বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ভারতের রাজস্থানে ঘটে চলেছে এই পাশবিক প্রথা। নাবালিকা থেকে শুরু করে শিশুদের পর্যন্ত তোলা হচ্ছে নিলামে। একেবারে সইসবুত করে, রীতিমতো স্ট্যাম্প পেপারে সই করে, দলিল করে নিলামে বিক্রি করা হচ্ছে ঘরের মেয়েদের। আগেই বুল্লিবাঈ, সুল্লিডিলস-এর মতো অ্যাপ মুসলিম মেয়েদের নিলামে তোলা হয়েছিল। সেটা ভার্চুয়াল হল্যে রাজস্থানের ঘটনা একেবারে রুক্ষ্ম বাস্তব।
মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি করা হচ্ছে ঘরের মেয়েদের। তাও আবার নিলাম ডেকে। সর্বোচ্চ দর যে দিতে পারবে তার হাতে তুলে দেওয়া হবে ৮-১৮ বছরের নাবালিকাদের। এরপর তাদেরকে অনায়াসে বিক্রি করে দেওয়া হবে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, দিল্লি, মুম্বইয়ের নিষিদ্ধপল্লীতে।
রাজস্থানের বেশ কয়েকটি এলাকার পঞ্চায়েতে এই বেআইনি প্রথাকে রূপ দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে স্ট্যাম্প পেপার। সংবাদমাধ্যমে এই জঘন্য ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসল মানবাধিকার কমিশন ও জাতীয় মহিলা কমিশন।
শুক্রবার এই ঘটনার তদন্ত করতে দুই সদস্যের একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং দল গঠন করেছে জাতীয় মহিলা কমিশন। অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার রাজস্থানের মুখ্যসচিবকে চিঠি দিয়ে ৪ সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে মানবাধিকার কমিশন। পঞ্চায়েতি রাজ আইন অনুসারে ওই রাজ্যের পঞ্চায়েতগুলি নারী ও শিশু সুরক্ষায় কী কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, সেই সব প্রশ্নের উত্তর চেয়েছে মানবাধিকার কমিশন।
রাজস্থানে ঋণ পরিশোধ না করতে পারলে নিজেদের বাড়ির মেয়েদের নিলামে বিক্রি করে সেই ঋণ মেটানোর নিদান দিচ্ছেন পঞ্চায়েত প্রধান। সেসব কথা লেখা হচ্ছে স্ট্যাম্প পেপারে। আর এই পরামর্শ মেনে না নিলে ওই মেয়েদের মাকে ধর্ষণ করার নিদান দিচ্ছেন তাঁরা। এই জঘন্য প্রথা অনেক আগে থেকেই চলছে ওই এলাকায়।
কিন্তু ক্ষমতাশীলদের বিরুদ্ধাচারণ করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর সাহস করেনি কেউ। একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশ হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বিরোধীরা তুলোধোনা করছে কংগ্রেস শাসিত রাজস্থান সরকারকে। পন্ডের গ্রামে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নির্যাতিতা জানিয়েছেন, তার বাবা প্রায় ১৫ লক্ষ টাকার ঋণে জড়িয়ে পড়েছিলেন।
সেই ঋণশোধ করতে ওই ব্যক্তিকে তার বোন ও তিন মেয়েকে নিলাম করতে হয়। তাতেও ঋণশোধ না হওয়ায় ১২ বছরের ওই নির্যাতিতাকে বিক্রি করা হয়। তিনি জানিয়েছেন ৮ লক্ষ টাকা দিয়ে তাকে ১৫ বছরের জন্য কেনা হয়েছিল। এরপর অমানবিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তাঁর মতে, তাঁর ৫ বোনের জীবন এভাবেই নষ্ট হয়েছে। অথচ তার পরেও শোধ হয়নি তাঁর বাবার ঋণ। অন্যদিকে ১২ বছরের গায়েত্রী জানিয়েছে, তাঁর মা ও ঠাকুরমার অসুস্থতার জন্য ঋণ নিয়েছিলেন তার বাবা। সেই ঋণ পরিশোধ করতে তাকেও বিক্রি করা হয়। এরপর তাকে জয়পুর ও আগ্রায় নিয়ে যাওয়া হয়।
গায়েত্রীকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করিয়ে দিল্লিতে নতুন করে ৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দালাল। ১২ বছরের গায়েত্রীকে ৩ বার বিক্রি করা হয়। এর মধ্যে সে ৪ বার অন্তঃস্বত্ত্বা হয়ে পড়ে। শেষে এক যুবকের সঙ্গে সে পালিয়ে যায়।
ভীলওয়াড়া-সহ রাজস্থানের অন্যান্য এলাকাতেও ঋণ পরিশোধের নামে রমরমিয়ে চলছে নারী পাচারের কারবার। গায়েত্রীর মতো আরও অনেক নাবালিকাকে বাধ্য করা হচ্ছে দেহব্যবসায় নামতে। এই অসহায় মেয়েদের বাড়ির লোকজন বাধা দিলে করা হচ্ছে অমানবিক অত্যাচার। সন্তানকে বাজারি দাঁড়িপাল্লায় তুলে তার দাম নির্ধাারণ না করাতে চাইলে অবলীলায় ধর্ষিতা হচ্ছেন ওই মেয়েদের মায়েরা। এমন অন্যায়ের খবর কি সত্যিই এতদিন জানত না রাজস্থানের প্রশাসন? উঠছে প্রশ্ন।