বাঙ্গালি সংস্কৃতির এক বিশেষ উপাদান শীতলপাটি। বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী এক শিল্পের নিদর্শন হচ্ছে শীতলপাটি। শীতল পাটির নামের মধ্যেই এর গুণ নিহিত। এর বৈশিষ্ট্য গরমে ঠান্ডা অনুভূত হয়। গুল্ম জাতীয় এক ধরণের মুর্তাগাছের বেত দিয়ে তৈরি মসৃন মাদুরের নাম শীতলপাটি। প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি হওয়ায় শীতলপাটি স্বাস্থ্যসম্মত। নয়নাভিরাম বৈপরীত্যে বুননের সুক্ষ্ণ ছিদ্র দিয়ে ব্যবহারকারীর শরীরের ঘাম শুষে নিয়ে অঙ্গ শীতল করে বলে এর নাম শীতল পাটি। প্রচন্ড গরমে এ পাটির শীতল স্পর্শ ব্যবহারকারীর দেহ ও মনে আরামদায়ক অনুভূতি এনে দেয়। শহরে শো-পিস এবং গ্রামে এটি মাদুর ও চাদরের পরিবর্তে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। সাজসজ্জা দ্বারা সজ্জিত মাদুরকে নকশি পাটিও বলা হয়ে থাকে। আজকাল মানিব্যাগ, হাতব্যাগ, কাঁধে ঝোলানোর ব্যাগ, টেলিম্যাট প্রভৃতি কাজে ব্যবহৃত হয় শীতলপাটি।
সিলেট অঞ্চলের সুনামগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় পাটিকররা তাদের নিপূণতার জন্য শত শত বৎসর যাবৎ প্রসিদ্ধ। শীতল পাটিতে বসে বা শুয়ে যে আরামপ্রদায়ী শীতল অনুভূতি পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যাতীত। শীতল পাটির খণ্ডাংশ অন্যান্য হস্তশিল্পজাত পণ্য তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। সিলেটের বালাগঞ্জ, রাজনগর, বরিশালের স্বরূপকাঠি, ফরিদপুরের সাতৈর, নোয়াখালীর সোনাগাজী, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা প্রভৃতি স্থানে উন্নতমানের শীতলপাটি তৈরি হয়।
জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কো বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আবেদনক্রমে ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চলের শীতলপাটি বুননের ঐতিহ্যগত হস্তশিল্পকে কে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ নির্বস্তুক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। বাংলাদেশের শীতলপাটি শিল্প এখন বিশ্বঐতিহ্যের অংশ। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর এই স্বীকৃতিতে আমরা গর্বিত ও আনন্দিত।