Home কৃষি লেবু চাষে আয় বছরে ৫০ লাখ টাকা

লেবু চাষে আয় বছরে ৫০ লাখ টাকা

মোঃ সামাউল ইসলাম

মনোজ কুমার সাহা, টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ, বাসস): ১২ মাসি সিডলেস সুগন্ধি লেবু বারি লেবু-৪। শরবত ও সালাদে এ জাতের লেবু বেশ জনপ্রিয়। ফলে বাণিজ্যিকভাবে এ লেবুর চাষ দেশের চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেকেই লাভবান হচ্ছেন এ জাতের লেবুর চারা উৎপাদন করে।

তাদের মধ্যে অন্যতম একজনর হলেন গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কদমপুর গ্রামের সফল কৃষক মোঃ সামাউল ইসলাম (৫৫)। তিনি লেবু চাষের পাশাপাশি চারা উৎপাদন করে বছরে কমপক্ষে ৫০ লাখ টাকা আয় করছেন।

সরেজমিনে সামউলের লেবু বাগানে গিয়ে দেখা গেছে প্রতিটি গাছে থোকায় থোকায় প্রচুর লেবু ধরেছে। এখান থেকে তিনি প্রতিদিন লেবু সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন। এছাড়া প্রতিটি লেবুগাছে তিনি গুটি কলম করেছেন। এ গুটি কলম থেকেই হচ্ছে চারা। চারা রোপণের ৩ মাসের মধ্যেই ফল ধরছে। তাই তার লেবুর চারা কিনে নিয়ে অনেকেই সিডলেস বারমাসি সুগন্ধি লেবু বারি লেবুর-৪ চাষাবাদ করছেন। এ লেবুর বাণিজ্যিক বাগান করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন।

সফল কৃষক মোঃ সামাউল ইসলাম বলেন, গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের সহযোগিতায় ৩ বছরে আগে আমি কদমপুর গ্রামের ১৬ একর জমি লিজ নিয়ে সিডলেস বারমাসী বারিলেবুর-৪ চাষাবাদ শুরু করি। আমরা বাগানে ১২ হাজার লেবু গাছ আছে। প্রথম বছর থেকেই আমি লেবুর ফলন পেতে শুরু করি। ফাল্গুন, চৈত্র ও বৈশাখ মাসে এ লেবুর চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। তারপরও সারাবছর আমি লেবু বিক্রি করি।

আমার বাগানের লেবুর ফ্লেভার ভালো লেবুতে কোন বিঁচি নেই। এছাড়া এ লেবুতে প্রচুর রস আছে। লেবুটি সালাদ ও শরবতে বেশি ব্যহৃত হয়। এ কারণে বাজারে আমার লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।
এছাড়া আমি লেবু গাছে গুটি কলম করে লেবুর চারা উৎপাদন করি। প্রতিটি লেবু গাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ২০ থেকে ৩০টি চারা করা যায়। প্রতিটি চারা ২৫ থেকে ৩০ টাকা দরে বিক্রি করি। বর্ষাকালে চারার চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে।

আমি দশের বিভিন্ন জেলায় ও সৌদি আরব, বাহরাইন, কাতার, মলয়েশিয়ায় লেবুর চারা বিক্রি করেছি। আমার চারা রোপণের ৩ মাসের মাথায় ফলন পাওয়া যায়। আমার এ চারা দিয়ে দেশে অন্তত ৩০ টি বাণিজ্যিক লেবুর বাগান গড়ে উঠেছে। এছাড়া এখান থেকে লেবুর চারা কিনে নিয়ে অনেকে বাড়িতে রোপণ করেন। লেবুর বাগান করে আমি লাভবান হয়েছি।

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড.এম.এম কামরুজ্জামান বলেন, মোঃ সাউল ইসলাম একজন পরিশ্রমী ও উদ্ভাবনী প্রতিভাবান সফল কৃষক। তিনি ৩ বছরে আগে আমাদের উৎসাহে সিডলেস বারমাসী বারি লেবু-৪ চাষ শুরু করেন। আমরা তাকে চারা, সার, ছত্রাক নাশক, প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তিনি এখান থেকে লেবু ও লেবুর চারা বিক্রি করে ভালো আছেন।

গোপালগঞ্জ কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের ঊর্ধ্বতন জানান, লেবু প্রতিটি গাছের ডালে থোকায় থোকায় ফলন দেয়। ৩৬৫ দিনে এ জাতের একটি লেবু গাছ ৫০০ থেকে ৬০০টি লেবু ফলন দিতে সক্ষম। তাই প্রতিদিন গড়ে একটি গাছ থেকে ২টি লেবু সংগ্রহ করা যায়। লেবুটি সুগন্ধযুক্ত তাই শরবত ও সালাদে এ লেবু সবচেয়ে বেশি সমাদৃত।

সারাদেশে বারমাসী এ লেবুর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তাই এ লেবু চাষ করে সামাউল লাভবান হয়েছেন। এছাড়া তিনি লেবুর চারা উৎপাদন করে বিক্রি করছেন। এতে তার বেশ টাকা রোজগার হচ্ছে । তিনি লেবু বাগান সম্প্রসারণে অবদান রাখছেন।

কদমপুর গ্রামের কৃষক মোঃ ওবায়দুর রহমান (৫২) বলেন, সামাউল একজন প্রতিভাবান ও প্ররিশ্রমী কৃষক। তিনি ১৫ বছর আগে যশোর থেকে গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে আসেন। তিনি এখানে কলা, পেয়ারা, মাল্টা, কুল চাষে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেন। এখন লেবুতে বাজিমাত করেছেন। তিনি একই জমিতে বারবার এক জাতীয় ফসল আবাদ করেন না। তাকে আমাদের এলাকার অনেক কৃষক অনুকরণ করে লাভবান হচ্ছেন।

মুকসুদপুর উপজেলার গ্যাড়াখোলা গ্রামের শামীম বলেন, আমি সামাউলের কাছ থেকে লেবুর চারা নিয়ে ১ বিঘা জমিতে লেবুর নতুন বণিজ্যিক বাগান করেছি। আমি সামাউলকে অনুকরণ করি। তাকে অনুকরণ করে আমি সফল হবই।