Home First Lead মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় সমর্থন দেয়ার আহ্বান যুক্তরাজ্যকে

মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় সমর্থন দেয়ার আহ্বান যুক্তরাজ্যকে

যুক্তরাজ্য: মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাম্বিয়ার করা মামলায় সমর্থন দিতে যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শতাধিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টেরিয়ান (এমপি)। মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সামরিক বাহিনীর নির্যাতন থেকে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নিতে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন দলের ১০৪ জন এমপি এই আহ্বান জানান।

গত বছরের নভেম্বরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা করে গাম্বিয়া। এর প্রায় এক বছর পরে গাম্বিয়ার সঙ্গে নেদারল্যান্ড ও কানাডা সরকার যোগ দেয় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথবিষয়ক মন্ত্রী ডমিনিক রাবের বরাবরে পাঠানো রোহিঙ্গা অধিকার সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপের কো-চেয়ার রুশনারা আলী ও জেরেমি হান্ট এমপিদের পক্ষে স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখাশোনার দায়িত্ব যুক্তরাজ্যের এবং এই পরিস্থিতিতে এই মামলায় যোগ না দিলে মিয়ানমার মিলিটারিকে অনিচ্ছাকৃতভাবে একটি ভুল বার্তা দেওয়া হবে।

চিঠিতে তারা আরও বলেন, ওই মামলার প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে, কারণ কোর্ট গাম্বিয়ার সঙ্গে একমত পোষণ করেছে, যে রোহিঙ্গারা গণহত্যার শিকার। এর প্রাথমিক সাক্ষ্য-প্রমাণ আছে এবং রাখাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের রক্ষা করার জন্য মিয়ানমারের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আদালত মনে করেছে।

এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে ১৭ জন বিচারক একমত হয়েছেন, জানিয়ে সংসদ সদস্যরা বলেন, চীন ও রাশিয়ার বিরোধিতার কারণে নিরাপত্তা পরিষদের সুপারিশ ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্টে পাঠানো যায়নি। এই কারণে দায়বদ্ধতা ও বিচার নিশ্চিত করার জন্য গাম্বিয়ার সঙ্গে যোগ দেওয়াটা এখন বর্তমান প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে ভালো পথ।

চিঠিতে আরো বলা হয়, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তনে মিয়ানমার সরকারের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সুতরাং এটি স্পষ্ট, এখনই অনেক কিছু করা প্রয়োজন। আমরা নিশ্চিত যুক্তরাজ্য এ মামলায় হস্তক্ষেপ করলে আইনগত ও প্রতীকীভাবে উল্লেখযোগ্য সহযোগিতা করা হবে। কেবল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ও আন্তর্জাতিক আইনকে সমর্থন করতেই নয়, মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর দ্বারা আরও আন্তর্জাতিক অপরাধ রোধ করাও জরুরি। মানবাধিকারের বিষয়ে যুক্তরাজ্য ঐতিহাসিকভাবে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিয়েছে। যুক্তরাজ্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ‘পেন হোল্ডার’ এবং যৌন সহিংসতা প্রতিরোধ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা।

২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। দেশটির সেনাবাহিনী রাখাইনে হত্যাকাণ্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ শুরু করলে জীবন বাঁচাতে নতুন করে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর আইসিজেতে মামলা করে গাম্বিয়া।

মামলায় প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা ও সংঘাত আরও তীব্রতর না হওয়ার জন্য জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিতে আদালতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল দেশটি। পরে ২৩ জানুয়ারি নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজের বিচারক বিচারপতি আবদুল কাফি আহমেদ ইউসুফ মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ সংক্রান্ত মামলায় চারটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন।

এগুলো হলো-

১. রোহিঙ্গাদের হত্যা, মানসিক ও শারীরিক নিপীড়ন ও ইচ্ছা করে আঘাত করতে পারবে না।

২. গণহত্যার আলামত নষ্ট না করা,

৩. গণহত্যা কিংবা গণহত্যার প্রচেষ্টা বা ষড়যন্ত্র না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ।

৪. মিয়ানমারকে অবশ্যই ৪ মাসের মধ্যে লিখিত জমা দিতে হবে, যেন তারা সেখানে পরিস্থিতি উন্নয়নে কী ব্যবস্থা নিয়েছে,।

এরপর প্রতি ৬ মাসের মধ্যে আবার প্রতিবেদন দেবে। পাশাপাশি মিয়ানমারকে গণহত্যায় অভিযুক্ত করেছেন আইসিজে। গণহত্যা বন্ধ করে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য গাম্বিয়ার আবেদনকে যুক্তিযুক্ত বলেও মনে করেন এই আন্তর্জাতিক আদালত।

-বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক