রাকিবুল ইসলাম তনু, পটুয়াখালী থেকে : শুঁটকি এখন সুস্বাদু খাবারের তালিকায়। কেবল দেশে নয়, বিদেশেও্ প্রচুর চাহিদা। আর তা যদি হয় ক্যামিকেলমুক্ত, তাহলে কথাই নেই। যে কোন দামে কিনতে প্রস্তুত ভোক্তারা। সেদিকে লক্ষ্য রেখে পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীতে কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শত শত শ্রমিক।
রাঙ্গাবালী উপজেলার সাগর ঘেঁষে দ্বীপ-চরগুলোতে প্রতি বছরের মতো এবারো কয়েকটি শুঁটকি পল্লী গড়ে উঠেছে। কাঁচামাছ রোদে শুকিয়ে শুঁটকি তৈরিতে ব্যস্ত এখানকার কয়েক শত শুঁটকি শ্রমিক।
নভেম্বর মাস থেকে প্রায় সাড়ে চারমাস চলে শুঁটকির ব্যবসা। জেলার দুটি বড় মৎস্য ঘাট কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর-মহিপুর এবং রাঙ্গাবালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি পল্লী। মহিপুর, আলিপুর, লেবুর চর, গঙ্গামতির চর,গোড়াখালসহ বিভিন্ন চরে মাছের শুঁটকি প্রস্তুত করা হয়। লইট্ট্যা, ফাইস্যা, ছুরি, ছোট চিংড়ি, ছোট পোয়া, রইস্যা, রূপচাঁদা, লাক্ষাসহ প্রায় ৩৫ জাতের মাছ শুঁটকি করা হয় এসব পল্লীতে।
কলাপাড়ার দুই ঘাট থেকে মাছ সংগ্রহ করে কুয়াকাটার শুঁটকি পল্লীগুলোতে নিয়ে যান জেলেরা। কেমিক্যালমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতার সঙ্গে শুঁটকি তৈরি করায় এর চাহিদাও অনেক। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকার শুঁটকি বিক্রি হয় কুয়াকাটা থেকে।
হরিনা, চাকাচালি, টাইগার, লইট্যা, ছুরি, পোপা, মাইট্যা, কামিলা, ফাইস্যা, রূপচাঁদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ ও নানা জাতের চিংড়ি নিয়ে দিন কাটে ওদের। মাথা ছেঁড়া, বরফ দেয়া, শুকানো ও বাছাই করা, প্যাকেটসহ নানা কাজ নিয়ে তাদের ব্যস্ততা। শুকনো মৌসুমে প্রায় পাঁচ মাসের জন্য কয়েক হাজার লোক প্রতি বছর অস্থায়ীভাবে রাঙ্গাবালী উপজেলার সোনারচর, চরমোন্তাজের, বউ বাজার, চরআন্ডা ও মৌডুবিতে বসতি গড়ে তোলে।
প্রতি বছর দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জেলে, শুঁটকি কারবারি এবং তাদের সাথে কম বয়সের কিছু শ্রমিকও আসে জীবিকার তাগিদে । কম শ্রমিকরা সারাদিন কাজ করে পায় ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা। বয়স্করা পান তাদের ৩/৪ গুণ।
কুয়াকাটা শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ী আ.মালেক মৃধা বলেন, জেলেদের কাছ থেকে মাছগুলোকে কিনে নিয়ে আসার পর বাছাই করে আলাদা করা, ময়লা ছাড়ানো, কিছু মাছে লবণ দেওয়া, কেটে মাছগুলো শুকাতে দেওয়া হয়। এভাবেই চলে আমাদের শুঁটকির কার্যক্রম।
দিনমজুর হিসেবে কাজ করা রেহেনা বলেন, প্রতিদিন সকালে আসি আমরা, মাছ শুকানো, উল্টানো, প্যাকিং করাসহ বিভিন্ন কাজ করি বিকেল পর্যন্ত। আমাদের জনপ্রতি ৩৫০ টাকা করে দেয়,পুরুষ, নারী ও বাচ্চারাও কাজ করে এখানে।পুরো মৌসুমেই আমরা এখানে কাজ করি।
কুয়াকাটা শুঁটকি মার্কেট সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন,পর্যটকদের জন্য আমরা বিশেষভাবে সুস্বাদু, স্বাস্থ্যসম্মত, বিষমুক্ত শুটকির ব্যবস্থা করার চেষ্টা করি।যাতে কোনো ধরনের বিষের ব্যবহার বা অস্বাস্থ্যকর শুঁটকি কেউ তৈরি না করে সে ব্যাপারে আমাদের যথেষ্ট তদারকি আছে।
জেলার রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজের বউবাজার শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা গেছে, প্রতি মণ শুঁটকি ১৫০০-১৬০০ টাকায় পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। বেশির ভাগ শুঁটকি চলে যায় ভোলায়।আর ভোলা থেকে ঢাকায় চালান হয়। ঢাকায় নিয়ে কিছু শুঁটকি মুরগী ও মাছের খাবারে ব্যবহৃত হয়। ঢাকা থেকে দেশ ছাড়িয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে শুঁটকি।
এ ব্যাপারে পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা এমদাদুল্লাহ বলেন, জেলার কুয়াকাটা ও রাঙ্গাবালীতে যারা মাছ শুঁটকি করে থাকে তারা বেশ ভালো অভিজ্ঞ এবং ভালো শুঁটকি বাজারজাত করে। প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ শুঁটকি এ দু’ উপজেলায় তৈরি হয়ে থাকে।
তিনি আরো বলেন,শুঁটকি ব্যবসায়ীদের জীবনমান উন্নয়নে আমরা সর্বদা কাজ করে যাচ্ছি এবং তাদেরকে আধুনিক সেবার আওতায় নিয়ে আসতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে।