি নিজের ফুসফুস কেটে দিতে সম্মত হয়েছেন। এভাবে বিনামূল্যে ফুসফুস মিললেও অপারেশনের টাকা সংগ্রহের কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছে না পরিবারটি। অবশেষে অর্থের অভাবে থমকে গেছে ফুসফুস প্রতিস্থাপনের কাজ। ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকেই এগোচ্ছে মিজানুরের জীবন প্রদীপ।
এমতাবস্থায় একটি জীবন বাঁচাতে সমাজের দানশীল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আকুল আবেদন জানিয়েছেন মিজানুরের পরিবারবর্গ।
গাবতলী পৌরসভার মেয়র সাইফুল ইসলাম জানিয়েছেন, ব্যবসা করে সংসার চালাতেন মিজানুর। কিন্তু চিকিৎসা করতে গিয়ে পরিবারটি এখন নিঃস্ব। তিনি তার সীমিত সামর্থ নিয়ে অসহায় পরিবারের পাশে দাঁড়াবেন। সেই সাথে দানশীল ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানকেও অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ জানান মিজানুরের পরিবার।