সালাম জুবায়ের
বাংলাদেশে সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্র সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে দুটি বিষয় ব্যাপক অংশ জুড়ে থাকে। তা হলো বাংলাদেশে বিভিন্ন সংবাদপত্র স্থানীয়ভাবে এবং কয়েকজন ক্ষণজন্মা সাংবাদিক সংবাদপত্রের মানদন্ড তৈরি করেছেন। সংবাদের প্রয়াত প্রধান সম্পাদক আহমদুল কবির ছিলেন সেই দিকপাল সাংবাদিকদের একজন। তিনি সংবাদ পত্রিকায় সাংবাদিকতা এবং সংবাদপত্র প্রকাশনার যে নতুন পথ তৈরি করেছেন তা ছিল বাংলাদেশের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ। তারপর কয়েক যুগে বাংলাদেশের সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা অনেক এগিয়েছে, বিকশিত হয়েছে। কিন্তু পঞ্চাশের দশকে আহমদুল কবির সংবাদকে যেভাবে সাংবাদিকতার নতুন পথে যাত্রা শুরু করিয়েছেন সেই পথ এখনও, ক্ষেত্রে বিশেষে কিছু বিন্যাস ঘটিয়ে, চলমান রয়েছে। আহমদুল কবির এ নতুন পথের সন্ধান দিয়েছিলেন সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে। বুধাবার আহমদুল কবিরের ৯৯তম জন্মদিন। এ দিনে তাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে একজন সাংবাদিক হিসেবে এসব কথা মনে হচ্ছে।
সাংবাদিকতা এবং ব্যবস্থাপনার আধুনিক ধারা যেসব ক্ষণজন্মা মানুষের পরিকল্পনা এবং শ্রমে বর্ধিত হয়েছে আহমদুল কবির ছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। ‘সংবাদ’ তার হাত দিয়ে পরিপুষ্ট এবং চরম প্রতিকূল রাজনৈতিক আবহে খবর তৈরিতে প্রগতিশীলতা ও আধুনিকতার একটি নতুন ধারা প্রবর্তনে অনেকটা পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে আজ সংবাদপত্র যে চেহারায় আবির্ভূত, বলা যায় তার প্রথম প্রচলন, সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে এবং আহমদুল কবিরের নেতৃত্বে ‘সংবাদ’ সেই আধুনিক ধারা এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রথম সচেষ্ট হয়েছিল। যার ফল বাংলাদেশে সংবাদপত্র এবং সাংবাদিকতা পেশার বিস্তার এবং কাক্সিক্ষত মান অর্জন। পঞ্চাশের দশকের শুরু হলেও তা কালে কালে রাজনীতি ও ইতিহাসের বাক পেরিয়ে আরও বেশি সমৃদ্ধ ও পরিণত হচ্ছে।
‘সংবাদ’ ছিল পূর্ব পাকিস্তানে প্রথম প্রগতিশীল ধ্যান-ধারণার দৈনিক পত্রিকা। তবে তার যাত্রা শুরু হয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র নিয়ে। সে অবস্থা থেকে আহমদুল কবির সংবাদকে তুলে এনেছেন, নব জীবন দিয়েছেন আদর্শের সত্যনিষ্ঠ পথচলায়। আর এ ব্যাপক কর্মকান্ডে তার মেধা, প্রগতিশীল নীতি-আদর্শই ছিল পাথেয়, যা তিনি অর্জন করেছেন শিক্ষা ও মর্যাদাশীল পারিবারিক পরিবেশের মধ্যদিয়ে। প্রগতিশীল ও আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন আদর্শের পথে তার আগুয়ান সম্ভব হয়েছিল মেধা আর উচ্চ ভাবনাসমৃদ্ধ চিন্তা-চেতনার ফসল হিসেবে। একই সঙ্গে রাজনীতিতেও এ চিন্তা-চেতনা আর আদর্শের প্রভাব পড়েছিল। এ পর্যায়ে তার সাংবাদিক চেতনা ও রাজনৈতিক আদর্শ একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করেছে। তা থেকেই গ্রহণ-বর্জনের দীর্ঘ পথ পেরিয়ে তার জীবনের সব কিছু অর্জন করেছেন। এটা তাকে যেমন ভিন্ন মাত্রার সাংবাদিকতার দিকপাল ও আদর্শবাদী রাজনীতিকের মর্যাদা দিয়েছে, তেমনি তাকে আদর্শবাদী রাজনৈতিক কর্মী ও গণমানুষের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এটা আমাদের আগের প্রজন্মের মানুষের জন্য ছিল বেশি পাওয়া।
