বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
যশোর:এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অনুচ্ছেদে সাম্প্রদায়িক উস্কানি সংক্রান্ত উদ্দীপকের সাথে সম্পৃক্ত পাঁচ শিক্ষককে বৃহস্পতিবার দীর্ঘ সাত ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি যশোর শিক্ষাবোর্ডে ডেকে তাদের এই জিজ্ঞাসাবাদ করে।
প্রথমে সেটার প্রশান্ত কুমার পালকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এরপর চারজন মডারেটরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা। সকাল ১০ টা থেকে এই জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়। চলে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। তদন্ত কমিটির এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ওইসময় তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য প্রদান করেন প্রশ্ন তৈরির সাথে সংশ্লিষ্ট পাঁচ শিক্ষক। বক্তব্য প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সেটার প্রশান্ত কুমার পাল। তিনি কী বক্তব্য দিয়েছেন সেই সম্পর্কে মুখ খুলতে না চাইলেও তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন,‘প্রশান্ত কুমার পাল ২০২০ সালে সেটার ছিলেন। তিনি ওই বছরও প্রশ্ন তৈরি করেন। যদিও ওই বছর পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তিনি লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেছেন, ভুলবশত উদ্দীপকটি লিখে ফেলেছেন। কিন্তু চার মডারেটর কী করেছেন। তারা কেন বাদ দিলেন না।’
তদন্ত কমিটির প্রধান যশোর বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানী বৃহস্পতিবার রাতে বলেছেন, তারা তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করেছেন। নির্ধারিত পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবেন বলে মনে করছেন।
প্রশ্নপত্র তৈরির সাথে সম্পৃক্তদের আবারও হাজির করতে হবে কিনা জানতে চাইলে কেএম রব্বানী বলেন, তাদেরকে টানা সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সবকিছু শোনা হয়েছে। সংগ্রহ করা হয়েছে সব ধরনের কাগজপত্র। তারপরও যদি প্রয়োজন হয় তাহলে তাদেরকে ডাকা হবে।
বৃহস্পতিবার যশোর বোর্ডে তদন্ত কমিটির কাছে যারা লিখিত বক্তব্য প্রদান করেছেন তারা হচ্ছেন, বিতর্কিত উদ্দীপক লেখা সেটার ঝিনাইদহের মহেশপুরের ডা.সাইফুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক প্রশান্ত কুমার পাল এবং চারজন মডারেটর নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তাজউদ্দিন শাওন, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক শফিকুর রহমান, নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড কলেজের সহকারী অধ্যাপক শ্যামল কুমার ঘোষ ও কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা আদর্শ কলেজের সহকারী অধ্যাপক রেজাউল করিম।
উল্লেখ্য চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষায় বিতর্কিত প্রশ্নপত্র করায় দেশজুড়ে সমালোচনা তৈরি হয়। যে সমালোচনার রেশ এখনো রয়েছে।
চলতি এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্রের সৃজনশীল প্রশ্নের একটি অনুচ্ছেদে সাম্প্রদায়িক উস্কানির সাথে যশোর শিক্ষাবোর্ডের এক সেটার ও চার মডারেটরের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে। দেশব্যাপী তোলপাড় করা এই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্দেশ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করে যশোর শিক্ষাবোর্ড। তিন সদস্যের এই তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় যশোর শিক্ষাবোর্ডের কলেজ পরিদর্শক কেএম রব্বানীকে। অপর দু’ সদস্য হচ্ছেন, বিদ্যালয় পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম ও উপকলেজ পরিদর্শক মদন মোহন দাস। আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে কমিটিকে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আহসান হাবীব।