বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
সিলেট: শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ হত্যাকাণ্ডের সময় সঙ্গে থাকা বান্ধবী মার্জিয়া ঊর্মিকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এসময় সে জানায়- কিলিং মিশনে মাস্ক পরা ৩ জন ছিলেন।
তবে ঘটনার রহস্য উদঘাটনে বিশ্ববিদ্যালযে গঠিত কমিটির একজন জানিয়েছেন- ঊর্মি তার মুঠোফোনের সমস্ত কল লিস্ট মুছে ফেলেছেন।
ঘটনার পর সিলেট মহানগরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন শাবি’র বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ও নেত্রকোনা সদর উপজেলার বাসিন্দা- বুলবুলের বান্ধবী ঊর্মি। কিন্তু মঙ্গলবার বিকেলে তিনি ওই হাসপাতাল থেকে হঠাৎ ‘উধাও’ হয়ে যান। সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজ করেও তার সন্ধান পাননি আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সহপাঠীরা। এরপর পুলিশ মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮ টার তার সন্ধান দিকে পায়। একটি সূত্র জানায়- জালালাবাদ থানার বাধাঘাট এলাকা থেকে তাকে পুলিশ ‘আটক’ করে নিয়ে আসে। তবে পুলিশ বলছে- ঊর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলেই ছিলেন। পরবর্তীতে ওই ছাত্রীকে নিয়ে ঘটনাস্থল- গাজিকালুর টিলায় যায় পুলিশ।
এসময় ঊর্মি পুলিশকে জানায়- মাস্ক পরা তিন লোক বুলবুলকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। তথ্যটি সংবাদমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য শাবির ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক আমিনা পারভীন। তিনি জানান, ঘটনার পর ঊর্মি তার ব্যবহৃত মুঠোফোনের কল লিস্ট চেক করা হলে দেখা যায়- সবকিছু তিনি মুছে (ডিলিট করে) ফেলেছেন।
আমিনা পারভীন আরও বলেন- মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে তাকে আমরা হাসপাতালে দেখে এসেছি। এরপর খবর পাই- সে হাসপাতাল থেকে চলে এসেছে। তাকে হাসপাতালের ছাড়পত্রও দেওয়া হয়নি। হাসপাতাল থেকে চলে আসার অনেকক্ষণ পর পুলিশ সদস্যরা তার সন্ধান পান এবং প্রক্টরের কার্যালয়ে নিয়ে যান। পরে রাত পৌনে ৮টার দিকে সেখান থেকে তাকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত তারা ছিলেন। পরে তাকে আবার প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। পরে সেখানে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।
বুলবুলের বান্ধবীর বরাত দিয়ে তিনি বলেন, বুলবুল আর সে ঘটনাস্থলে বসেছিলেন। হঠাৎ করে ওই স্থানে তিনজন লোক আসেন। তাদের সবার মাস্ক পরা ছিল। তারা এসে বুলবুলকে একটু দূরে ডেকে নিয়ে যায়। এসময় ওই ছাত্রী অন্যদিকে থাকিয়ে কাউকে ডাকতে চেষ্টা করছিলেন। তারপর বুলবুলের দিকে তাকালে দেখেন, বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা চলে যাচ্ছে।
আমিনা পারভীন আরও বলেন, ওই ছাত্রীর মোবাইলের কল লিস্ট চেক করেছি আমরা। সে সব কল লিস্ট ডিলিট করে দিয়েছে। এখন প্রশাসন ঊর্মিকে নজরদারিতে রাখছে।
ওই ছাত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সময় সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) উপ-কমিশনার আজবাহার আলী শেখ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ইশরাত ইবনে ইসমাইল উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সোমবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে গাজিকালুর টিলার পাশে ছুরিকাঘাতে খুন হন ২২ বছর বয়সী শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী বুলবুল আহমেদ। বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থীকে যখন ছুরিকাঘাত করা হয় তখন টিলায় তার সঙ্গে ছিলেন বান্ধবী ঊর্মি। ছুরিকাঘাতে আহত বুলবুলকে ওসমানী হাসপাতালে আনা হলে ঊর্মির সেখানে যান। কিছুক্ষণ পর বুলবুল মারা যান।
এ ঘটনায় বার বার অজ্ঞান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সোমবার রাতেই নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ঊর্মিকে ভর্তি করে। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মঙ্গলবার বিকেলে হুট করে হাসপাতাল থেকে ‘উধাও’ হয়ে যান তিনি। পরে পুলিশ শাবির হলে তার সন্ধান পায়।
এদিকে, শাবি শিক্ষার্থী বুলবুল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জালালাবাদ থানায় একটি মামলা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেনের করা মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে পুলিশ সন্দেহভাজন তিন বহিরাগতকে আটক করেছে।
হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আখতারুল ইসলামকে।
এদিকে বাবার কবরের পাশেই চিরনিদ্রায় শায়িত হয়েছেন বুলবুল আহমেদ। মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে বুলবুলের মরদেহ নরসিংদীর সদর উপজেলার চিনিশপুরের নন্দীপাড়া গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায়।
মাগরিবের নামাজের পর সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক-সংলগ্ন ভেলানগরের মাইক্রোস্ট্যান্ডে দ্বিতীয় দফা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় স্থানীয় পাঁচ শতাধিক মানুষ জানাজায় অংশ নেন। পরে রাত পৌনে ৯টায় মাধবদীর খড়িয়া এলাকায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবার কবরের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।