বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
যশোর: এখানে অস্থির হয়ে উঠেছে ভোজ্য তেলের বাজার। বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। প্রস্তাবের পরপরই পহেলা মে থেকে সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম বেড়ে গেছে বাজারে। সরকারিভাবে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের চূড়ান্ত অনুমোদনের আগেই এই দাম বাড়ানো হলো।
মিলে দাম বৃদ্ধির প্রভাব যশোরে এসেও পড়েছে। পহেলা মে থেকে প্রতি কেজি ভোজ্য তেলে পাঁচ থেকে সাত টাকা বেড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তেলের দাম বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেক মানুষ মঙ্গলবার বেশি করে তেল কিনে রাখতে ভিড় করেন বিভিন্ন দোকানে। তবে, দাম বৃদ্ধির বিষয়ে যশোরের পাইকারি ব্যবসায়ীরা একেকজন একেক কথা বলেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যশোরে ভোজ্য তেল বিক্রির যে কয়টি বড় প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, মেসার্স হাজি আলী স্টোর, মিরাপুর কুন্ডু অয়েল মিল, ফাল্গুনী ট্রেডার্স, নবাব মিল, লোকনাথ ভান্ডার, আনোয়ার অয়েল মিল ও পি. কে স্টোর। দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের পর যশোরের বাজারে তার কী প্রভাব পড়েছে জানতে মঙ্গলবার পাইকারি ও খুচরা একাধিক দোকানে খোঁজ নেওয়া হয়। কথা হয়, মিরাপুর কুন্ডু অয়েল মিলের বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু, পি. কে স্টোরের প্রকাস চন্দ্র দাস ও হাজি আলী স্টোরের মো. মোস্তাকের সাথে।
বিশ্বজিৎ কুমার কুন্ডু বলেন, পহেলা মে থেকে মিলে ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার প্রতি মণে ২০০ টাকা করে মিল থেকে বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
পি. কে স্টোরের স্বত্বাধিকারী প্রকাস চন্দ্র দাস বলেন, মণে ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে ছিল ৪ হাজার ৮৫০ টাকা মণ; বর্তমানে নিচ্ছে ৪ হাজার ৯০০ টাকা। তার দাবি, কেজিতে এক টাকা করে বেশি নিচ্ছেন মিল মালিকরা।
তবে, হাজি আলী স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. মোস্তাক বলেন, শুল্ক প্রত্যাহারের পর পহেলা মে থেকে প্রতি মণ ভোজ্য তেলে মিল থেকেই বেশি নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। কেজিতে বেশি নেওয়া হচ্ছে আট টাকা করে। যশোরের বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সুপার। এরপর পাম অয়েল। সবচেয়ে কম বিক্রি হয় সয়াবিন তেল।
মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগ দিয়ে ছয়টার দিকে শহরের বকুলতলার মিরাপুর কুন্ডু অয়েল মিলে গিয়ে ১২ জনকে একসাথে তেল কিনতে দেখা যায়। একই অবস্থা ছিল অন্যান্য পাইকারি দোকানেও।
কুন্ডু অয়েল মিল থেকে নিয়মিত তেল কেনেন এমন একজন ক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশি দামে সয়াবিন তেল কিনেছেন তিনি। তবে, কেজিতে কতটাকা বেশি দিতে হয়েছে সেই বিষয়ে তিনি কোনোকিছু বলতে চাননি।
দাম কেবল পাইকারি দোকানে বৃদ্ধি পেয়েছে তা না। খুচরা দোকানে বেড়েছে আরও বেশি। শহর ও শহরতলির অনেক খুচরা দোকানে ২২০ টাকা কেজিতে সয়াবিন তেল বিক্রি করতে দেখা গেছে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২২০ টাকা দামে যে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে তাতে কম দামের পাম অয়েল কিংবা সুপার মেশানো হচ্ছে। এই রকম ভেজাল অনেক পাইকারি দোকানেও দেয়া হয় বলে সূত্র জানিয়েছে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব বলেন, যেহেতু কেবলমাত্র ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে, এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি সেই কারণে কোনোভাবেই বেশি দামে বিক্রি করা মানা হবে না। যাচাই করে দেখে বেশি দামে বিক্রি প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।