Home Second Lead যেভাবে বৈরুত বন্দরে নাইট্রেটের চালানটি এসেছিল

যেভাবে বৈরুত বন্দরে নাইট্রেটের চালানটি এসেছিল

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

লেবাননের বন্দরনগরীতে ২ হাজার ৭শ’ ৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট রয়েছে-ভয়াবহ বিস্ফোরণের পরই অধিকাংশ বাসিন্দা তা জানতে পেরেছেন। এটি কৃষিক্ষেত্রে সার এবং বোমায় ব্যবহার করা হয়।
বিস্ফোরণে শতাধিক মানুষের মৃত্যু, হাজার হাজার মানুষ আহত হওয়া এবং পুরো শহর ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়ায় শোকে মূহ্যমান রাজধানীর বাসিন্দারা।

অনলাইনে প্রকাশিত সরকারি তথ্য এবং রেকর্ড বলছে, লেবাননের কর্মকর্তারা ৬ বছরের বেশি সময় আগেই জানতেন বৈরুতের বন্দরের ১২ নম্বর হ্যাঙ্গারে নাইট্রেট মজুদ আছে। তারা এর ভয়াবহতা সম্পর্কেও ভালোভাবে সতর্ক ছিলেন।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে রাশিয়ার মালিকানাধীন মালদোভার পতকাবাহিনী একটি কার্গো জাহাজে করে লেবাননে পৌঁছায় অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ওই চালান। শিপ ট্র্যাকিং সাইট ফ্লেটমোনের তথ্য অনুযায়ী জাহাজটি জর্জিয়া থেকে মোজাম্বিক যাচ্ছিল।

কারিগরি ত্রুটির কারণে জাহাজটি বৈরুতের ডকে ভিড়তে বাধ্য হয়। জাহাজের ক্রুদের নিয়োগ করা আইনজীবী এ তথ্য জানান। পরে লেবাবন কর্তৃপক্ষ জাহাজটিকে বন্দর ত্যাগ করতে দেয়নি।

ফ্লেটমোন জানায়, পরে ধীরে ধীরে জাহাজ রেখেই মালিক, ক্রুরা চলে যায়।

পরে জাহাজ থেকে নাইট্রেটগুলো নামানো হয়। রাখা হয় বৈরুত বন্দরের ১২ নম্বরে হ্যাঙ্গারে। হ্যাঙ্গারটি মহাসড়কের পাশে রাজধানীর প্রধান প্রবেশ মুখে অবস্থিত।

কয়েক মাস পরে ২০১৪ সালে ২৭ জুন লেবানন কাস্টমসের পরিচালক শাফিক মেরহি দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তি করার জন্য একটি চিঠি পাঠান। যাতে দ্রুত বিষয়টি নিষ্পত্তির আহ্বান জানানো হয়। অনলাইনে প্রকাশিত তথ্যে চিঠি পাঠানোর ঠিকানা উল্লেখ করা হয়নি।

বিষয়টি সুরাহা করার জন্য দেশটির কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ৩ বছরে আরো ৫টি চিঠি পাঠায়। চিঠিগুলো পাঠানো হয় যথাক্রমে ২০১৪ সালের ৫ ডিসেম্বর, ২০১৫ সালের ৬ মে, ২০১৬ সালের ২০ মে, ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর এবং ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর।

চিঠিগুলোতে সমাধানের জন্য তিনটি প্রস্তাব দেয়া হয়। ১. নাইট্রেট সরিয়ে নেয়া। ২. লেবাননের সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা। ৩. লেবাননের বেসরকারি বিস্ফোরক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়া।

চিঠিতে আরো বলা হয়, অনিরাপদ হ্যাঙ্গারে পণ্যগুলো রাখার কারণে তৈরি ঝুঁকি বিবেচনায় নিয়ে সেগুলো অতিদ্রুত সরিয়ে নিয়ে বন্দরের নিরাপত্তা রক্ষার অনুরোধ জানাচ্ছি। অথবা বিক্রির ইচ্ছে থাকলে লেবাননের বিস্ফোরক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হোক। এবারও কোনো উত্তর আসেনি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে।

এক বছর পর লেবানন কাস্টমসের নতুন প্রশাসনিক প্রধান দাহের একজন বিচারকের কাছে বিষয়টি জানিয়ে একটি চিঠি পাঠান।

২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবরের ওই চিঠিতে দাহের বিচারককে অনুরোধ জানান ঝুঁকির বিষয়টি বিবেচনা নিয়ে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটগুলো সরিয়ে নিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হোক। অথবা এগুলো যথাযথভাবে ব্যবহারে উদ্যোগ নেয়া হোক। এর তিন বছর পরও নাইট্রেটগুলো সেই হ্যাঙ্গারেই মজুদ ছিল।

লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব  বিস্ফোরণের ঘটনায় ‘ভয়াবহ জাতীয় দুর্যোগ’ ঘোষণা করেন। ভয়াবহতার জন্য যারা দায়ী তাদের চড়ামূল্য দিতে হবে বলেও প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

নাইট্রেটগুলো ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতাকে অগ্রণযোগ্য বলেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন। জড়িতদের কঠিন শাস্তি পেতে হবে বলে হুঁশিয়ার করেন তিনি। ইতোমধ্যে একটি তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে ৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য সময়ে বেঁধে দেয়া হয়েছে।