Home দিল্লি মাহবুবুল হকের জন্য ইনসাফ চেয়ে মোদিকে চিঠি

মাহবুবুল হকের জন্য ইনসাফ চেয়ে মোদিকে চিঠি

ইউএসটিএম চ্যান্সেলর মাহবুবুল হক। ছবি সংগৃহীত

গুয়াহাটি: ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি মেঘালয়-এর চ্যান্সেলর (আচার্য) মাহবুবুল হকের গ্রেফতারির ঘটনায় এবার সরব হয়ে উঠেছেন ভারতের মুসলিম সমাজের বিশিষ্টরা। এই বিশ্ববিদ্যালয়টির বিষয়ে অসম সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক চাপে পড়ে চ্যান্সেলর মাহবুবুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উদ্বেগ ব্যক্ত করেছেন ভারতের মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা। এ ব্যাপারে ন্যায়বিচার চেয়ে  ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন মুসলিম সমাজের বিশিষ্টজনেরা।

প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এসওয়াই কুরেশি, দিল্লির প্রাক্তন গভর্নর নাজিব জং, আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য জমির উদ্দিন শাহ, প্রাক্তন সাংসদ সাহিদ সিদ্দিকী, শিল্পপতি সাইদ শেরওয়ানি-সহ বিশিষ্টজনের স্বাক্ষরিত ‘সিটিজেন ফর ফ্রেটারনিটি’-র ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, উপযুক্ত আইন প্রক্রিয়া ছাড়াই চ্যান্সেলর মাহবুবুল হককে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেফতারের সময় নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। তাঁরা মনে করেন, ওই বিশ্ববিদ্যালয় ইউএসটিএম এবং চ্যান্সেলর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলি পুরোপুরি প্রতিশোধমূলক। অভিযোগে বলা হয়েছে, সামাজিক ব্যক্তিত্বদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে একটি ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরির প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করার এ এক অপচেষ্টা। ফলে অসম সরকারের এহেন কার্যকলাপের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছেন তাঁরা।

চ্যান্সেলর মাহবুবুল হক জালিয়াতির মাধ্যমে পড়ুয়াদের বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়ো এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করে ‘সিটিজেন ফর ফ্রেটারনিটি’র সদস্যরা। কারণ, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাজ্য ও জাতীয় স্তরে প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষায় নজরকাড়া ফলাফল করেছে।

এ দিকে মাহবুবুল হকের বিষয়ে শুক্রবার অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা রায় ঘোষণা করেছেন, ইউএসটিএম-এর চ্যান্সেলর মাহবুবুল হকের দীর্ঘ কারাদণ্ড হবে। হিমন্ত বিশ্ব শর্মা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় জোর দিয়ে বলেন, হক দীর্ঘ সময় জেলে থাকবেন।

অসমের মুখ্যমন্ত্রীর এমন ভবিষ্যদ্বাণী থেকে আরও জোরালো হচ্ছে তাঁর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রতিশোধের কথা। আর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মুখ্যমন্ত্রী হয়েও বিচারকের দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। যা বলার কথা বিচারকের হিমন্ত অবলীলায় তা বলে দিচ্ছেন।

মাহবুবুল হক দীর্ঘ সময় ধরে কারাগারে থাকবেন কি না, তা বলার এখ্তিয়ার রাখেন একমাত্র বিচারক। বিচারকই বলতে পারেন, যে অভিযোগ আচার্র্য মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে তোলা হয়েছে, তা সঠিক কি না। কিংবা  জামিন দেওয়া হবে কি না, সে কথাও বলার অধিকার একমাত্র বিচারকের। এছাড়া উচ্চতর আদালত হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্ট থেকেও মাহবুবুল হক জামিন পাওয়ার অধিকার রাখেন।
যেভাবে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিচারকের হয়ে নিজেই ফায়সালা দিয়ে দিচ্ছেন, তাতে এ কথা সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ হয়েছে, হয়তো বা বিচার ব্যবস্থাকে মহাশক্তিধর হিমন্ত বিশ্ব শর্মা কবজা করে ফেলেছেন। অসমের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ্কে এভাবে হয়রানি করার পিছনে যে হিমন্ত বিশ্ব শর্মার মুসলিম বিদ্বেষ এবং ব্যক্তিগত প্রতিশোধ স্পৃহা কাজ করছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না বলেই বহু সচেতন নাগরিক মনে করছেন।