বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
বিশ্বের সবচেয়ে দামি গাড়ি চেপে যিনি ঘোরেন, যাঁর বাড়িতে পরিচারিকাদের মাইনেই লাখ লাখ টাকা, তাঁকেও একটা সময় প্রচণ্ড কষ্ট করতে হয়েছে। গরিব পরিবার, পকেটে পয়সা নেই, খিদের জ্বালায় বেঁচে যাওয়া খাবারও ভিক্ষে চাইতে হয়েছে। তাঁর নাম শুনলে এখন চমকে উঠবেন। হ্যাঁ, তিনি পর্তুগিজ সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। কোটি কোটি টাকার মালিক তাঁর অতীতের লড়াইয়ের দিনগুলো ভোলেননি। সম্প্রতি পিয়ার্স মরগানকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ছোটবেলার সেই দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করেছেন সিআর৭।
গরিব পরিবারের জন্ম রোনাল্ডোর। বাবা মালির কাজ করেন। মা লোকের বাড়ি রান্না করেন। বাবা মদ্যপ, মদের নেশায় বুঁদ থাকতেন সর্বক্ষণ। সংসার টানতে হত মাকেই। অনেক ভাইবোনের সঙ্গে ছোট্ট একটা ঘরে থাকতে হত রোনাল্ডোকে। ফুটবলের নেশা ছিল মারাত্মক। একদিন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। যোগ দেন লিসবন ইউথ অ্যাকাডেমিতে। তখন বয়স ১২ বছর। সেখানকার একটি হস্টেলে থাকতেন পতুর্গিজ সুপারস্টার। পকেটে পয়সা নেই, এদিকে রাত হলেই খিদেটা চাগাড় দিত। প্রতি রাতে কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে লুকিয়ে ম্যাকডোনাল্ডের দরজায় কড়া নাড়তেন। বেঁচে যাওয়া বার্গার চাইতেন। দরজা খুলে অতি গোপনে বেরিয়ে আসতেন এক মহিলা। তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন মেয়েও থাকত। রোনাল্ডো আর তাঁর বন্ধুদের পেট ভরে খাবার খাওয়াতেন তিনজন।
অতীতের সেই দিনগুলো পেরিয়ে এসেছেন পর্তুগিজ তারকা। এখন তিনি ফুটবলের দুনিয়ার সুপারস্টার। তাঁকে একঝলক দেখতে কোটি কোটি টাকা খরচ করতে পারেন ভক্তেরা। নাম-যশ-অর্থের শিখরে থাকলেও ছোটবেলার সেই দিনগুলো ও তিন মহিলাকে ভোলেননি রোনাল্ডো। তিনজনের মধ্যে বয়স্কা ছিলেন এডনা। তিনিই মায়ের মতো আগলে কিশোর রোনাল্ডোকে খাবার খাওয়াতেন। প্রায় প্রতিদিনই রাতে এডনার কাছে গিয়ে বার্গার খেয়ে আসতেন। পিয়ার্স মরগানকে রোনাল্ডো বলেছেন, পরবর্তী সময়ে এডনা ও বাকি দুই মহিলাকে অনেক খুঁজেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই ম্যাকডোনাল্ডের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাই তাঁদের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
এতদিনে এডনা ও বাকি দু’জন ক্যারিনা ও ইমানুয়েলের খোঁজ পেয়েছেন রোনাল্ডো। এডনাকে বুকে জড়িয়ে ধরে প্রাণ ভরে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সিআর৭। ১২ বছরের সেই ছোট্ট ছেলেটা আজ দুনিয়া কাঁপানো ফুটবলার। রোনাল্ডোকে সামনে পেয়ে আপ্লুত এডনাও। চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি। তাঁর বলিরেখা পড়া মুখে আনন্দ ঝড়ে পড়ছে। তিনি যেন এক গর্বিত মা, এতদিন পরে সন্তানকে ফিরে পেয়েছেন। এডনা বলছেন, “আমাকেও যে কেউ মনে রাখতে পারে, সেটা ভেবেই অবাক হচ্ছি। সেদিনের সেই বাচ্চা ছেলেটাই আজ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, এত বছর পরেও আমাকে মনে রেখেছে। আমি কৃতজ্ঞ।”