Home First Lead বিনিয়োগ বাড়ছে উচ্চ মুনাফার সঞ্চয়পত্রে

বিনিয়োগ বাড়ছে উচ্চ মুনাফার সঞ্চয়পত্রে

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ঢাকা: ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকে পড়েছেন উচ্চ মুনাফার সঞ্চয়পত্রের দিকে। ব্যাংক আমানতে সুদের হার একেবারে কম। তাই সঞ্চয়পত্র এখন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ এসেছে সঞ্চয়পত্রসহ সবধরনের জাতীয় সঞ্চয় স্কিমগুলোতে। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে পরিবার সঞ্চয়পত্রে ৩৭ হাজার ৯৯১ কোটি টাকা, ৩-মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে ২৭ হাজার ৬২৭ কোটি টাকা, পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৬ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকা, ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৭ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, ডাকঘর মেয়াদি হিসাবে ১৫ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা এবং সাধারণ হিসাবে ১ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা এবং ওয়েজ আর্নার ডেভেলপ বন্ডে ১ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকাসহ মোট ৯৯ হাজার ৫৫৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকার নতুন বিনিয়োগ আসে। এই সময়ে পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের জন্য সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬২ হাজার ১৭১ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ফলে এই ১১ মাসে সরকারের নিট ঋণ হয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

গত বছরের মূল বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের শেষ দিকে এ খাতের ঋণ বেড়ে যাওয়ায় সংশোধিত বাজেটে এই লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৩০ হাজার ৩০২ কোটি টাকা করা হয়। সেই হিসেবে সঞ্চয়পত্র থেকে অর্থবছরের ১১ মাসেই সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার ২৩.৩৭ শতাংশ বেশি ঋণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ব্যাংকে আমানত বেড়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা। সেই বিবেচনায় গোটা ব্যাংক খাতের ৬০টি ব্যাংক মিলে যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করছে, জাতীয় সঞ্চয়পত্রের হাতেগোনা কয়েকটি স্কিম থেকেই এর কাছাকাছি বিনিয়োগ আসছে।

সর্বশেষ গত মে মাসে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগ আসে ৭ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। ওই মাসে পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয় ৫ হাজার ২৩ কোটি টাকা। ফলে মে মাসে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা। গত বছরের (২০২০) মে মাসে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ এসেছিল ৪৩০ কোটি টাকা। অর্থাৎ চলতি বছরের মে মাসে গত বছরের মে মাসের তুলনায় ৫ গুণেরও বেশি ঋণ এসেছে সঞ্চয়পত্র থেকে।

একটি নির্দিষ্ট সময়ে সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগ থেকে সরকার যে অর্থ সংগ্রহ করে তা থেকে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর যে অবশিষ্ট অংশটি থাকে তা সরকারের নিট ঋণ। এই ঋণ বাজেট ঘাটতি মেটাতে ব্যয় করা হয়।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আমানতের সুদহার এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় কম। গত বছরের এপ্রিল থেকে ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার নির্দেশনা দেয় সরকার। এর আগে থেকেই ব্যাংকগুলো আমানতের সুদহার কমিয়ে আনতে শুরু করে। গত মে মাসে ব্যাংক খাতের আমানতের গড় সুদহার ছিল ৪.১৪ শতাংশ। অন্যদিকে বর্তমানে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার ১০ শতাংশের ওপরেই রয়েছে।  এসব কারণে অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সঞ্চয়পত্রে নতুন বিনিয়োগ আসে ৫৭ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এ সময়ে পুরনো সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধে সরকারের ব্যয় হয় ৪৬ হাজার ৭৯৪ কোটি টাকা। নিট ঋণ ছিল ১১ হাজার ১১ কোটি টাকা।

সেই হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে সঞ্চয়পত্রে মোট বিনিয়োগ বেড়েছে ৭২ শতাংশ এবং নিট ঋণ বেড়েছে ২৩৯ শতাংশ।

২০১৯-২০ অর্থবছরের পুরো সময়ে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের নিট ঋণ আসে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা।