Home সারাদেশ শিকলে বন্দী মেহেরুলের জীবন

শিকলে বন্দী মেহেরুলের জীবন

শিকলবন্দী মেহেরুল

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি, বগুড়া: প্রত্যন্ত গ্রামের  রাস্তার পাশে টিনের ছাউনি দিয়ে এক চিলতে জীর্ণ একটি  ছাপড়া ঘর। যার এক পাশে টিনে বেড়া দেওয়া থাকলেও তিন দিকে নেই । সেই ঘরের খুঁটির সাথে দুই হাত আর পায়ে  শিকলে বাধা   লেপ কাঁথার স্তূপের  উপর বসে আছে মানসিক ভারসাম্যহীন মেহেরুল (৩৬)। খাওয়া দাওয়া, প্রসাব পায়খানা হয় সেখানেই। কনকনে শীত আর ঝড় বৃষ্টির মাঝে চলে তার  দিনের পর দিন ।

পরিবেশটা নির্মম, নিষ্ঠুরতার । শত কষ্ট  আর যন্ত্রণায়  মুক্তির  জন্য  চিৎকার করলেও  তা মিলে না পাগল মেহেরুলের । মেহেরুল দুপচেচিয়া উপজেলার ধরঞ্জী ইউনিয়নের ধরঞ্জী ( মাস্টারপাড়া)  গ্রামের হত দরিদ্র আব্দুল আলিমের  বড় সন্তান ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়,  মেহেরুলের কৈশোর জীবনের শেষ সময়ে তার মা মেরিনা বেগম মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। মেহেরুলও তার  মা মেরিনা বেগমের মতই হঠাৎ করে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে । দিন মজুর আব্দুল আলিম সাধ্যমত চিকিৎসা  করে মেহেরুলের । কিন্ত কোন ফল হয়নি।

এক পর্যায়ে  মেহেরুলের পাগলামিতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা। ফলে  শিকলে বাধা পড়ে তার জীবন। এরপরও দরিদ্র পিতা সহায় সম্বল বন্ধক রেখে ও ধার দেনা করে বিভিন্ন জায়গায় তার চিকিৎসা করান। চিকিৎসার পরে একটু সুস্থ্য হয়ে উঠলেও কিছুদিন  পর আবারও অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। মেহেরুলের চিকিৎসা করাতে  নিঃস্ব হয়ে পড়েন  আব্দুল আলিম। এক সময় কিছুটা সুস্থ্য হলে মেহেরুলকে  বিয়ে দেয়া হয় । বিয়ের পর বেশ ভালই ছিল মেহেরুল।

এসময় তার একটা পুত্র সন্তানও হয়। সন্তান বায়োজিদের বয়স যখন ৮ বছর তখন আবারো মেহেরুলের মাঝে দেখা মানসিক সমস্যা । ফলে নেমে আসে মেহেরুলের সংসারে অশান্তি ।  এবার ৮ বছর বয়সী শিশু সন্তান বায়েজিদ কে রেখে সংসার ছেড়ে  চলে যায় তার স্ত্রী।

আব্দুল আলিম বলেন, চোখের সামনে আদরের সন্তানের এমন অবস্থা দেখে কোন পিতা সহ্য করতে পারে ?  ডাক্তার বলেছে  দীর্ঘ মেয়াদী চিকিৎসা করালে সুস্থ্য হতে পারে। এজন্য অনেক টাকার প্রয়োজন।

আমি তো তার চিকিৎসা ও অন্যান্য ছেলে মেয়ের পিছনে খরচ করে এখন নিঃস্ব। কোথা থেকে  আর চিকিৎসা করাবো। তাই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি।মেহেরুলের ছোট ভাই আবু সাঈদ বলেন, ভাইয়ের চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাবা আজ নিঃস্ব। উন্নত চিকিৎসার জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।মেহেরুলের সৎ মা শাহেরা বেগম বলেন, মেহেরুল সৎ ছেলে হলেও নিজের সন্তানের মতই মানুষ করেছি। কখনও সৎ ছেলে ভাবিনি।

শিকলে বাধা  সন্তানকে দেখে খুব কস্ট  হয় । কিন্ত উপায় নেই । প্রতিদিনই  মলমূত্রের কাপড় পরিস্কার করতে কষ্ট হলেও  যখন ছেলেকে গরু ছাগলের মতো খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখি তখন বুকটা ছিঁড়ে যায়। টাকার অভাবে চিকিৎসা হচ্ছে না। উপযুক্ত চিকিৎসা করালে মেহেরুল সুস্থ হতে পারতো। এ জন্য সমাজের বিত্তবানরা কেউ সাহায্য করলে আমাদের ছেলেকে সুস্থ করতে পারতাম।