উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির সেই বিতর্কিত বায়োসেফটি ল্যাবরেটরি থেকে নয়, বরং করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বন্যজন্তুদের খামারগুলি থেকে। এমনটাই দাবি করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ কমিটির অন্যতম শীর্ষ কর্তা পিটার ড্যাসজ়াক।
করোনার উৎস খুঁজতে গত কয়েকমাস ধরে চিনের নানা জায়গায় ঢুঁ মারছেন হু-র বিশেষজ্ঞরা। এই টিমের নেতৃত্বেই আছেন পিটার। এতদিনের পর্যবেক্ষণের পরে তাঁর বক্তব্য, ল্যাবে তৈরি করা হয়নি ভাইরাস, দক্ষিণ চিনের ওয়াইল্ডলাইফ ফার্মগুলিই হল ভাইরাসের আঁতুরঘর।
হু-র বিশেষজ্ঞ পিটার ড্যাসজ়াককে নিয়ে আগেও অনেক বিতর্ক হয়েছে। পিটারের পর্যবেক্ষণ হল, দক্ষিণ চিনের গ্রামগুলিতে বন্য পশুপালনের জন্য খামার আছে। প্যাঙ্গোলিন, রেকুন, ইঁদুর, ব্যাম্বু র্যাট, সিভেট ক্যাট নামক আফ্রিকার এক শিকারি বিড়াল ইত্যাদি প্রতিপালন করা হয় সেখানে। মূলত এখান থেকেই এইসব প্রাণী উহানের খোলা বাজারে চালান করা হয়। এইসব প্রাণী সার্স-কভ-২ ভাইরাসের বাহক হতে পারে বলেই দাবি হু-র বিশেষজ্ঞজের। প্যাঙ্গোলিন ও সিভেট ক্যাটের শরীরে নাকি ভাইরাসের জীবাণুও মিলেছে বলে দাবি করেছেন পিটার।
করোনাভাইরাস বাদুড় থেকে ছড়িয়েছে কিনা তার পোক্ত প্রমাণ এখনও মেলেনি। তবে তাইওয়ানের কিছু গবেষক দক্ষিণ চিনের কয়েকটি পরিত্যক্ত গুহায় এমন কিছু প্রজাতির বাদুড় পেয়েছিলেন যাদের শরীরে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের মতোই ভাইরাল স্ট্রেন পাওয়া গিয়েছিল। গবেষকরা বলেছিলেন, করোনার সঙ্গে সেই ভাইরাল স্ট্রেনের মিল ৯৬ শতাংশ। হু-র বিশেষজ্ঞ পিটারের দাবি, এই ভাইরাল স্ট্রেন প্যাঙ্গোলিন বা ইঁদুর জাতীয় প্রাণীদের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সেখান থেকে মানুষের শরীরে সংক্রমিত হয়। পিটার জানিয়েছেন, তাঁর পর্যবেক্ষণের পরেই চিনের অধিকাংশ বন্যপশুর খামার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার প্রাণীদের মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে সরকার।
তবে পিটারের পর্যবেক্ষণ কতটা সত্যি সে নিয়ে বিতর্ক চলছে নানা মহলে। মার্কিন গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, পিটারের সঙ্গে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির আর্থিক লেনদেন আছে। করোনাভাইরাস ছড়ানোর পেছনে উহানের বায়োসেফটি ল্যাবরেটরির যে কোনও ভূমিকা নেই, সে কথা বারে বারেই জোর দিয়ে বলেছেন পিটার। এবারেও তাঁর পর্যবেক্ষণে কতটা সত্যি আছে সে নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে নানা মহলে।
বস্তুত, মার্কিন গোয়েন্দারাই বলেছিলেন, চিনের বিভিন্ন মাছমাংসের বাজার থেকেই ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। উহান-সহ চিনের কয়েকটি প্রদেশে খোলা বাজারেই অবাধে চলে বন্য জীবজন্তুর মাংস কেনাবেচা। বাদুড়, কুকুর, খরগোশ, বিড়াল, প্যাঙ্গোলিন, সাপ, ইঁদুর ছাড়াও অনেক বিলুপ্তপ্রায় বন্যপ্রাণীর মাংস বিক্রি হয় এমন বাজারে। খোলা বাজারেরই যত্রতত্র পড়ে থাকতে দেখা যায় বন্যপ্রাণীর কাটাছেঁড়া দেহ। করোনাভাইরাস মহামারী হওয়ার পর থেকেই চিন সরকার সব রকমের বন্যজন্তু বিক্রি ও খাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার জন্য তৎপর হয় বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার। লকডাউন পর্বে উহানের সব খোলা বাজার বন্ধ করে দেওয়ার দাবি করা হয়। কিন্তু ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ার দাবি করে চিন লকডাউন তুলে নেওয়ার পর থেকে ফের এমন ওয়েট মার্কেটে বন্যপ্রাণীর মাংস বিক্রি শুরু হয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে।
এমনকি উহানের বায়োসেফটি ল্যাবে সেই ২০১৫ সাল থেকেই করোনাভাইরাসের মতো সংক্রামক ভাইরাল স্ট্রেন নিয়ে গবেষণা চলছিল এমন তথ্যও সামনে আসে। চিনেরই দু’জন ভাইরোলজিস্ট ও কয়েকজন সাংবাদিক সে খবর সামনে আনেন। RaTG13 ব্যাট ভাইরাস নিয়েও উহানের ল্যাবে গবেষণা চলছে বলে খবর শোনা যায়। এই ভাইরাসের সঙ্গে সার্স-কভ-২ ভাইরাসের অনেক মিল। যদিও উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি এই খবরকে মিথ্যা ও গুজব বলে দাবি করেছে।
-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক