ডা. মো. আসাফুজ্জোহা রাজ
রাজ ডেন্টাল সেন্টার
ঢাকা
বজ্রপাত এ সময়ের আতঙ্ক বলা যেতে পারে। অসতর্কতা বা স্বচ্ছ জ্ঞানের অভাবে প্রতি বছর বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। বজ্রপাতের আগে ও পরে কি করা উচিত জেনে নিন-
আবহাওয়ার পূর্বাভাস এখন অনেকটাই নির্ভরযোগ্য। এ সময়ে বজ্রপাতের সম্ভাবনার বিষয়টি জেনে নিয়ে ঘরের বাইরে যাওয়া উচিত। মেঘ বা ঝড়ো হাওয়া দেখলে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে হবে। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত আমাদের দেশে বজ্রপাতে মৃত্যু ঘটে বেশি। বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ সবাইকে সচেতন হতে হবে, অন্যদের সচেতন করতে হবে।
বজ্রপাতের সময় খালি পায়ে বা মাটির সরাসরি স্পর্শে অথবা ভেজা শরীরে সর্বাধিক ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। বজ্রপাতের আশঙ্কায় ঘরের বাইরে থাকলে দালানের নিচে, শুকনো জায়গায় ও প্লাস্টিকের জুতা পরে থাকা জরুরি। কোনো ছাউনির নিচে দাঁড়ালে দেয়ালের কাছে না থাকা নিরাপদ। ছাউনি না পেলে বড় গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি বা জলাশয়ের কাছে আশ্রয় নেওয়া বিপজ্জনক। বরং খোলা জায়গায় হাটু গেড়ে প্লাস্টিকের কোনো কিছুর ওপর বসে কানে হাত ও চোখ বন্ধ করে আশ্রয় নেওয়া এবং একসঙ্গে অনেকজন থাকলে কমপক্ষে ৩০ ফুট দূরত্বে বসা উচিত। গাড়ির মধ্যে থাকলে গাড়িটি কংক্রিটের আশ্রয়ে নেওয়া ভালো। ধাতব কিছু স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। যেমন ছাতা, সিঁড়ির হাতল, পাইপ ধরে রাখা যাবে না। অনেককে দেখা যায় এ সময় বাসার ছাদে, উঠানে, রাস্তায় নেমে আনন্দ করে, বৃষ্টিতে ভিজে, রিকশায় ভ্রমণ করে এসব থেকে বিপদ হতে পারে বেশি।
বিদ্যুৎচালিত যন্ত্রের ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে। ল্যান্ডফোন স্পর্শ না করা ও টিভি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, ওয়াইফাই রাউটারের প্লাগ খুলে রাখা ভালো। অভিজ্ঞ ইলেকট্রিক প্রকৌশলী দিয়ে বাড়িকে বজ্রপাত প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। গ্রামে বাড়ির চারদিকে উঁচু গাছ যেমন নারকেল, তাল, সুপারিগাছ লাগালে সেখানেই আগে বজ্রপাত হবে, বাড়ি নিরাপদ থাকে, দুই বা একাধিক মেঘের ঘর্ষণে উচ্চভোল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ (বজ্রপাত) যখন মাটিতে নেমে আসে, তখন সবচেয়ে উঁচু বস্তুকে আগে আঘাত করে।
কেউ বজ্রপাতের কবলে পড়লে সাহায্যের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। যদি তিনি বিদ্যুৎপৃষ্ট হন, তবে নিজের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। যাতে নতুন করে উদ্ধারকারী আক্রান্তদের কাছ থেকে বিদ্যুৎপৃষ্ট না হন। প্রথমে বুঝতে হবে রোগীর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কি না। জানা থাকলে ডান দিকের গলায় পালস অনুভব করার চেষ্টা করা যেতে পারে। অর্ধেকের বেশিসংখ্যক মানুষ বা সরাসরি বাজের স্পর্শে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করলেও শ্বাস-প্রশ্বাস না থাকলে সিপিপি বা বুকে চাপ ও মুখে মুখ দিয়ে বাতাস দেওয়ার মাধ্যমে হার্ট ও ফুসফুসকে চালু করার চেষ্টার সঙ্গে যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিতে হবে। নিয়ম না জানলে অবশ্য সিপিআর দেওয়া যায় না।
বজ্রপাতের কারণে প্রচণ্ড ঝাঁকুনিসহ ছিটকে পড়ার জন্য আঘাত থেকে শরীরের যেকোনো হাড় ভাঙা বা মস্তিস্কে বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে। বাইরে থেকে এগুলো বোঝা দুষ্কর। তাই আক্রান্তকে যথাসম্ভব নাড়াচাড়া না করিয়ে চিৎ করে লম্বাভাবে শুয়ে রেখে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। জ্ঞান থাকলে স্যালাইন খাওয়ানো যেতে পারে, আক্রান্তের জ্ঞান থাকা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারলে ফলাফল ভালো আসতে পারে। স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতির কারণে পক্ষাঘাতগ্রস্ত ও এলোমেলো আচরণের আশঙ্কা থাকে। রোগীকে আইসিইউতে পর্যবেক্ষণ করতে হতে পারে। আমাদের দেশে সব স্থানে এমন সুবিধা নেই। ক্ষেত্রবিশেষে প্রাথমিক জীবনরক্ষায় চিকিৎসার পরিবর্তে কিছু জটিলতার কারণে দীর্ঘ সময় চিকিৎসকের পরামর্শে থাকতে হতে পারে। তাই চিকিৎসার ওপর জোর না দিয়ে বজ্রপাত থেকে নিজেকে, পরিবারকে সুরক্ষা দিতে সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে সঠিক তথ্য জেনে সতর্ক থাকার বিষয়ে সচেষ্ট হতে হবে।