Home First Lead শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ

শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন আজ

বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক

ঘটা করে জন্মদিন কখনোই পালন করেননি বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় নেতাকর্মীদের অনুরোধেও রাজি হননি তিনি। বরং জন্মদিন উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান বা আনুষ্ঠানিকতা করতেও বারণ করে দিয়েছেন সবাইকে। আজ শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিবের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

ক্ষমতার টানা এক যুগ (তিন মেয়াদ) ধরে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দেয়ার কারণে জন্মদিনের সময় তিনি বিদেশে থাকেন। এবারও তাই। শুধু গত বছর করোনার কারণে ভার্চুয়াল সম্মেলন হওয়ায় দেশে ছিলেন তিনি। এর আগের দিন (২৭ সেপ্টেম্বর) সম্পাদকম-লীর বৈঠকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রস্তাব করেছিলেন সীমিত পরিসরে সভাপতির জন্মদিন পালন করার; যা বৈঠকের আলোচ্যসূচির (এজেন্ডা) অন্তর্ভুক্ত ছিল।

তবে প্রস্তাব গ্রহণ না করে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘জন্মদিন পালনের দরকার নেই। আমি এমনিতেই জন্মদিন পালন করি না।’ এর পরদিন (জন্মদিন) অন্যান্য দিনের মতোই কাটিয়েছেন শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করেছেন মন্ত্রিসভার বৈঠকে।

ওই বৈঠকেও জন্মদিনের আনুষ্ঠানিকতার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। শুধু দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়ে তিনি বলেন, ‘যতদিন বেঁচে আছি যেন সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারি। বাবা-মা সব হারিয়ে রিক্ত, নিঃস্ব হয়ে এই দেশে কাজ করা, এটা খুবই কঠিন কাজ। কিন্তু তারপরেও শুধু একটাই চিন্তা করেছি-তার (বঙ্গবন্ধু) স্বপ্নটা যেন অপূর্ণ না থাকে, সেটা যেন পূর্ণ করতে পারি। সে জন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’

জন্মদিন পালন প্রসঙ্গে পাঁচ দশক আগে এক বিদেশি সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমি জন্মদিন পালন করি না, আমার জন্মদিনে মোমবাতি জ্বালাই না, কেকও কাটি না। আমি জনগণের একজন। আমার জন্মদিন কী, আর মৃত্যুদিন কী? জনগণের জন্যই আমার জন্ম, জীবন ও মৃত্যু। আমার সংগ্রাম বাংলার মেহনতি মানুষের জন্য।’

আজ বঙ্গবন্ধু নেই। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে পাঁচত্তের ১৫ আগস্ট তিনি সপরিবারে নিহত হন। ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিদেশে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তারপর কয়েক বছরের নির্বাসিত জীবন।

একজন মা, একজন বোন, একজন রাজনীতিবিদ ও রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। ছোটবেলা থেকেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। টুঙ্গীপাড়ার পাঠশালা পেরিয়ে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে রাজনীতির বিভিন্ন স্তরে বিচরণ তার। সক্রিয় ছিলেন বাঙালির অধিকার আদায়ের নানা আন্দোলনেও।

১৯৮১ সালে বিদেশে থাকা অবস্থাতেই সর্বসম্মতিক্রমে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। নির্বাসিত জীবন ছেড়ে ওই বছরের ১৭ মে ফিরে আসেন দেশে। শুরু হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম। চলার পথ কখনওই সহজ ছিল না। সামরিক স্বৈরাচারের রোষানলে পড়ে বারবার কারাবরণ করেছেন তিনি। হয়েছেন জঙ্গিদের টার্গেট। মৃত্যুর মুখ থেকে বেঁচে ফিরেছেন বহুবার।

১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন। এক মেয়াদ বিরতি এবং সেনা সমর্থিত শাসনের পর ২০০৮ সালে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় শেখ হাসিনার ওপরই আস্থা রাখে জনগণ।

রক্তস্নাত বাংলায় স্বজন হারানোর শোক বুকে চেপে পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে শুরু হয় উন্নয়নের মহাযজ্ঞ। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের হত্যাকারীদের বিচার করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করেন।

