Home আন্তর্জাতিক বালি খুঁড়তেই সোনার গয়না

বালি খুঁড়তেই সোনার গয়না

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

কথায় বলে ‘আল্লায় যারে দেয়, তারে ছপ্পর ফাইরা দেয়।’ তবে  ভেনেজুয়েলার ছোট্ট মৎস্যজীবী গ্রাম গুয়েকার বাসিন্দাদের জীবনে এটা এখন আর শুধু কথার কথা নয়। একেবারে ধ্রুবসত্য। সমুদ্রতটে বালি খুঁড়তেই বেরিয়ে আসছে রহস্যময় সোনা-রুপোর গয়না। আর তা পেতে চলছে চরম হুড়োহুড়ি। মাত্র তিনমাসের মধ্যে ভাগ্যের চাকা ঘুরে গিয়েছে গোটা গ্রামের। হতদরিদ্র থেকে অনেকেই বনে গিয়েছেন লাখপতি!
শুরুটা হয়েছিল সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে। ২৫ বছরের তরুণ মৎস্যজীবী ইয়োলমান ল্যারেস। সম্বল বলতে একটা ছোট নৌকা আর জাল। মাছ ধরেই চলে পেট। মাথার উপর ছাদ বলতে ভেনেজুয়েলার ক্যারিবিয়ান উপকূলে টিনের চালের এক চিলতে ঘর। তার মধ্যেই গাদাগাদি করে বাস গোটা পরিবারের। প্রতিদিনের মতো সেদিনও সমুদ্রতটে প্রাতঃকৃত্য সারতে গিয়েছিলেন ল্যারেস। হঠাৎই তাঁর নজরে পড়ে, কিছু একটা চকচক করছে। এগিয়ে গিয়ে হাতে নিতেই চমকে যান। বালির উপর চকচক করা বস্তুটি মেরির ছবি খোদাই করা সোনার পদক। নিজের চোখকেও যেন তাঁর তখন বিশ্বাস হচ্ছিল না। উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপতে থাকেন ল্যারেস। আনন্দে চোখ ভরে যায় জলে।
ল্যারেস জানিয়েছেন, ‘সোনার পদকটি পেয়ে দৌড়ে বাড়ি চলে যাই। কারণ, এর আগে আমার জীবনে এমন আশ্চর্য কিছু কোনওদিন ঘটেনি’। ল্যারেসের উচ্ছ্বাস দেখে পরিবারের লোকজনের বুঝতে অসুবিধা হয়নি যে, কিছু একটা ঘটেছে। কিন্তু তা যে সোনার মেডেল কুড়িয়ে পাওয়ার মতো ঘটনা, তা ছিল তাঁদের কল্পনারও অতীত।  তাই কথাটা শোনার পর ঘোর কাটাতে কিছুটা সময় লাগে নুন আনতে পান্তা ফুরনো পরিবারের কর্তা ল্যারেসের শ্বশুরমশাইয়েরও। তিনি নিজেও গরীব মৎস্যজীবী। যেদিন জালে মাছ ওঠে, সেদিন উনুনে হাঁড়ি চাপে। আর অন্যথা হলে থাকতে হয় আধপেটা।
সমুদ্রতটে ল্যারেসের সোনার পদক কুড়িয়ে পাওয়ার খবর অবশ্য চাপা থাকেনি। মুহূর্তেই তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা ভিড় জমান তাঁর বাড়িতে। তারপর সবকিছু শুনে সবাই ছোটেন সমুদ্রসৈকতে। বালি উড়িয়ে শুরু হয় সোনার খোঁজ।
এ যেন ‘যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন…’। সেই অমূল্যের খোঁজেই দিনরাত এক করে ফেলেন গুয়াকার মৎস্যজীবীরা। চলতে থাকে জায়গা দখলের প্রতিযোগিতা। কেউ গণ্ডি কাটেন। আবার কেউ বা বালির উপর শুয়ে জায়গা আগলান। তাঁদের চেষ্টা একেবারেই ব্যর্থ হয়নি। শুধু ল্যারেস নন, কয়েক ডজন গ্রামবাসী ওই সমুদ্রসৈকত থেকে সোনা-রুপোর অলঙ্কার পেয়েছেন। কারও ভাগ্যে জুটেছে আংটি। কেউ পেয়েছেন আস্ত সোনার বাট। আর সেসবই তাঁদের ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে রাতারাতি। কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, অনেকে নাকি সমুদ্রতটে কুড়িয়ে পাওয়া সোনার অলঙ্কার দেড় হাজার ডলারেও বিক্রি করেছেন!
তবে, এত সোনা-রুপোর উৎসস্থল কোথায়? জানা নেই কারও। চলছে নানা জল্পনা। কেউ কেউ মনে করছেন, মূল্যবান এই গুপ্তধন হয়তো ক্যারিবিয়ান জলদস্যুদের। লুঠের পর জাহাজে করে হয়তো নিয়ে যাচ্ছিল তারা। সমুদ্রে ডুবে যায় সেই জাহাজ। অনেকে আবার ক্রিসমাসের আগে এই বিপুল সোনা-রুপো প্রাপ্তি সান্তার ‘উপহার’ হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের বক্তব্য, ঈশ্বরই এই সম্পদ পাঠিয়েছেন তাঁদের জন্য।