বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: নগরীর প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সকাল থেকে তীব্র যানজটে কর্মমুখী মানুষের অবস্থা নাজেহাল। একদিকে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস, তার ওপর করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত ৭ দিনের লকডাউন শুরু হচ্ছে কাল থেকেই। তাই যে যেভাবে পারছে নিজের প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিতে রাস্তায় নামছে আবার অফিসগামী মানুষের চাপ এ যেনো মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িঁয়েছে।
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হতে রাস্তায় যেন তিল ধারণের জায়গা নেই। এক জায়গাতেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায় যাত্রীদের। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন অফিস-ফেরত মানুষগুলো। বাধ্য হয়ে অনেকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যে গেছেন।
রবিবার (৪ এপ্রিল) দিনের শুরু থেকেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় এমন যানজট দেখা দেয়। বেলা গড়াতেই তা অনেক এলাকায় অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছে যায়।
বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর, ষোলশহর দুই নম্বর গেইট, জিইসি মোড়, ওয়াসা, দেওয়ানহাট থেকে বারিক বিল্ডিং মোড় পর্যন্ত এলাকায় যানজট লেগেই ছিল। এ সড়কে যানবাহন চলাচল করেছে ধীরগতিতে। ২০ মিনিটের পথ যেতে এক থেকে দেড় ঘণ্টারও বেশি সময় লেগেছে।
ইপিজেড মোড়ে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। ইপিজেড এর পোশাক কারখানার ছুটির পর দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগেই ছিল। ইপিজেড মোড় অতিক্রম করতেই ঘণ্টা পার হয়েছে যাত্রীদের।
বন্দর জোনের টিআই প্রশাসন এস এম শওকত হোসেন বিজনেসটুডে২৪কে বলেন, কয়েকদিন পর রোজা আবার কাল থেকে লকডাউন তাই রাস্তায় যানজট একটু বেশি। আশা করি সন্ধ্যা নাগাদ যানজট কমে আসবে। যানজট যাতে না লাগে সেজন্য ট্রাফিক বিভাগ সতর্ক রয়েছে।
নগরীর কদমতলী, কোতোয়ালী মোড়, নিউ মার্কেট মোড় এলাকায়ও থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। মাঝিরঘাট রোড, জাকির হোসেন রোডেও ছিল যানজট। কোন কোন সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে যাত্রীদের।
বিকালে মোড়ে মোড়ে অসংখ্য লোকজনকে গণপরিবহনের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। কোন একটা বাস আসলেই হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন লোকজন। এতে নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।
কেনাকাটা করতে যাওয়ার পথে রিকশায় আটকা পড়েন সানজিদা হোসেন নামের একজন গৃহিণী। যানজটে দীর্ঘক্ষণ ধরে আটকে থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। বলেন, ‘এমনিতেই প্রচণ্ড রোদ। গরমে সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থা। অস্থির হয়ে উঠেছি। কখন যেতে পারব বুঝতে পারছি না। এই যানজটের জ্বালায় অতিষ্ঠ। কাল থেকে লকডাউন সব কাজ আজকের মধ্যে শেষ করতে হবে।’
ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে বলা হয়, সকাল থেকেই যানজট মাঝে মাঝে কমে, আবার মাঝে মাঝে বাড়ছে। তবে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে রাস্তায় যানজট স্বাভাবিক হয়ে আসবে। যাত্রী ও অফিস থেকে ঘরমুখো মানুষের চাপ যেন একটু বেশিই।
জামালখান এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী সাফায়েত বলেন, পুরো জামালখান এলাকায় যানজট। বিশেষ করে লালখান বাজার দিয়ে প্রবেশ করতে দীর্ঘ যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে।
এদিকে টাইগারপাসে বাসস্টপেজে যাত্রীরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকলেও বাস আসার কোনো নাম নেই। আহাদ নামে একজন যাত্রী বলেন, ব্যাংকে যাবো বলে ২ ঘন্টা ধরে দাড়াই আছি। লোকাল বাস আসছে না।
আন্দরকিল্লা জোনের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মোহাম্মদ নুরুল আবছার জানান, লকডাউনের খবরে রাস্তায় এমনিতে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে গেছে। মানুষ ৭ দিনের কাজ শেষ করতে বেড় হয়েছে। এছাড়া সব প্রতিষ্ঠানের ছুটি একই সময় হওয়ায় যানজট লেগে গেছে। তারপরও যানজট নিরসনে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। এ যানজট বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই।
এছাড়াও বিভিন্ন মূল সড়কে যানজট থাকায় পার্শ্ববর্তী অলিগলিতে প্রাইভেট কার ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ে ঢুকে পড়ায় সেখানেও যানজটের সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি।
এদিকে, রবিবার জাতীয় সংসদে অধিবেশনকালে করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির প্রেক্ষাপটে পরিস্থিতি মোকাবিলায় কঠোরভাবে লকডাউন মানতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর আগে , সারা দেশে সোমবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন ঘোষণা করছে সরকার। রবিবার লকডাউন দিয়ে প্রজ্ঞাপনও জারি হয়েছে। সোমবার থেকে কার্যকর হবে লকডাউন। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকবে গণপরিবহনও।