তার ঘনিষ্ঠরা বলেন, সহজ সারল্যে ভরা শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত জীবন। সততা, মেধা, কঠোর পরিশ্রম, সাহস, ধৈর্য, দেশপ্রেম ও ত্যাগের আদর্শে গড়ে উঠেছে তার আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। নিয়মিত ফজরের নামাজ ও কোরান তেলওয়াতের মাধ্যমে তার দিন শুরু হয়। পোশাক-পরিচ্ছদে, জীবনযাত্রায় নেই কোন বিলাসিতা বা কৃত্রিমতার ছাপ।

তার দল আওয়ামী লীগ বলছে, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। ইতোমধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশু মৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন অসংখ্য মর্যাদাপূর্ণ পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে।

রাজনীতির পথচলায় নানান ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ গঠনে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। টানা তিন মেয়াদে বিশ্বের কাছে নিজেকে এবং জাতিকে তুলে ধরেছেন অনন্য উচ্চতায়। পিতা বঙ্গবন্ধুর নেত্বত্বের সম্মোহনী শক্তি কন্যা শেখ হাসিনাকে পরিণত করেছে বিশ্বনেতায়। দেশের মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করাই তার লক্ষ্য।

দেড় দশকের জন্মদিন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। এরপর থেকে প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষভাগে জাতিসংঘ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন। সফরসূচি এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবস্থানগত কারণে যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক শহরে কেটেছে তার জন্মদিনগুলো। অবশ্য এর মধ্যে দু-একটি জন্মদিন তার কেটেছে বিমানে, দেশের পথে যাত্রা করে।

টানা ক্ষমতা গ্রহণের আগে ২০০৮ সালের জন্মদিনটিও শেখ হাসিনার যুক্তরাষ্ট্রে কাটে। ওয়ান-ইলেভেনের সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১১ মাস কারাবন্দি থাকার পর ২০০৮ সালের ১২ জুন তিনি চিকিৎসার স্বার্থে নির্বাহী আদেশে মুক্তি পেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যান। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগমুহূর্তে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনি দেশে ফেরেন। ফলে সেই বছর তার ৬২তম জন্মদিন যুক্তরাষ্ট্রে সন্তানদের সঙ্গে কাটান।

২০০৭ সালে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থাকলেও তার জন্মদিন পালিত হয়নি। কারণ, তিনি ছিলেন সংসদ ভবন এলাকার সাবজেলে। ২০০৯ সালে দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বছর স্বামী ওয়াজেদ মিয়াকে হারান তিনি। এ বছর ৬৩তম জন্মদিনটি তিনি ওয়াশিংটনের বাল্টিমোরে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাসায় পারিবারিকভাবে কাটান। ২০১০ সালে ৬৪তম জন্মদিনটি কাটে বিমানে। ২০১১ সালে ৬৫তম জন্মদিন পালন করেন যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১২, ২০১৩, ২০১৪ ও ২০১৫ সালে জন্মদিন তিনি নিউইয়র্কে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে পালন করেন।

শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে ৭০তম জন্মদিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বাড়িতে কাটান এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে জন্মদিন পালন করেন।

২০১৭ সালে জাতিসংঘ সম্মেলনে যাওয়ার পর হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ২৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর গলব্লাডারে অপারেশন করা হয়। ওয়াশিংটনের একটি হাসপাতালে অপারেশনের পর ওই সময় সেখানকার আবাসস্থলে বিশ্রামে ছিলেন তিনি। সেখানেই তিনি ঘরোয়া পরিবেশে কাটে তার জন্মদিন।

২০১৮ সালে ৭২তম জন্মদিনে জাতিসংঘের অধিবেশন উপলক্ষে শেখ হাসিনা নিউইয়র্কের একটি হোটেলে ছিলেন। সেখানেই অনেকটাই আড়ম্বরহীন পালিত হয় তার জন্মদিন। তার ৭৩তম জন্মদিনও কেটেছে নিউইয়র্কে।

জন্মদিনে কোন আনুষ্ঠানিকতা তিনি না চাইলেও নেতাকর্মী, সমর্থক, শুভাকাক্সক্ষীরা ঠিকই পালন করেন তাদের নেত্রী, বাঙালির সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলার বাতিঘর শেখ হাসিনার জন্মদিন।