Home First Lead রুমায় সোনালী ব্যাংক লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ

রুমায় সোনালী ব্যাংক লুট, ম্যানেজারকে অপহরণ

ছবি সংগৃহীত

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

বান্দরবান: রুমা উপজেলায় সোনালী ব্যাংক লুট করেছে পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এসময় পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর ১৪টি অস্ত্র, ব্যাংকের বল্টের তালা ভেঙ্গে প্রায় দেড়কোটি টাকা লুট ও ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দিন’কে অপহরণ করে নিয়ে গেছে সশস্ত্র বাহিনীরা।

আইনশৃংখলা বাহিনী ও স্থানীয়রা জানায়, মঙ্গলবার রাত নয়টার দিকে রুমা উপজেলার বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়ার পর উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন রুমা সোনালী ব্যাংকের শাখা চারদিকে  কেএনএফ-এর শতাধিক সশস্ত্র সদস্য ঘেরাও করে লুট করেছে । এসময় ব্যাংকের ভল্টের তালা ভেঙে প্রায় দেড়কোটি টাকা লুট করেছে কেএনএফ সন্ত্রাসীরা। বাধা দেয়ায় দায়িত্বরত পুলিশ, আনসার বাহিনীর সদস্যদের মারধর করে তাদের ১৪টি অস্ত্রও লুট করে নিয়ে গেছে। যাবার সময় তারাবি নামাজ শেষে ফেরারপথে সোনালী ব্যাংকের রুমা শাখার ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশসহ উধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়েছেন।

রুমা উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, রাতে তারাবি নামাজের সময় প্রায় শতাধিক সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ সদস্যরা চতুর্দিকে ঘেরাও করে সবার মোবাইল কেড়ে নিয়ে সেখানে নিয়োজিত থাকা পুলিশ ও আনসার সদস্যের অস্ত্র লুট করে। এবং সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার মো. নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে খবর পেয়েছি।

অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজার ও লুট করা অস্ত্র, টাকা উদ্ধারে অভিযানে নেমেছে যৌথ বাহিনীর সদস্যরা। রুমা উপজেলা জুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনার পর ইউএনও অফিসে আইনশৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টরা তাৎক্ষণিক জরুরী মিটিং করেছে। ঘটনাস্থলসহ আশপাশের এলাকাগুলোতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে রুমা উপজেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (সহকারী কমিশনার ভূমি) দিদারুল আলম জানান, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা তান্ডব চালিয়েছেন রুমায়। সোনালী ব্যাংকের প্রায় দেড়কোটি টাকা লুট এবং ব্যাংক ও ইউএনও অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত স্টাফদের মারধর করে সবার মোবাইলফোন, নগদ টাকা এবং পুলিশ, আনসারের ১৪টি অস্ত্র লুট করে নিয়ে গেছে। যাবার সময় পথ থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে ধরে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। মারধরে বেশকয়েকজন আহত হয়েছে। তবে গুরুতর আহত কেউই হয়নি।

স্থানীয়রা মনে করছেন, বিদ্যুৎ না থাকার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তান্ডব চালিয়েছে  কেএনএফ সশস্ত্র সন্ত্রাসী বাহিনী। প্রায় ১শ জনের মত সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা রুমা উপজেলা পরিষদসহ আশপাশের এলাকাগুলো ঘেরাও করে লুটপাট চালিয়েছে। রুমা উপজেলা জুড়ে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আতঙ্কে ঘরবাড়ি থেকে কেউই বেরুচ্ছেনা।

রুমার ইউপি চেয়ারম্যান উহ্লামং মারমা বলেন,  সন্ত্রাসী গোষ্ঠী সোনালী ব্যাংক ডাকাতি করেছে শোনেছি। পুলিশ আনসার সদস্যদের মারধর করে অস্ত্রও লুট করে নিয়ে গেছে। রুমায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, রুমায় ব্যাংক লুট ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুটের ঘটনা ঘটেছে। ব্যাংক ম্যানেজারকেও ধরে নিয়ে গেছে খবর পেয়েছি।  নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে এখনো বিস্তারিত সবতথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সেনাবাহিনী’সহ যৌথ বাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিযানে নেমেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে উপজেলা জুড়ে।

সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফজাল করিম গণমাধ্যমকে বলেছেন যে রাত ৯টার দিকে তারা রুমা শাখায় হামলা করেছে।  তারা কুকি চিন গোষ্ঠীর (বম পার্টি) সদস্য হতে পারে ।  সঠিক পরিচয় এখন পর্যন্ত জানতে পারিনি। তারা আমাদের শাখা ব্যবস্থাপককে অপহরণ করেছে। তিনি জানান, প্রত্যন্ত এলাকায় শাখাটির অবস্থান হওয়ায় সেখানে সার্বক্ষণিক পুলিশ পাহারা থাকে। ব্যাংকের নিজস্ব অস্ত্রধারী নিরাপত্তা কমীও ছিল। সন্ত্রাসীদের হামলায় টিকতে পারেনি তারা।

স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রাত সাড়ে ৮টার দিকে রুমা সদরের বেথেল বম পাড়া থেকে ৮০-১০০ জনের একটি দলকে রুমা উপজেলা পরিষদের দিকে যেতে দেখা গেছে। তাদের অধিকাংশ সশস্ত্র অবস্থায় ছিল।  সোনালী ব্যাংক রুমা শাখায় ডাকাতি করার হুমকি দিয়ে আসছিল কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।