মন্জুর মোর্শেদ রাজা, নীলফামারী: “কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালোবাসে!”….. না,আমি এখানে কোন কবিতা শোনাতে চাচ্ছি না। পল্লীকবি জসীম উদ্দিনের আসমানী নামের মেয়েটি যেন ভিন্ন রূপে, ভিন্ন বয়সে নীলফামারীর জলঢাকায় এসে ধরা দিয়েছে; সুমিত্রা নামের নারীটি যেন আসমানীর-ই এক প্রতিচ্ছবি!
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম–বিশেষ করে ফেসবুক আর পত্রিকার পাতা জুড়ে এতো এতো মানুষের এতো এতো বেদনার গল্প! নাম তার সুমিত্রা বালা রায়। তবে তিনি সেই চলচ্চিত্রের ডাকসাইটে অভিনেত্রী সুমিত্রা দেবী নন। রামায়ণের রাজা দশরথের স্ত্রীও তিনি নন। তিনি পৃথিবীর এক কোণে লোকচক্ষুর অন্তরালে পড়ে থাকা— ভূমিহীন, গৃহহীন, সহায় সম্বলহীন অন্যের আশ্রয়ে আশ্রিতা একজন নারী। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের কয়েক বছরের মাথায় এক শিশু পুত্রকে রেখে তার স্বামী মৃত্যু বরণ করেন। সেই শিশু পুত্রকে নিয়ে সেই যে জীবন সংগ্রামের শুরু সেই জীবন সংগ্রামের যেন আর কোন শেষ নেই। একমাত্র ছেলেটি হোটেল শ্রমিক। নেশার ফাঁদে পা দিয়ে জীবনটাই তার তছনছ হয়ে গেল। সুমিত্রা বালা জীবন বদলানোর আশায় নেশাগ্রস্ত ছেলেটিকে বিয়ে করালেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস পুত্রবধূটিও মানসিক বিকারগ্রস্ত। তবুও তাদের অভাবের সংসারে কয়েকজন ছেলে-মেয়ের জন্ম হলো।
সম্প্রতি সুমিত্রা বালার বড় নাতীটি অন্যের ঘর জামাই হয়েছে। আর ছোট নাতীটি স্বর্ণ শিল্পের একজন শিশু শ্রমিক মাত্র। এই বয়সেও নেশাগ্রস্ত ছেলে আর বিকারগ্রস্ত পুত্রবধূর আর একটি নাতনীর ঘানি টেনে নিয়ে যেতে হচ্ছে এই বৃদ্ধাকেই। সেই যে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহের শুরু, জীবন সায়াহ্নে এসেও তাকে সেই একই কাজ করে যেতে হচ্ছে!তবে তিনি আগের মত আর সেই শ্রম দিতে পারেন না। চোখের দৃষ্টিও ঘোলা হয়ে এসেছে। তাই এখন কখনও কাজ পান, কখনও কাজ পান না। আক্ষরিক অর্থেই তিনি একজন ভূমিহীন এবং গৃহহীন।
অনেকটা ভাগ্যের জোরে জলঢাকা ডিগ্রী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী বাবু রমানাথ রায়ের পৈত্রিক ভিটাতে আপাততঃ তাদের একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই মিলেছে। তবে দীর্ঘদিন বাড়িটির সংস্কারের অভাবে জীর্ণ শীর্ণ দশা। সহস্র ছিদ্রযুক্ত টিনের চালে পলিথিনের ছাউনি দিয়েছে। বৃষ্টির দিনে নিদারুণ কষ্ট ভোগ করতে হয় তাদেরকে। আশ্রয় স্থলটি সংস্কার করার মত সামর্থ্য তো সুমিত্রা বালার নেই। রমানাথ বাবু যে তাদেরকে এই আশ্রয় টুকু দিয়েছেন, সেটাতেই দিন কাটছে তার নিদারুণ কষ্টে।
মুজিব শতবর্ষের অঙ্গিকারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছা অনুসারে ,তাকে তো সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় নিয়ে আসা ও পাশাপাশি তাকে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও করে দেয়ার কথা।এতদিনেও এসব রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা কিছুই পাননি তিনি।
তবে সম্প্রতি এক সাংবাদিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে তার বিধবাভাতা প্রাপ্তির জন্য অনলাইন আবেদন করে দিয়েছে। তিনি তো সেই ভাতা প্রাপ্তির একজন যৌক্তিক দাবিদার। এই বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন,জনপ্রতিনিধি, সমাজকর্মী এবং রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ ও দ্রুততার সাথে তার জন্য কিছু করার আকূল আবেদন জানিয়েছেন ।