Home কৃষি মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম

মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম

ট্রাকে ট্রাকে এনে স্টেশন রোডের এখানে নামানো হয় প্রতিদিন। এখান থেকে পাইকারি বিক্রি হয়।

*চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়: ডাঃ ইমরান

নাজমুল হোসেন

চট্টগ্রাম: তীব্র তাপদাহে অতিষ্ঠ মানুষ। কোথায় স্বস্তি পাবে তা নিয়েই যত চিন্তা। গরমে অস্থির পথচারীদের এক মুহূর্তের জন্য হলেও স্বস্তি এনে দিচ্ছে কচি তালের শাঁস।

গরম বাড়ায় বেড়ে গেছে তালের শাঁসের চাহিদা। চাহিদা বাড়ায় বিক্রিটাও জমজমাট। নগরের ব্যস্ত রাজপথের মোড় থেকে শুরু করে বিভিন্ন অলি-গলিতেও এখন বিক্রি হচ্ছে তাল। সাইজ ভেদে প্রতিটির দাম ১৫ থেকে ২০ টাকা। তীব্র গরমে পানিশূন্যতায় ভোগা মানুষ মুহূর্তের স্বস্তি পেতে পথের ধারে দাঁড়িয়েই খাচ্ছে তালের শাঁস।

সরেজমিনে নগরের কদমতলী এলাকার রাস্তা ও ফুটপাতে দেখা গেছে, কচি তালের বাজার। পাইকারির পাশাপাশি বিক্রি চলছে খুচরাও। এছাড়া বিআরটিসি, ফিরিঙ্গীবাজারের ফলের আড়তসহ বিভিন্ন জায়গায় ট্রাকে ট্রাকে আসছে কচি তাল। এসব স্থানে পাইকারি দরে তাল কিনে নিচ্ছেন খুচরা বিক্রেতারা।

কদমতলীর কয়েকজন পাইকারি তাল বিক্রেতা জানান, তারা কুমিল্লা জেলাসহ অন্যান্য জেলা থেকে কচি তাল সংগ্রহ করেন। পরিবহণ ভাড়া বেশি থাকায় এবার দামটা একটু বেশি। আকারভেদে প্রতি হাজার তালের দাম ৫ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা।

চকবাজার এলাকার খুচরা তাল বিক্রেতা ইয়াকুব বলেন, গরম বেড়ে যাওয়ায় বাজারে এখন তালের শাঁসের ভালো চাহিদা রয়েছে। প্রতি পিচ ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করছি। বিক্রিও বেশ ভালো। তবে বেশি দামে কিনতে হওয়ায় লাভ কম হচ্ছে।

বিক্রেতারা জানান, তালগাছ থেকে ফল কেটে আনা একটি কষ্টকর বিষয়। কাটার জন্য অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কেটে আনতে হয়। একটি গাছে ৩০০ থেকে ৩৫০ ফল পাওয়া যায়। গাছ মালিককে শত হিসেবে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা করে দিতে হয়।

তাল কাটার শ্রমিক ও গ্রাম থেকে শহরে আনা পর্যন্ত পরিবহন খরচ নিয়ে পিচ প্রতি ৫ থেকে ৮ টাকা খরচ হয়। গ্রামাঞ্চলে দিন দিন তাল গাছের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনেক তালগাছ মালিক পানি (কাঁচা) তাল হিসেবে বিক্রি না করে পাকার জন্য রাখেন। পরিবারের চাহিদা পূরণ করে পাকা তাল আশ-পাশের পরিবারে মধ্যে বিতরণ করে। চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভাদ্র মাসে পাকা তালের পিঠার এখনও কদর রয়েছে।

জানা গেছে, জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম দিকে বিক্রি শুরু হয় চলে পুরো এক মাস। শুরুতে দাম একটু চড়া থাকলেও ধীরে ধীরে কমে আসে। শুরুর দিকে স্বল্পআয়ের মানুষজন শাঁস না কিনলেও দাম কমার পর সব শ্রেণীর মানুষ তালের শাঁসের স্বাদ নিয়ে থাকেন। এক মাসের জন্য এ পেশার সাথে সম্পৃক্ত হয়ে শাঁস বিক্রি করেন বিক্রেতারা।

তালের শাসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের তরুণ চিকিৎসক মেহেদী হাসান ইমরান বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, প্রচণ্ড গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের মিষ্টি পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় আরামদায়ক অনুভূতি। তালের আশে প্রতি ১০০ গ্রামে ০.৮ গ্রাম খাদ্যপযোগী খনিজ পদার্থ, ২০.৭ গ্রাম শর্করা, ০.৮ গ্রাম আমিষ, ০.৫ গ্রাম আঁশ রয়েছে। গরমে শরীরের পানির অভাব পূরণ করতে এর মধ্যে আছে ৭৭.৫ ভাগ জলীয় অংশ।

তিনি আরো বলেন, ০.৫ গ্রাম খাদ্য আঁশ থাকায় এটি হজমে সহায়ক। তালের শাঁসে খাদ্যশক্তি রয়েছে প্রায় ৮৭ কিলো ক্যালোরি। ৮ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকায় তালের শাঁস হাড় গঠনেও দারুণ ভূমিকা রাখে। কচি তালের শাস রক্তশূন্যতা দুর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায়।

এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চট্টগ্রাম অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. মঞ্জুরুল হুদা বিজনেসটুডে২৪কে জানান, বাণিজ্যিকভাবে চট্টগ্রাম অঞ্চলে তাল গাছের তেমন বাগান নেই। তবে চাঁদপুরের জঙ্গলী নামক স্থানে সড়কের পাশে দুইশতাধিক তালগাছ আছে। সাধারণত বাসাবাড়িতেই মানুষ তালগাছ রোপন করে থাকে। তালগাছ বজ্রপাত রোধে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।