বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম বাড়ছে হু হু করে। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রচুর ডলার ছাড়তে শুরু করেছে বাজারে।
ডলারের দাম বৃদ্ধিতে রপ্তানিকারকরা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও আমদানিকারকরা চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রচুর ডলার জোগান দিয়েছে ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। অথচ গত অর্থবছরের কোনো ডলার বিক্রি করতে হয়নি, উল্টো ব্যাংকগুলোর অতিরিক্ত ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার পর আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য উন্মুক্ত হয়েছে। একইসঙ্গে চিকিৎসা, ভ্রমণ ও পড়াশোনার জন্য বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ায় অনেকেই এখন বিদেশে যাচ্ছেন। এ কারণে নগদ ডলারের চাহিদা অনেক বেড়েছে। চাহিদা বাড়ার কারণে দামও বেড়েছে। একইসঙ্গে টাকার তুলনায় অন্যান্য দেশের মুদ্রার মানও বাড়ছে। ডলারের দাম আরও বাড়তে পারে- এমন আশায় অনেকে ডলার আটকে রেখেছেন বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন। এতে সমস্যা আরও বাড়ছে।
কার্ব মার্কেট থেকে বর্তমানে এক ডলার ৯৩ টাকার বেশি। বিদেশগামীদের এই দরে ডলার কিনতে হচ্ছে। অবশ্য আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম কিছুটা কম। তবে ব্যাংকে চাহিদামত ডলার পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে গত ১০ নভেম্বর যেখানে প্রতি ডলারে বিক্রি মূল্য ছিল ৮৫ টাকা ৭৫ পয়সা। সেখানে ১৪ নভেম্বর ৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। গত আগস্ট মাসের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ছিল ৮৪ টাকা ৮০ পয়সা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় দেশে মূলধ্বনি যন্ত্রপাতি ও পণ্য আমদানি বেড়েছে। এসব পণ্যের দায় পরিশোধ করতে সঙ্গত কারণেই ডলারের চাহিদা বাড়ছে। আর বাড়তি চাহিদার কারণে দামও কিছুটা বেড়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনের আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার বিক্রি করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা মজুত রয়েছে।
চিটগাং চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম বিজনেসটু২৪ কে বলেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অথনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সামঞ্জস্য রেখে শিল্পের কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ সব ধরণের পণ্যের আমদানি বাড়ছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও করোনার মধ্যেই সরকার শিল্প কারখানা পুরোদমে খুলে দেয়ার নির্দেশনা প্রদান করায় বর্তমানে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে টাকার বিপরীতে ডলারের হঠাৎ মূল্য বৃদ্ধিতে আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং শিল্পের কাঁচামালের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাগণ আর্থিকভাবে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রপ্তানি, রেমিট্যান্স আয়ের সঙ্গে আমদানি ব্যয়ের একটা অসামঞ্জস্য হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে। এর ফলে ডলারের দাম বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য কাজ করছে। যা বেশ কাজেও আসছে বলে তিনি মনে করেন।