Home সারাদেশ রৌমারীর ৯১ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী

রৌমারীর ৯১ গ্রামের মানুষ পানিবন্দী


কুড়িগ্রাম থেকে নয়ন দাস : কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ইজলামারী সড়ক উপচে নতুন করে ১১টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ফলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৯১টি গ্রামের প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ পানিবন্দী।

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, পানি বাড়ায় হলহলী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১১টি বাড়ি। পানিতে তলিয়ে গেছে প্রায় দুই শতাধিক বাড়ি। এদের মধ্যে অনেকেই উঁচু স্থানে তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ চৌকি উঁচু করে বাড়িতেই আছেন। যে হারে পানি বাড়ছে তাতে করে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছেন পানিবন্দী এলাকার মানুষেরা। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়,উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায় এখন শুধু পানি আর পানি। বসতভিটা তলিয়ে যাওয়ায় উঁচু স্থানে চলে গেছেন অনেক পরিবার। কেউ আবার কষ্ট মেনে নিয়ে ঘরের চৌকি উঁচু করে আঁকড়ে আছেন নিজের বসতভিটা। আবার পানি বাড়ায় সবকিছু হারিয়ে অন্যের জমিতে ঘরের চাল দুটো খাঁড়া করে তার মধ্যে বসবাস করছেন বসতভিটা হারানো পরিবারগুলো।

চরশৌলমারী ইউনিয়নের পূর্ব কাজাইকাটা পাড়া গ্রামের মুক্তার ফকির (৭০) বলেন, ‘বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হলহলী নদীর ভাঙনে আমার বসতভিটা বিলীন হয়ে গেছে। বৃষ্টিতে ঘরের জিনিসপত্র সব নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যের উঁচু জমিতে কোনো রকমে আশ্রয় নিয়ে অনেক কষ্টে আছি। এখন পর্যন্ত কোনো জন প্রতিনিধি আমাদের খোঁজ নেননি।’ একই কথা বলেন, বসত ভিটা হারানো ওই গ্রামের সূর্য মিয়া (৬৬), নবাব আলী (৬২), ফুল চান (৪০), আব্দুল শেখ (৩৬), শাহাজামাল (৪০), সোহেল পাইক (৩৫), ছাবেদ আলী (৫৫) শুকুর আলী (৫৪)।

বন্দবেড় ইউনিয়নের পালেরচর গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘বন্যার পানিতে ঘরদোর সব তলিয়ে গেছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে খুব কষ্টে আছি। ঘরের জিনিস পত্র হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে পানির ওপরে বসবাস করছি। কি করব? ভোটের সময় তো অনেক জন দরদি পাওয়া যায়, বিপদের সময় কেউ খোঁজ নেন না। পানির বাড়তে থাকলে বড় ধরনের বন্যা হতে পারে। তখন আর শত কষ্টেও বাড়িতে থাকা হবে না, অন্য কোথাও আশ্রয় নিতে হবে।’ বন্দবেড় ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল কাদের সরকার বলেন, ‘প্রায় শতাধিক বাড়িতে হাঁটু থেকে কোমর পানি। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ২৫টি গ্রাম। উপজেলা প্রশাসনের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। নদীভাঙা পরিবার গুলির জন্য ত্রাণ সামগ্রীর ৩১ প্যাকেট পেয়েছি। সেগুলো বিতরণ করা হয়েছে। শুনেছি বানভাসিদের জন্য ৩ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ হয়েছে। এখনো কোনো চিঠি পাইনি।’

রৌমারী সদর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে প্রথম দফার বন্যার পানি না শুকাতেই আবারও পাহাড়ি ঢলে ৩০টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। রাস্তা ঘাট তলিয়ে গেছে। বাড়িতে পানি উঠেছে প্রায় ২৫টি বাড়িতে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করছি। যেসব বাড়িতে পানি উঠেছে তাদের জন্য শুকনা খাবার চিড়া, মুড়ি, চিনি, লবণ বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম রাসেল বলেন, ‘ভারী বর্ষণে ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৭ হাজার মানুষ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বক্ষণ মনিটরিং করা হচ্ছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ সমন্বয় কক্ষ চালু করা হয়েছে। যেসব বাড়ি তলিয়ে গেছে তাদের শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত থাকবে।’