Home Second Lead শোলাকিয়ার ৫ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

শোলাকিয়ার ৫ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

শোলাকিয়া

বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি

ময়মনসিংহ: মঙ্গলবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে শুরু হয় হালকা বৃষ্টি। এই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই শোলাকিয়া অভিমুখে ঢল নামে মুসল্লিদের। জামাত শুরু হওয়ার অন্তত দেড় ঘন্টা আগে শুরু হয় টানা বৃষ্টি। এতে ঈদগাহ ময়দান, রাস্তা ও আশেপাশের এলাকা কর্দমাক্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু টানা এই বৃষ্টিতেও অবিচল ছিলেন শোলাকিয়া ময়দানে সমবেত লাখো মুসল্লি।

জায়নামাজ আর পলিথিন মাথার উপর মেলে ধরে কোন রকমে নিজেকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করেছেন মুসল্লিরা। কিন্তু তা পেরেছেন খুব কম সংখ্যক মুসল্লিই। ফলে মুসল্লিরা ভিজেছেন অঝোর ধারার বৃষ্টিতে। কাদা-পানিতে পলিথিন বিছিয়ে জামাতের জন্য জায়গা করে নিয়েছেন। এরপরও তাঁদের মাঝে ছিল না কোন অস্বস্তি। সকাল ১০টায় যখন শোলাকিয়ায় এবারের ১৯৫তম জামাত শুরু হয়, তখনও চলছিল বৃষ্টি। টানা বৃষ্টিতে মুসল্লিরা স্নাত হলেও আল্লাহর সান্নিধ্য ও অনুকম্পা পেতে ব্যাকুল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য তা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি। বৃষ্টিতে ভিজেই তাঁরা কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতের নামাজ আদায় করেছেন।

প্রতিবারের মতো এবারও শোলাকিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতে অংশ নিতে দূর-দূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষ ছুটে আসেন। দেশের সর্ববৃহৎ এ জামাতে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকেই মুসল্লিদের ঢল নামে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে অবস্থিত শোলাকিয়া ঈদগাহের উদ্দেশ্যে। ছাতা আনার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় বৃষ্টিতে ভিজে জায়নামাজ ও পলিথিন মাথায় দিয়ে মুসল্লিরা সমবেত হন শোলাকিয়া ঈদগাহে। জামাত শুরুর অন্তত দেড় ঘন্টা আগেই সাত একর আয়তনের শোলাকিয়া মাঠ পূর্ণ হয়ে যায়। মুষলধারে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়তে আসা দেশ-বিদেশের কয়েক লাখ মুসল্লির ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয় শোলাকিয়া ময়দান। আগত মুসল্লিদের অনেকে মাঠে জায়গা না পেয়ে পার্শ্ববতী রাস্তা, তিনপাশের ফাঁকা জায়গা, নদীর পাড় ও শোলাকিয়া সেতুতে জায়গা করে নিয়ে জামাতের জন্য দাঁড়িয়ে পড়েন।

সকাল ১০টায় জামাত শুরু হওয়ার আগে রেওয়াজ অনুযায়ী ১৫, ৫ ও ১ মিনিট আগে শর্টগানের ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে নামাজের প্রস্তুতির সংকেত দেওয়া হয়। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের ইমাম বাংলাদেশ ওলামা-মাশায়েখ সংহতি পরিষদের চেয়ারম্যান মাও. ফরীদ উদ্দীন মাসঊদ কিশোরগঞ্জে পৌঁছাতে পারেননি। তার পরিবর্তে জামাতে ইমামতি করেন বিকল্প ইমাম শহরের বড়বাজার জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা শোয়াইব আব্দুর রউফ। জামাত শেষে ইমাম তাঁর বয়ানে দেশ ও জাতির উন্নতি, সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর সংহতি ও ঐক্য কামনা করেন। এছাড়া দেশ-জাতি ও মুসলিম উম্মাহর জন্য মঙ্গল কামনা এবং পাপ থেকে মুক্তির জন্য বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন তিনি। লাখো মুসল্লিদের উচ্চকিত হাত আর আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার আমীন, আমীন ধ্বনিতে এ সময় মুখরিত হয়ে উঠে পুরো ঈদগাহ এলাকা। ১৮২৮ সালে অনুষ্ঠিত ঈদের প্রথম বড় জামাতের হিসাব অনুযায়ী শোলাকিয়া ময়দানে এবার ছিল ১৯৫তম ঈদ জামাত। জামাতকে কেন্দ্র করে এবার নেওয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। মাঠে স্থাপন করা হয় ৬টি ওয়াচ টাওয়ার। ৬৫টি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় নিয়ে আসা হয় ঈদগাহ ময়দান, আশেপাশের এলাকা এবং অলিগলিসহ মাঠ সংলগ্ন চারপাশ। পুলিশের নিরাপত্তা পরিকল্পনায় এবারো যুক্ত ছিল ড্রোন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, শতাধিক র‌্যাব এবং পুলিশের ১২০০ সদস্যসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দেড় হাজারের মতো সদস্য দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে দেয়া হয় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। ঈদগাহ ময়দানের প্রবেশপথে স্থাপিত আর্চওয়ে দিয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহ ময়দানে। এর আগে আরো অন্তত কয়েক দফা মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাসি করা হয়। নিরাপত্তার স্বার্থে মুসল্লিদের শুধু জায়নামাজ নিয়ে ঈদগাহে ঢুকতে দেয়া হয়। মাঠের সুনাম ও জনশ্রুতির কারণে ঈদের বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই কিশোরগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চল ও সারাদেশের বিভিন্ন জেলা তথা ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, গাজীপুর, নরসিংদী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট, জামালপুর, খাগড়াছড়ি, শেরপুর, যশোর, খুলনা ও চট্রগ্রামসহ অধিকাংশ জেলা থেকে শোলাকিয়ায় মুসল্লিদের সমাগম ঘটে। এদের অনেকে ওঠেন হোটেলে, কেউবা আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। আবার অনেকেই কোথাও জায়গা না পেয়ে রাত কাটান জেলা সদরের বিভিন্ন মসজিদে।