সুযোগ না থাকার পরও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সরাসরি তালিকাভুক্তির চেষ্টা চালানো বেস্ট হোল্ডিংসে (লা মেরিডিয়ান হোটেল) রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের বিনিয়োগের যৌক্তিকতা জানতে চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। স্বল্প আয়ের বেস্ট হোল্ডিংসের প্লেসমেন্ট শেয়ার ৬৫ টাকা দরে কেনার অনুমোদন দেওয়ায় রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভার কার্যবিবরণীও চেয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। গতকাল রাষ্ট্রায়ত্ত এই চার ব্যাংককে বেস্ট হোল্ডিংসে বিনিয়োগের পরিপূর্ণ চিত্র পাঠানোর নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে ওই বিভাগ থেকে।
বেস্ট হোল্ডিংসের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, বেস্ট হোল্ডিংসের প্লেসমেন্ট শেয়ারে সরকারি সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংক মোট এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। এর মধ্যে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক ৫০০ কোটি টাকা করে বিনিয়োগ করে। আর রূপালী ব্যাংক করে ৩০০ কোটি টাকা। বেস্ট হোল্ডিংসের ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের প্রতিটি শেয়ার ৬৫ টাকায় কেনে সরকারি ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রে প্রতি শেয়ারে প্রিমিয়াম দেওয়া হয়েছে ৫৫ টাকা। শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) উল্লেখযোগ্য না হলেও বড় অংকের প্রিমিয়ামে এই কোম্পানির শেয়ার কেনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ।
চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক বেস্ট হোল্ডিংসের ২৯ দশমিক ৫৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের শেয়ার রয়েছে ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, জনতা ব্যাংক ৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, অগ্রণী ব্যাংক ৬ দশমিক ৬২ শতাংশ এবং রূপালী ব্যাংকের ৫ দশমিক ৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে বেস্ট হোল্ডিংসে।
প্রসঙ্গত, সরাসরি তালিকাভুক্তির বিধি অনুযায়ী, শুধুমাত্র সরকারি কোম্পানি স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্ত হতে পারে। বেসরকারি কোম্পানিগুলোর জন্য এমন সুযোগ না থাকায় এ সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ আইন থেকে অব্যাহতি দিয়ে বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডকে স্টক এক্সচেঞ্জে সরাসরি তালিকাভুক্ত করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। পরবর্তী সময়ে সেই চিঠির কার্যকারিতা নিজেই স্থগিত করেন অর্থমন্ত্রী। আর গতকাল আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর ওই কোম্পানিতে বিনিয়োগের যৌক্তিকতা জানতে চেয়ে চিঠি পাঠানো হলো। এছাড়া বেস্ট হোল্ডিংসের ইস্যু ম্যানেজার হিসেবে আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের নিয়োগের বিস্তারিত জানতে চাওয়া হয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের ওই চিঠিতে।
পর্যালোচনায় দেখা যায়, বেস্ট হোল্ডিংস মাত্র এক বছরের ব্যবধানে পরিশোধিত মূলধন ৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা থেকে ৮৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত করে। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে এ কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) মাত্র ১ টাকা ৩৫ পয়সা। কোম্পানিটি ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত প্লেসমেন্ট শেয়ার ইস্যু করার মাধ্যমে ৪৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বেস্ট হোল্ডিংসের পরিশোধিত মূলধন ছিল ৮ কোটি ৮৩ লাখ ১০ হাজার টাকা, যা হঠাৎ করেই ২০২০ সালের ৩০ জুন শেষে ৮৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত হয়। মোট পরিশোধিত মূলধনে উদ্যোক্তাদের অংশ ৪৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ দেখানো হয়েছে।
বেস্ট হোল্ডিংসের প্রসপেক্টাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের তুলনায় এর বিক্রি বা টার্নওভার খুবই কম। ২০১৬-১৭ হিসাব বছরে বেস্ট হোল্ডিংসের রেভিনিউ ছিল ২০৭ কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ হিসাব বছরে ২৮৪ কোটি টাকা হয়। এ সময় কোম্পানিটি নিট মুনাফা দেখিয়েছে ৯৩ কোটি টাকা। নিট চলতি সম্পদের মানও ঋণাত্মক, যা সরাসরি তালিকাভুক্তির শর্তের পরিপন্থী। ২০১৯-২০ হিসাব বছরে সমন্বয়ের পর কোম্পানির ইপিএস মাত্র ১ টাকা ৩৫ পয়সা, যা আগের হিসাব বছরে ছিল ৩ টাকা ৮৩ পয়সা।
২০২০ সালের ১২ নভেম্বর বেস্ট হোল্ডিংস এসইসির কাছে সরাসরি তালিকাভুক্তির মাধ্যমে ২৮৩ কোটি টাকা সংগ্রহের আবেদন জানায়। এজন্য ১০ টাকা অভিহিত মূল্যের ৪ কোটি ৩৫ লাখ শেয়ার ৬৫ টাকা দরে (৫৫ টাকা প্রিমিয়ামসহ) ইস্যু করার জন্য আবেদন করেছিল।
২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর এসইসির জারি করা নির্দেশনা অনুযায়ী, সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানিকে সরাসরি তালিকাভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে গত সেপ্টেম্বরে পাঠানো অর্থমন্ত্রীর ওই চিঠি ও বেস্ট হোল্ডিংসে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের বিনিয়োগকে ‘সরকারি মালিকানার তকমা’ দেখিয়ে সরাসরি তালিকাভুক্তির আয়োজন করেছিলেন ডিএসইর একজন প্রভাবশালী শেয়ারহোল্ডার পরিচালক।
-দেশ রূপান্তর