*অফিস করতে গেলেই বেতনের টাকা শেষ
*১ সপ্তাহ ছুটি মনে করার অবকাশ নেই: সিটি মেয়র
*রিকশা ভাড়া দিতে দিতে পকেট ফাঁকা, কাল কি হবে?
*লকডাউন কার্যকরে মাঠে রয়েছেন ১০ ম্যাজিস্ট্রেট: জেলা প্রশাসক
নাজমুল হোসেন
চট্টগ্রাম: মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে ৭ দিনের লকডাউন। দোকানপাট বন্ধ থাকলেও সীমিত পরিসরে ব্যাংকসহ বিভিন্ন অফিস খোলা রয়েছে।
নগরীর ব্যস্ততম বহদ্দারহাট, ২ নম্বর গেট, জিইসি, আগ্রাবাদ, ইপিজেড, নিউ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চকবাজার, বাকলিয়া, মুরাদপুর, অলংকার, বড়পুলসহ নগরীর সকল এলাকাতেই লকডাউনের প্রভাব পডেছে। প্রথম দিনে নগরীর সড়কে গণপরিবহন না থাকলেও চলতে দেখা গেছে রিকশা, সিএনজি, প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলসহ অন্যান্য যানবাহন। এতে সাধারণ মানুষের যেমন চরম ভোগান্তির পাশাপাশি যারা বিভিন্ন কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন গণপরিবহনের অভাবে তাদের কর্মস্থলে যেতে দেরি হয়েছে।
দিনের শুরুতে রাস্তায় যান চলাচল কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বাড়তে থাকে। কেউ অফিস, কেউ বাজারে কেউবা হাসপাতালে যাচ্ছেন, এতে রাস্তাঘাটে জনসমাগম দেখা গেছে। কেউ কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে বের হলেও অনেককে তা অমান্য করতে দেখা গেছে। যার ফলে লকডাউনে সরকারি নির্দেশনা কঠোরভাবে মানা হচ্ছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অনেকেই।
ইপিজেড এলাকায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি জানান, লকডাউনের প্রথম দিন আজ। অফিস বন্ধ দেয়নি। অফিসে কিভাবে যাব, তা বুঝতে পারছি না। কোম্পানি এ লকডাউনের সুযোগে বেতন আরও কমাবে। আর এদিকে গাড়ির যে অবস্থা দেখছি, আমরা অফিস করতে গেলেই বেতনের টাকা শেষ হয়ে যাবে। কিভাবে কি করবো বুঝতে পারছি না। তিনি আরো বলেন, মালবাহী গাড়ি চললেও বাস কেন চলে না।
জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান জানান, নগরে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট লকডাউন কার্যকর করতে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া নগরের তিনটি প্রবেশপথে বিআরটিএ’র ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্ব পালন করছেন।
গনমাধ্যমকর্মী আকবর হোসেন রবিন বলেন, লকডাউনের প্রথম দিনে রিকশা ভাড়া দিতে দিতে পকেট ফাঁকা। কাল কি হবে? চোখের সামনে যা দেখি সবকিছু ঝাপসা!
সিএনজি চালক বলেন, লকডাউন থাকলেও সকালেই সিএনজি নিয়ে বের হইছি। বের না হইলে খাবো কি? এখন পর্যন্ত কয়েকটা ট্রিপ পাইছি। বাধা না আসলে সিএনজি চালাতে থাকবো।
প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণের রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড গড়ছে দেশ। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। ফেব্রুয়ারিতে ২ শতাংশের ঘরে থাকা সংক্রমণের হার লাফিয়ে বাড়তে বাড়তে এখন ২৩ শতাংশে ওঠেছে।
নগর পুলিশের উপকমিশনার (এসবি) মনজুর মোরশেদ বলেন, সরকারি নির্দেশনা মতে লকডাউন কার্যকরে আমাদের সদস্যরা টহল মাইকিং ও সচেতনতা কার্যক্রম চালাচ্ছে। এছাড়া মোড়ে মোড়ে তল্লাশি, নগরের প্রবেশমুখে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। আমরা মানুষকে বুঝিয়ে লকডাউন কার্যকরের চেষ্টা করছি।
আগ্রাবাদ ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, গণপরিবহন না চললেও সড়কে প্রচুর পরিমাণে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল ও রিকশা চলছে। তবে আমরা সবার স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে জোর দিচ্ছি।
এছাড়া নির্মাণকাজ চালু রাখায় শ্রমিকদের পায়ে হেঁটে ও রিকশায় যেতে হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। অভ্যন্তরীণ পথে বিমান চলাচল বন্ধ থাকায় বিমানবন্দরমুখী সড়কে নেই যাত্রীদের যাতায়াত। বহদ্দারহাট, দামপাড়া, কদমতলী, অলংকার বাস টার্মিনাল ও রেল স্টেশনে নেই টিকিট প্রত্যাশীদের ভিড়। ১১ এপ্রিল পর্যন্ত যাত্রীবাহী সব ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক।
খাবারের দোকান ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় শুধু খাবার বিক্রি ও সরবরাহ করা যাচ্ছে। তবে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বসে খাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পাশাপাশি সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত অতি জরুরি কাজ (ওষুধ কেনা, নিত্যপণ্য কেনা, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন ও সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া বাড়ির বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ও চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের কার্যক্রম চলছে সীমিতভাবে। এই সময়ে অন্যান্য নিম্ন আদালতের কার্যক্রম না চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যদিও, লকডাউনের বিরোধিতা করে দোকানপাট খোলা রাখার দাবিতে রবিবার নগরীর শপিং মলের ব্যবসায়ী ও কর্মচারিরা মানববন্ধন করলেও তাতে সাড়া মিলেনি। ফলে বন্ধই রাখতে হচ্ছে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। স্বাস্থ্যবিধি মেনে মুদি দোকানগুলোতে কেনা-বেচা চলছে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে নেই মানুষের আনাগোনা।
সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, লকডাউনকে এক সপ্তাহ ছুটি মনে করার কোনো অবকাশ নেই, এটা বাধ্যবাধকতা। আমরা আগে অবহেলা করেছি। এবার অবহেলার সুযোগ নেই। নগরের পরিচ্ছন্নতা, আলোকায়ন, রাস্তার প্যাচওয়ার্ক চলমান থাকবে এবং কর্পোরেশনের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা সেবাগুলো চালু রাখা হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতনতামূলক মাইকিং, লিফলেট, বিনামূল্যে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে মেয়র নগরের ৪১টি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের প্রতি আহ্বান জানান।