Home Uncategorized মঙ্গলে ধুলোর ঝড় উঠেছে

মঙ্গলে ধুলোর ঝড় উঠেছে

ছবি: ইন্টারনেট

ধুলোর ঝড় উঠেছে মঙ্গলে। লাল গ্রহের আকাশ ঢেকেছে ধুলোয়। আঁধার নেমেছে, মেঘলা আকাশ। সাঁইসাঁই করে ধুলোবালি উড়ছে। সেই মঙ্গল থেকে এ খবর পাঠিয়েছে নাসার রোভার।

মঙ্গলের মাটিতে নামার পর থেকে এক মুহূর্তও বসে থাকেনি নাসার আদরের মেয়ে পারসিভিয়ারেন্স। দুর্গম জ়েজেরো ক্রেটার থেকে গুটি গুটি পায়ে আশপাশের গিরিখাত, উপত্যকা, মৃত নদীর অববাহিকায় পাক খাচ্ছে সে। ভিডিও করছে, ছবি তুলছে ফটাফট। অবাক করা কিছু দেখলে বা শুনলেই সটান খবর পাঠাচ্ছে পৃথিবীর গ্রাউন্ড স্টেশনে।

Perseverance Rover Starts Two-Year Mission on Mars - Teaching Kids News

মঙ্গলে ধুলোর ঝড় নতুন কিছু নয়। মাঝেমাঝেই কেঁপে ওঠে লাল লাল গ্রহের মাটি। ধুলোর ঝড়ে ঢেকে যায় আকাশ। দুর্যোগ থাকে বেশ কয়েকদিন। অনেক সময় মাসও ঘুরে যায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলের পরিমণ্ডলের দশ-বিশ কিলোমিটার ধুলোর আস্তরণে ঢেকে যায়। দিনের বেলায় অন্ধকার নেমে আসে। মঙ্গলের কক্ষপথে ঘুরতে থাকা যানগুলির তাই বিপদ কম নয়। তবে পারসিভিয়ারেন্সের তেমন কোনও বিপদ নেই। শক্তপোক্ত করেই তাকে পাঠানো হয়েছে মঙ্গলে। পারসিভিয়ারেন্স যখন মঙ্গলে পা ছুঁইয়েছিল তখনই ধুলো উড়তে দেখা গিয়েছিল। ছোট ছোট ঘূর্ণি তৈরি হয়েছিল লালমাটিতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ধুলোর ঝড় থেকে লালগ্রহের রহস্যময় আবহাওয়া সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া সম্ভব, সে কাজই যত্ন নিয়ে করবে পারসিভিয়ারেন্স।

নসার বিজ্ঞানীরা বলছেন, মঙ্গলের আবহাওয়া কেমন সে নিয়ে কৌতুহলের শেষ নেই। কখনও ধুলোর জড়, কখনও মাটি কাঁপিয়ে ভূমিকম্প আবার কখনও বরফ পড়ে মঙ্গলে। গ্রহের পৃষ্ঠদেশ বা সারফেসের স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকে মাইনাস ৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। প্রতিদিনের তাপমাত্রা কখনও বেড়ে ১৫০ ডিগ্রি ছোঁয়।

NASA Selects Jezero Crater as the Landing Site for the Upcoming Mars 2020 Rover Mission | by Asgardia.space | Asgardia Space Nation | Medium

পৃথিবীর দিন-রাতের আয়ু যতটা, মঙ্গলের দিন-রাতের আয়ুও প্রায় ততটাই। পৃথিবী নিজের কক্ষপথে লাট্টুর মতো ঘুরতে যে সময় নেয় (২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট), তার চেয়ে সামান্য কিছুটা বেশি সময় নেয় লাল গ্রহ। ঘণ্টার হিসেবে তাই মঙ্গলের একটি দিন (দিন ও রাত মিলে) আমাদের চেয়ে সামান্য একটু বড়। তার দৈর্ঘ্য ২৪ ঘণ্টা ৩৭ মিনিট থেকে ২৪ ঘণ্টা ৩৯ মিনিটের মধ্যে। একে বলে ‘সল’।

NASA's InSight Lander Detects Hundreds of 'Marsquakes,' Proving Mars is Seismically Active | Discover Magazine
নাসার ইনসাইট ল্যান্ডারে ধরা পড়েছিল মার্সকোয়েক

বিজ্ঞানীরা বলছেন, পৃথিবীর কোরে যেমন রয়েছে লোহার গনগনে স্রোত, লাল গ্রহের অন্দরটাও তেমনই। তার উপর রয়েছে মঙ্গলের ক্রাস্ট। কোরের সেই গনগনে স্রোতের জন্য ক্রাস্টের ওঠা-নামা চলছে। কম্পনের ফলে মাটির গঠন বদলাচ্ছে। নাসার মঙ্গলযান ‘মিস কিউরিওসিটি’ আগেই বলেছিল মঙ্গলে ঘাপটি মেরে আছে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি। আচমকাই সেসব আগ্নেয়গিরি ফুঁসে ওঠে অগ্ন্যুৎপাত হয়। মঙ্গলের বিষূবরেখায় ‘এলিসিয়াম প্লানিশিয়া’ নামক এলাকায় পরীক্ষা করে নাসার ইনসাইট ও মিস কৌতুহল জানিয়েছিল ভূমিকম্প হয় মঙ্গলে। ২০১৯ সালে সিস যন্ত্রের ডেটা দেখিয়েছিল, একই দিনে পর পর দু’বার সিসমিক সিগন্যাল ধরা পড়ে, যার মানে হল ধারাবাহিক কম্পন হয়েছিল মঙ্গলের মাটিতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, লাল গ্রহ হল ভূমিকম্প প্রবণ বা যাকে বলা যায় ‘সিসমিক্যালি অ্যাকটিভ।’ পৃথিবীতে ভূমিকম্পের জন্য দায়ী এর বিভিন্ন টেকটোনিক প্লেটের মধ্যে রেষারেষি। একে অপরের গুঁতোয় একটি প্লেট চলে যায় অন্য প্লেটের নীচে। ফলে যে ফাটল তৈরি হয় তার কারণেই কেঁপে ওঠে মাটি। পৃথিবীর ম্যান্টলে থাকা অসম্ভব গরম পদার্থের তরল স্রোত বা লাভা উপরে উঠে আসে। কিন্তু মঙ্গলে কোনও টেকনোটনিক প্লেট নেই। সেখানে ক্রাস্টের বালিকণার নড়াচড়ার ফলেই তৈরি হয় কম্পন। একে বলে মঙ্গলের ভূমিকম্প বা মার্সকোয়েক।

-ইন্টারনেট