শেয়ারের দাম তথা পুরো শেয়ার বাজার সব সময়ই স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী বিবিধ নতুন ঘটনার সাপেক্ষে সংবেদনশীল। আর যেহেতু ভোট বা নির্বাচন প্রত্যেকটা দেশের ক্ষেত্রেই এমন একটা ঘটনা যা আগামী দিনে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিক নির্ধারণ করে, তাই যখন ভোট কাছে আসে তখন শেয়ার বাজারে এক বিশেষ ধরণের অস্থিরতার জন্ম হয়। তবে শেয়ার বাজারে যে ভোটের প্রভাব পড়ে — এই বিষয়টা আজকের দিনে কারো কাছেই খুব একটা অজানা নয়। কিন্তু সেই প্রভাব কিভাবে, কেন বা কতটা পড়ে সেটাই এই নিবন্ধের আলোচনার বিষয়।
ভোট কিভাবে শেয়ার বাজারের উপর প্রভাব ফেলে? ভোটের সময়, মানে এর কিছুটা আগে এবং কিছুটা পরে সাধারণত শেয়ার বাজার ভীষণই ভোলাটাইল বা অস্থির থাকে। কারণ ‘ভোট’- এর সাথে কিছু অনিশ্চয়তা বহন করে চলে। যখন থেকে ভোটের রণ দামামা বেজে ওঠে তখন থেকেই এনিয়ে আলোচনা তুঙ্গে ওঠে। কিন্তু আগে থেকে কেউই ঠিকমতো ঠাওর করতে পারে না যে, কোন দল কেমন ফলাফল করবে বা কোন দল জিতবে। তাছাড়া জেতার পর জয়ী দল কী যে করবে তা নিয়েও একটা অনিশ্চয়তা থাকে। তবে একটা চিরসত্য হচ্ছে, যে দলই জিতুক না কেন তার প্রভাব দেশের ইকোনমি তথা শেয়ার বাজারের উপর দারুনভাবে পড়ে।
সাধারণত, বর্তমানে যে সরকার গদিতে আছে সেই সরকারই যদি গদি ধরে রাখতে সক্ষম হয় তাহলে বাজার উপর দিকে ওঠে। কারণ সরকার অপরিবর্তিত থাকা মানে স্থিতিশিলতা বহাল থাকা আর বাজার সেটাই পছন্দ করে। আর অন্যদিকে সরকার বদলালে নতুন সরকার নতুন কিছু পলিসি নিয়ে আসে এবং আগের সরকারের থেকে আলাদা ঢঙে কাজ করে। কিন্তু তার প্রভাব দেশের অর্থনীতির উপর বা বিবিধ ব্যবসার উপর কিভাবে পড়বে সেটা আগে থেকে পরিষ্কার হয়না বলেই অন্তত সাময়িকভাবে বাজার পড়ে যায় বা উচ্চ ভোলাটিলিটি তৈরি হয়।
ভোটের সাথে সম্পর্কিত যে সমস্ত কারণগুলো এর অব্যবহিত আগে, এর সময় এবং এর অব্যবহিত পরে শেয়ার বাজারে শেয়ারের দামের উপর প্রভাব ফেলে সেগুলো হলো: নির্বাচনী ইশতেহার ভোট আসার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের ঢাক পেটানোর সময় ভোটে জিতলে অর্থনৈতিক সামাজিক এবং পরিবেশগত কি কি নীতি আনতে চলেছে সে সম্পর্কে কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে, আর সেই তালিকাটাকেই নির্বাচনী ইশতেহার বলা হয়। এই ইশতেহারে যদি এমন কোনো প্রতিশ্রুতি থাকে যাতে দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির উপর জোর দেওয়া হয় বা বিবিধ ব্যবসায় সুবিধা হবে এমন ধরনের কোনো নীতি প্রবর্তন করার কথা বলা হয়, সেক্ষেত্রে সেটা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশাবাদী মনোভাব তৈরি করে। যেমন ধরুন, কোনো পার্টি ট্যাক্স রেট কমানোর কথা বলে ক্ষমতায় এলে বাজারের উপর পজিটিভ প্রভাব পড়ে।
সরকারের মতাদর্শ: যে রাজনৈতিক দলের আইডিওলজি বা মতাদর্শ দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির পথে সাহায্যকারী হয়, সেই দল জিতলে বা জেতার পরিস্থিতি তৈরি হলে বাজার ওঠে আর উল্টোটা হলে পড়ে।
নেতার ব্যক্তিত্ব প্রতি রাজনৈতিক দলেরই প্রধান একটা মুখ থাকে। সেই মুখ যদি হয় ভীষণ জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী, যদি তার ব্যক্তিত্ব হয় অসাধারণ, আর যদি সে তার দলকে জয়ের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে সফল হয় তবে বাজারের উপরেও তার সু-প্রভাব ফুটে ওঠে। কারণ এই ধরনের একজন বড় মাপের নেতা দেশের মধ্যে একটা পজিটিভ সেন্টিমেন্ট তৈরি করতে এবং বেশি বেশি বিদেশী বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হয়। ফলস্বরূপ বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ট্রেন্ড দেখা যায়।
সেক্টর বা কোম্পানি স্পেসিফিক ট্রেন্ড: ভোট যেভাবে পুরো বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে সেভাবে কখনো কখনো কিছু কিছু বিশেষ সেক্টর বা বিশেষ কোম্পানির ওপরও আলাদাভাবে প্রভাব ফেলতে পারে। যে পার্টি জেতার সম্ভাবনা তৈরি হয় বা জেতে সেই পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে কিংবা নীতিতে কোনো বিশেষ সেক্টর যদি অতিরিক্ত কোন সুবিধা পায় তবে সেই সেক্টরের বিবিধ কোম্পানির শেয়ারের দামের ওপর পজিটিভ প্রভাব পড়ে। যেমন ধরুন, যদি কোনো সরকার গদিতে বসার পর ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্টের ওপর ফোকাস করে তবে ইনফ্রাস্ট্রাকচার তথা রিয়েল এস্টেট স্টকগুলোর দাম বাড়ে। আবার কিছু কিছু বড় বড় কোম্পানির মালিক পক্ষের সাথে কোনো এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিশেষ সম্পর্ক থাকে। ঐ দল যখন ক্ষমতায় থাকে তখন ঐ বিশেষ সম্পর্কের জেরে ঐ কোম্পানি তাদের ব্যবসাক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকে আর তাদের ব্যবসা বৃদ্ধির পথ সুগম হয়। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দল যদি গদি হারায় সেক্ষেত্রে সেই কোম্পানির শেয়ারের দামের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে।
শেয়ার বাজারের উপর ভোটের প্রভাবের ইতিহাস ভোট সম্পর্কিত শেয়ার বাজারের এই অনিশ্চয়তা তথা ভোলাটিলিটির প্রভাব কতদিন বা কতটা সময় পর্যন্ত এবং কতটা পরিমাণে পড়ে সেটা জানতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে অতীতে। বিগত বছরগুলোতে হওয়া বিভিন্ন ভোটের সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং তার সাথে শেয়ার বাজারের উত্থান পতন পর্যালোচনা করলেই এই বিষয়টা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
-সংগৃহীত