Home First Lead বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এড়াতে পেরেছে বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

করোনা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘মানুষের জীবন ও অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশে করোনাভাইরাসসহ অর্থনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হয়েছে।’

গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে জাতীয় পার্টির রওশন আরা মান্নান এবং সরকারি দলের কাজিম উদ্দীনের পৃথক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে এসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। তিন কোটি ডোজ করোনা ভ্যাকসিন সংগ্রহের কাজ চলমান রয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, শিগগিরই করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হবে।

জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের রওশন আরা মান্নানের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, ব্রিটেনের অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর ইকোনমিক্স অ্যান্ড বিজনেস রিচার্স-এর ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবল ২০২১ অনুযায়ী, বাংলাদেশ এখন যে ধরনের অর্থনৈতিক বিকাশের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে ২০৩৫ সাল নাগাদ বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ২৫তম বৃহৎ অর্থনীতি। এই রিপোর্টে মূলত সামনের বছর এবং আগামী ১৫ বছরে বিশ্বের কোন দেশের অর্থনীতি কী হারে বাড়বে তারই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৪১তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।

সরকারপ্রধান বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে অন্য অনেক দেশে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও বাংলাদেশ তা অনেকটাই এড়াতে পেরেছে। ২০২০ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, যা ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি।’ সংসদ নেতা জানান, ‘খাদ্যশস্য উৎপাদনে বিশ্বে বাংলাদেশ দশম। বাংলাদেশ আজ চালে উদ্বৃত্ত দেশ। চাল উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে তৃতীয়। বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়, আলু উৎপাদনে সপ্তম, আম উৎপাদনে সপ্তম, পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম, চাষের মাছ উৎপাদনে পঞ্চম, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ।’

আট লাখ ৮৫ হাজার ভূমিহীনকে ঘর দেওয়া হবে

সংরক্ষিত নারী আসনের সুলতানা নাদিরার প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা গ্রহণের পর ঘূর্ণিঝড় আক্রান্ত ও নদীভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মোট তিন লাখ ৮৫ হাজার ৪৭৩টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না এ লক্ষ্য সামনে রেখে মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুই শতাংশ খাসজমি বন্দোবস্ত দিয়ে একক গৃহনির্মাণের মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের জন্য গৃহনির্মাণ করে দেওয়ার কার্যক্রম চলছে। পর্যায়ক্রমে আট লাখ ৮৫ হাজার ৫২২টি পরিবারকে গৃহনির্মাণ ও ব্যারাকের মাধ্যমে পুনর্বাসন করা হবে।

আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স

সরকারি দলের সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স স্থাপনের জন্য সাভারের বারইগ্রাম ও দক্ষিণ রামচন্দ্রপুর মৌজার ১২ দশমিক শূন্য এক একর জমি দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এখানে প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের জন্য স্টেডিয়ামসহ আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ আন্তর্জাতিক মানের প্রতিবন্ধী ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য ৪৯৯ কোটি ৯৬ লাখ ৩২ হাজার টাকা ব্যয় নির্ধারণ করে ডিপিপি অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

আটকেপড়া ও চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের জন্য উদ্যোগ

জাতীয় পার্টির শামীম হায়দার পাটোয়ারীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, করোনাকালে বাংলাদেশে এসে আটকেপড়া ও চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে শ্রমিক পাঠানোর লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। প্রবাসী অধ্যুষিত দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের অনুরোধ জানিয়ে কভিডকালে চাকরিচ্যুত প্রবাসীদের সার্বিক কল্যাণে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ফোনে যোগাযোগসহ চিঠি পাঠানো হয়। এতে তিনটি বিষয় গুরুত্ব দেওয়া হয়। চাকরিচ্যুত প্রবাসী কর্মীদের ন্যূনতম খাদ্য ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চাকরিচ্যুতদের যাবতীয় দেনা-পাওনা পরিশোধসহ ছয় মাসের বেতনভাতা দিয়ে দেশে ফেরত পাঠানো এবং বিদেশে কর্মসংস্থান ও ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য ওই দেশগুলোতে কভিড-১৯ রিকভারি অ্যান্ড রেসপন্ড ফান্ড গঠনের সুপারিশ করা হয়।

আহসানুল হকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, কভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নজিরবিহীন বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যা থেকে বাংলাদেশও মুক্ত নয়। তবে শুরু থেকেই আমাদের সরকার সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছে। যার ফলে এ পর্যন্ত কভিড আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা, মৃত্যুর হার এবং অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ তুলনামূলক অধিকতর সাফল্য দেখাতে পেরেছে।

সমৃদ্ধ ‘ব-দ্বীপ’ গড়তেই শতবর্ষ মেয়াদি ডেল্টা প্ল্যান

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মশিউর রহমান রাঙ্গার  প্রশ্নে জবাবে  প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলাসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে সরকার ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে। তিনি বলেন, বিশেষত এটি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবকে অতিক্রম করে দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জল ও খাদ্য সুরক্ষার পাশাপাশি পরিবেশের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ উচ্চতর পর্যায়ের ৩টি জাতীয় অভীষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রণীত। ‘যেগুলো হচ্ছে- ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং এই একই সময়ের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন এবং ২০৪১ সাল নাগাদ একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদা অজন করা।’ শেখ হাসিনা এ সম্পর্কে আরও বলেন, আন্তঃদেশীয় পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা, নৌপরিবহন স্যানিটেশন ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট সব খাত বিবেচনায় রেখে দেশের টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ অপরিহার্য ছিল। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা সমগ্র একুশ শতকব্যাপী ১৭টি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, এই মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রথম পর্যায়ে ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০টি প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩৭ বিলিয়ন ইউএস ডলার, যা জিডিপির আড়াই শতাংশ। ৮০টি প্রকল্পের মধ্যে বর্তমানে ২৭টি প্রকল্প সরকার এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, ডেল্টা ফান্ডের কাঠামো ও ফান্ড পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রণয়নের কাজ বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন। এ প্রসঙ্গে ১০ বছর মেয়াদি প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০১০ থেকে ২০২১) এবং দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-৪১) প্রণয়নেও সরকারের পদক্ষেপ উল্লেখ করেন তিনি।