মিনা বিশ্বাস
যশোর: কর্মব্যস্ত জীবনে যত ব্যস্ততাই থাকুক না কেন, উৎসবের সাজে বারো হাতের শাড়িতেই যেন নারী হয়ে ওঠে সম্পূর্ণা। ঠিক কবে থেকে এদেশে শাড়ি পরার প্রচলন শুরু হয়েছে তা নিয়ে মতভেদ থাকলেও শাড়িতে যে বাঙালি নারীর শ্বাশত রূপ প্রকাশ পায় তা নিয়ে কারো মাঝে হয়তো মতের অমিল হবে না।
সভ্যতার চরম উৎকর্ষের এ সময়ে মানুষের ব্যস্ততা যখন দিন দিন বেড়েই চলেছে। তখন ব্যস্ততার এ সময়ে এসেও উৎসব মানেই নারীর শাড়ির সাজ। তাই যশোরের ঈদ বাজারে শুরু হয়েছে শাড়ির বেচাকেনা। শাড়ি প্রিয়রা ছুটছেন বাজারে, শাড়ি সংগ্রহের টানে। দুয়ারে কড়া নাড়ছে দু দুটি বড় উৎসব। মাত্র একদিন পরেই বাঙালির সার্বজনীন উৎসব পহেলা বৈশাখ। তার মাত্র ৮দিন পরেই ঈদুল ফিতর। পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে উজ্জ্বল বর্ণ প্রাধান্য পেয়েছে শাড়িতে। তেমনি ঈদের শাড়িতে জমকালো আভা। ঈদ বাজারে যশোরে বিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকার শাড়িও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। সকাল ৯টার পরেই খোলা হচ্ছে বিভিন্ন বিপনীবিতান। এসব বিপণীবিতান খোলা থাকছে রাত ১২টা পর্যন্ত। শহরের কাপুড়িয়া পট্টি, হাটচান্নি মার্কেট, সিটি প্লাজাসহ বিভিন্ন প্রান্তের বিপণীবিতানে বিক্রেতারা শাড়ির বিক্রি নিয়ে সন্তুষ্ট না হলেও মুজিব সড়কের ফ্যাশন হাউজগুলোতে শাড়ির বিক্রি জমে উঠেছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
বলিউডের আলোচিত গাঙ্গুবাঈ সিনেমায় অভিনেত্রী আলিয়া ভাট পরিহিত শাড়ি এসেছে বাজারে। যশোরের সিটি প্লাজায় পাওয়া যাবে জর্জেট ও সিল্কের ওপরে বাহারি ডিজাইনের দু ধরনের গাঙ্গুবাঈ শাড়ি। জমিনে প্রিন্ট আর কারচুপির কাজ, দু ধারের পাড়ে পুঁতি আর চুমকির নকশা এ শাড়িকে অন্য শাড়ি থেকে আলাদা করেছে। এখানে আরও পাওয়া যাবে ঈদ উপলক্ষে নতুন আসা ঘিসা কাতান শাড়ি। কাপুড়িয়া পট্টির আটপৌরেতে পাওয়া যাবে হারানো ঐতিহ্যর রাজশাহী সিল্কের আদলে তৈরি সুরাট সিল্ক শাড়ি। আরও পাওয়া যাবে নতুন আসা পঞ্চপল্লী শাড়ি।
সিটি প্লাজায় শাড়ির দাম সর্বনিম্ন ৬০০ থেকে সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকার মধ্যে । এসব শাড়ির মধ্য টাঙ্গাইল শাড়ি ৬০০টাকা। গাঙ্গুবাঈ ৬,০০০ থেকে ১৫,০০০টাকা। কাঞ্চিভরম ও কাঞ্জিলাল ৩,০০০ থেকে ২০,০০০টাকা। ভোজপুরি ৩,০০০ থেকে ১০,০০০টাকা। ঘিসা কাতান ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০টাকা। মণিপুরি ২,৫০০ থেকে ৪,৫০০টাকা। আড়ং শাড়ি ১,০০০ থেকে ৩,৫০০টাকা। কাপুড়িয়া পট্টির আটপৌরে তে শাড়ি পাওয়া যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০০০টাকার মধ্য। এখানে ইদকাত ও কাঞ্চিভরম শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ১৫,০০০ থেকে ৩০,০০০টাকায়। গাদোয়াল ২০,০০০ থেকে ৪০,০০০টাকা। ভোজপুরি সিল্ক ৫,০০০ থেকে ১০,০০০টাকা। পঞ্চপল্লী ২০,০০০ থেকে ৩০,০০০টাকা। মসলিন ৫,০০০ থেকে ১৫,০০০টাকা। টাঙ্গাইল সিল্ক ২০০০ থেকে ১২,০০০টাকা। মিরপুর কাতান ১০০০ থেকে ১০,০০০টাকা। হাফ সিল্ক ৭০০ থেকে ২০০০টাকা। জামদানী ৪০০০ থেকে ২০,০০০টাকা। সুরাট সিল্ক ১৫০০ থেকে ১০,০০০টাকা। হাটচান্নি মার্কেটে প্রিন্ট ও প্রাইড শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ টাকায়। বি প্লাস শাড়ি ১১০০ থেকে ৮,০০০টাকা। ব্লক শাড়ি ৭৮০ থেকে ১৫০০টাকা। জর্জেট ১২০০ থেকে ২,৫০০টাকা। জামদানী ২০০০ থেকে ৫,০০০টাকা। টাঙ্গাইল ৬০০ থেকে ২০০০টাকা। মুজিব সড়কস্থ ফ্যাশন হাউজ অঞ্জনস এর নিজস্ব ব্রান্ডের শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে সর্বনিম্ন ১৫৮০ থেকে সর্বোচ্চ ২১০০০টাকায়।
সিটি প্লাজার অধরা শোরুমের সত্ত্বাধিকারী ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ১৫ রোজার পর থেকে শাড়ির বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে বিক্রি এখনো সেভাবে জমে ওঠেনি। কাপুড়িয়া পট্টির আটপৌরে শোরুমের বিক্রেতা স্মৃতি বিশ্বাস বলেন, আজ বুধবার বিশ রোজা হলেও শাড়ির বিক্রি তেমন জমে ওঠেনি। অনেক ক্রেতাই আসছেন শাড়ি দেখতে, তবে সবাই কিনছেন না। হাটচান্নি মার্কেটের মায়ের আঁচল শোরুমের সত্ত্বাধিকারী অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, প্রথম রোজা থেকেই ক্রেতারা আসছেন, তবে সবাই কিনছেন না। মুজিব সড়কস্থ ফ্যাশন হাউজ অঞ্জনস্ এর বিক্রেতা আহাদুজ্জামান বলেন, আমাদের এখানে সারাদিনই শাড়ির বেচাকেনা হচ্ছে। ক্রেতাদের সুবিধার্থে রাত ১২টা পর্যন্ত শোরুম খোলা রাখতে হচ্ছে। চাঁদ রাত পর্যন্ত শাড়ির বিক্রি আরও ভালো হবে বলে আশা করছি।
শেখহাটির গৃহিনী রুকাইয়া তাসলীম বলেন, গতানুগতকিতার বাইরে কিছু খুঁজছি। এক্সক্লুসিভ কালেকশনের শাড়ি কিনবো, যা কারো সাথে মিলবে না। মোল্লাপাড়া থেকে আসা ক্রেতা সুরাইয়া বেগম বলেন, গাঙ্গুবাই সিনেমার নামে শাড়ি এসেছে বলে শুনেছি, ভাবছি ওটাই কিনবো। ক্রেতা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমি প্রতি ঈদেই শাড়ি কিনি। এবারেও তার ব্যতিক্রম নয়।