‘আমরা আর এই সব কাজ করতে পারছি না। মেলামাইন, সিরামিক ও প্লাস্টিকের কারণে আমরা তাদের সাথে খরচ আর তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। যদি আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ আর সহজ ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমরা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারব।’
ইমাম হোসেন, মীরসরাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা : আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষের রুচি পরিবর্তনে মাটির তৈরি সামগ্রীর স্থান দখল করে নিয়েছে প্লাস্টিক, মেলামাইন, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি নানা রকম আধুনিক সামগ্রী। এ কারণে চাহিদা কম, কাঁচামালের দুষ্প্রাপ্যতা ও চড়ামূল্য, সর্বোপরি পুঁজির অভাবে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে মীরসরাই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প।
উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়নের ছত্তরুয়া গ্রামের মৃৎশিল্পীদের ঐতিহ্য আঁকড়ে আছেন পাল বংশের লোকেরা। এখানে ৪০-৫০ পরিবারের প্রায় দুই শতাধিক মানুষ এই পেশার সাথে জড়িত। শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা কম হলেও কর্মঠ মানুষের সংখ্যাই বেশি। ঐ পাড়ার সবাই সনাতন ধর্মাবলম্বী। বাড়ির ভেতর ঢুকে দেখা গেল প্রায় ঘরগুলো মাটি, ছন ও টিনশেড দিয়ে তৈরি। বাড়ির সামনে ছোট্ট উঠান। উঠানজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কাদামাটির তৈরি হাড়ি, পাতিল, কড়াই, কলস, হাতি, ঘোড়া, মাছ পুতুলসহ ছোট-বড় নানা রকমের পাত্র।
উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের নিপেন্দ্র চন্দ্র মাস্টার বাড়ির রাখাল চন্দ্র পাল জানান, ব্যবসা মন্দার কারণে মৃৎশিল্প প্রস্তুতকারী বাপ-দাদার এই পেশা ধরে রেখেছে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার। সামান্য আয়ে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে বলে অভিযোগ করেন এই কুমার। ব্যবসা না থাকায় অনেকে এখন অন্য কাজ করে সংসার চালাচ্ছে। মৃৎশিল্প ধরে রাখতে হলে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। তাদের বাড়িতে ঢুকলে চোখে পড়বে মাটির তৈরি বিভিন্ন রকমের জিনিস। কতগুলো কাঁচা, আবার কিছু শুকিয়ে রাখা হয়েছে, কিছু পুড়িয়ে রং করেও বিক্রির জন্য তৈরি করা হচ্ছে।
গৃহবধূ শিউলি রানী পাল বলেন, মাটির এসব কাজ আমাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আমাদের কয়েক পুরুষ ধরে এ কাজ করে আসছে। আমরাও করছি। মাঠ থেকে মাটি এনে পণ্য তৈরি করে বিক্রি করে আমরা জীবিকা চালাই।
প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা চাই
কয়েকজন মৃৎশিল্পী আক্ষেপ করে বলেন, আমরা আর এই সব কাজ করতে পারছি না। মেলামাইন, সিরামিক ও প্লাস্টিকের কারণে আমরা তাদের সাথে খরচ আর তাল মিলিয়ে চলতে পারছি না। যদি আমাদের আধুনিক প্রশিক্ষণ আর সহজ ঋণের ব্যবস্থা করে দেয়, তাহলে আমরা এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পারব।
মৃৎশিল্প টিকিয়ে রাখতে আধুনিকায়ন, প্রশিক্ষণ ও সহজ ঋণের ব্যবস্থা থাকতে হবে বলে দাবি জানিয়েছেন উপজেলার কুমার পাড়ার কুমাররা।
মৃৎশিল্প রক্ষায় সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন
মৃৎশিল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিনহাজুর রহমান বলেন, ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প আমাদের আদি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সবার এগিয়ে আসা উচিৎ। মৃৎশিল্প আধুনিকায়ন করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থার জন্য আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা সরেজমিনে তথ্য নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে শীঘ্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করব।