Home স্বাস্থ্য বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার টিকায় ছাড়পত্র দিল হু

বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার টিকায় ছাড়পত্র দিল হু

ম্যালেরিয়া টিকা

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত।

মারণ ম্যালেরিয়ার আতঙ্ককে এ বার বুঝি সত্যি সত্যি জয় করা গেল। আশার আলো দেখাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।

বিশ্বে প্রথম ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিনে অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। মানুষের শরীরে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরেই টিকায় সবুজ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। ম্যালেরিয়ার এই ভ্যাকসিনের নাম আরটিএস, এস/এএস০১ ।

ম্যালেরিয়ার কোপে প্রতি বছর বিশ্বে চার লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে আফ্রিকায় ম্যালেরিয়া একপ্রকার মহামারীর চেহারা নিয়েছে। শয়ে শয়ে শিশু মৃত্যু নাড়া দিয়েছে আন্তর্জাতিক চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীমহলকে। ম্যালেরিয়ার টিকা নিয়ে বহু বছর ধরেই গবেষণা চলছিল। এর আগে আফ্রিকার শিশুদের ওপর ‘মসকুইরিক্স’ (আরটিএস,এস ভ্যাকসিন)-এর পরীক্ষামূলক প্রয়োগে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। সেই ভ্যাকসিন তৈরি করেছিল গ্ল্যাক্সোস্মিথক্লাইন নামে একটি কোম্পানি। ইউরোপিয়ান ড্রাগ রেগুলেটরসের অনুমোদন পেয়েছিল সেই ভ্যাকসিন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, ২০১৯ সাল থেকে ঘানা, কেনিয়া-সহ আফ্রিকার কয়েকটি প্রদেশে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল চলছিল। শিশুদের শরীরেও এই টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হয়। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট সুরক্ষিত দেখেই ভ্যাকসিনে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

কী ভাবে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হই আমরা?

ম্যালেরিয়া একটি পরজীবী বাহিত রোগ। যা এক জন মানুষ থেকে অন্য জন মানুষে ছড়ায় স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশার মাধ্যমে। এদের তিনটে জীবন চক্রের একটা হয় মশার শরীরে। বাকি দু’টো আমাদের শরীরে। মানুষের দেহে একবার ঢুকে পড়লে এরা লিভার ও লোহিত কণিকায় এদের বাকি দু’টো জীবনচক্র সেরে ফেলে।

এ বার দেখতে হবে এই পরজীবীরা কী ভাবে শিকারপর্ব চালায় আমাদের শরীরে। স্ত্রী অ্যানোফিলিস মশা কামড়ালে তার লালার সঙ্গেই আমাদের শরীরে ঢোকে এই পরজীবীরা। ম্যালেরিয়ার বাহক পরজীবী চার রকম— প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স, প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম, প্লাসমোডিয়াম ওভিলি এবং প্লাসমোডিয়াম ম্যালেরি। তাদের মধ্যে প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরামের আক্রমণেই হয় ভয়ঙ্কর ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া।

African children to be vaccinated against malaria after WHO issues historic  approval | The Independent

শরীরে তো ঢুকে পড়ল পরজীবী, এ বার রক্তস্রোতে ভেসে সে সোজা গিয়ে পৌঁছয় লিভারে। সেখানে বংশবৃদ্ধি করে মেরোজয়েট দশায় এই পরজীবীরা পৌঁছয় লোহিত রক্তকণিকার (RCB) দরজায়। সেখানে তাদের আরও একটি জীবন চক্র শুরু হয়। দ্রুত বংশবৃদ্ধিও হয়। ফলে অতিরিক্ত চাপে লোহিত রক্তকণিকার দেওয়াল ফেটে যায়। পরজীবীরা তখন ফের উদ্বাস্তু হয়ে রক্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং দূষিত কণা মিশিয়ে দেয় রক্তে। ফলে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে, যাকেই আমরা ম্যালেরিয়ার লক্ষণ বলি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-এর রিপোর্ট বলছে প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে পাঁচ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় ম্যালেরিয়ার মারণ থাবায়। এর উপযোগী কোনও টিকা এতদিন সে ভাবে বাজারে আসেনি। কোনও ওষুধও বেশি দিন তার সাফল্য ধরে রাখতে পারেনি, কারণ, কিছু দিন সেই ওষুধ ব্যবহারের পর, পরজীবীরা তার কার্যকরী ক্ষমতাকে প্রতিরোধ করতে শিখে গেছে। ফলে ম্যালেরিয়ার প্রতিষেধকের খোঁজে তোলপাড় করে গবেষণা চলছিল এত বছর। এবার সাফল্য মিলেছে বলেই আশা করা যায়।