ড. আহমেদ আবদুল্লাহ
প্রাচীনকাল থেকে বাংলা ভূখণ্ডের সাথে আরবীয় বণিকদের একটা যােগসূত্র ছিল, যা ঐতিহাসিকরা অকপটে স্বীকার করেন। মিসরকে বলা হতাে প্রাচীন সভ্যতার সূতিকাগার। অবস্থানগত দিক দিয়ে মিসর আফ্রিকা মহাদেশে হলেও এশিয়ার সন্নিকটবর্তী।
মিসরের ডান দিকে এশিয়ার মাথার উপরের দিকে স্পেন-ভূমধ্যসাগর পার হলেই ইউরােপের ভূখণ্ড। এমতাবস্থায় পাের্ট সৈয়দ বন্দর দিয়ে ভূমধ্যসাগর পেরিয়ে ইউরােপে গমন যেমন দুষ্কর নয়, তেমনি লােহিত সাগর পাড়ি দিয়ে এডেন উপসাগর হয়ে বােম্বে, কলকাতা ও মাদ্রাজ হয়ে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আগমন খুব বেশি কষ্টসাধ্য ছিল এমনটা মনে করাও ঠিক হবে না।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে মক্কায় কোরেশদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে কয়েকজন সাহাবি আবিসিনিয়ায় হিজরত করেছিলেন। সুতরাং যারা লােহিত সাগরের কূল ধরে আরব সাগর পাড়ি দিয়ে আবিসিনিয়া পর্যন্ত যেতে পারেন তাদের জন্য আরব সাগরের ভিন্ন তীরবর্তী করাচি ও বােম্বে হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত যােগসূত্র তৈরি করা কঠিন কিছু নয়। এটা কেবল বাস্তবতা নয় বরং ঐতিহাসিক সত্যি।
এ পর্যন্ত জ্ঞাত ইতিহাসের সূত্র থেকে জানা যায় যে, বাংলাদেশের উপকূলে আরাই প্রথম বহিরাগত অর্থাৎ বাংলার ভূখণ্ড তথা বাংলার মানুষের সাথে সর্বপ্রথম যাদের সম্পর্ক তৈরি হয় তারা হচ্ছে সেমেটিক আরব। মানব জাতির আদি বসতি নিয়ে গবেষক, প্রত্নতাত্ত্বিকরা এ পর্যন্ত বিস্তর গবেষণা করেছেন এবং আজো সেই গবেষণা অব্যাহত রয়েছে।
অনেক ঐতিহাসিক এরূপ ধারণা পােষণ করেন যে, হজরত আদম (আ:) প্রথম মানব, যিনি বর্তমান শ্রীলঙ্কা বা সরণ দ্বীপে নিক্ষিপ্ত হন। আজকের ভূবিজ্ঞানীরা এ কথা স্বীকার করেন যে, পৃথিবী এক সময় ছিল একটি অখণ্ড ভূমিরূপ, ফলে পারস্পরিক দূরত্বও ছিল সীমিত।
ওই সময়কালেও বাংলাদেশের এই ভূখণ্ডের অস্তিত্ব থাকা বিচিত্র নয়। আজো আমরা লক্ষ্য করি, বিভিন্ন জনপথ নদীতে, সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়া, নতুন ভূমিরূপে জেগে ওঠা, ভূমিকম্পের মতাে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তন বিস্তৃত ভূখণ্ডকে নব নব আঙ্গিকে সজ্জিত করছে।
-লেখক: জাতি-তাত্ত্বিক জাদুঘরের সহকারী পরিচালক