আহমদুল কবিরের বর্ণাঢ্য জীবন ও কর্ম পর্যালোচনা করলে অনেক তথ্য মেলে যা তার জন্য খুব সহজ ছিল বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে তার সবই তাকে মেধা ও শ্রম দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। এজন্যই তার কালে তাকে দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির অন্যতম পুরোধা মনে করা হয়।
আজ সংবাদপত্র জগতের মহীরুহ হিসেবে সংবাদ দেদীপ্যমান হলেও এর যাত্রা ছিল চরম প্রতিক্রিয়াশীল সংবাদপত্র হিসেবে। ১৯৫২ সালে সংবাদ প্রকাশিত হয় ধর্মীয় আদর্শের প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের মুখপত্র হিসেবে। তখনকার রাজনীতিতে সৃষ্টি হচ্ছিল নতুন আদর্শের প্রগতিশীল ধারা। সেই আবহে প্রতিক্রিয়াশীল ‘সংবাদ’ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি একাধিক কারণে। এর পরিণতি হিসেবে অপমৃত্যু হয় সংবাদের। একেবারে নিঃশেষ না হয়ে হাত বদল হয়ে যায় আহমদুল কবিরের হাতে। মুসলিম লীগের হাত থেকে আহমদুল কবিরের হাতে আসাকে নিছক হাত বদল বলা যাবে না, বলতে হবে সংবাদের নতুন জীবন লাভ, প্রতিক্রিয়াশীল অবস্থা থেকে প্রগতিশীল ধারায় রূপান্তর। আর এ রূপান্তরের রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন আহমদুল কবির। একই ভাবে তার মাধ্যমে ‘সংবাদ’ যে নতুন সাংবাদিকতার প্রগতিশীল ধারা প্রবর্তন করে তারও তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক দিকটি সমৃদ্ধ হয়েছে আহমদুল কবিরের সার্বিক চিন্তায়।
মুসলিম লীগের হাত থেকে আহমদুল কবিরের হাতে সংবাদ অর্পিত হওয়ার পর তিনি সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেটা ছিল ১৯৫৪ সাল। আর তিনি সংবাদের সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন ১৯৭২ সালে। এর মধ্যদিয়ে তিনি প্রত্যক্ষ সাংবাদিকতায় ব্যাপৃত হন। ২০০১ সালে তিনি প্রধান সম্পাদক হন এবং আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এর প্রতিটি অধ্যায়ে তার চেষ্টা ছিল- জনজীবনের নানা অনুষঙ্গ সংবাদে তুলে আনা, ভিন্ন ভিন্ন মাত্র যোগ করা, নানা কিছু প্রবর্তন, সাধারণ ও শিক্ষিত মানুষের চাহিদা পূরণে নানা বিষয় ও তথ্য যুক্ত করা। এসব কিছুতেই তিনি স্রষ্টা হিসেবে আবির্ভূত হন। পরে অনেক নতুন স্রষ্টা ও চিন্তক তিনি তৈরি করেছেন, যারা তার চেতনার আদর্শ ও করণীয়গুলো আরও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আহমদুল কবিরের আদর্শ ও চেতনার পথ অনুসরণ করে তাদের অনেকেই পরবর্তীতে স্মরণীয়-বরণীয় হয়েছেন। নিজ প্রতিভার আলোয় উদ্ভাসিত হয়েছেন যেমন তেমনি অন্যকে, সাংবাদিকতার পেশার নতুন প্রজন্মকে আলোকিত জগতের বাসিন্দা বানিয়েছেন, দীপ্তমানও করেছেন। এক্ষেত্রেও আহমদুল কবিরের কর্মচিন্তা পথ প্রদর্শক হিসেবে জাগরুক ছিল।
কর্ম আর চিন্তা-চেতনার নতুনত্ব ও সৃজনশীলতা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে-কি সাংবাদিকতা কি রাজনীতি- সবক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সমসাময়িক অন্যদের চেয়ে উজ্জ্বল এবং ব্যতিক্রম। নেতৃত্বের গুণাবলী তাকে এ মর্যাদায় অভিষিক্ত করতে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেছে। এর ফল হিসেবে আহমদুল কবির ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছিলেন। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার সাংবাদিক-রাজনীতিক।
সাংবাদিকতা ক্ষেত্রে আহমদুল কবির ছিলেন নতুনত্বের প্রত্যাশী এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থসংলগ্ন বিষয়াবলি প্রকাশে আগ্রহী ও অঙ্গীকারাবদ্ধ। এক্ষেত্রে তার আদর্শ ছিল মুক্ত চিন্তা-চেতনাকে লালন করে মন ও মমনে প্রগতিশীল আদর্শের বাতাবরণ তৈরি করা। সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো ‘সংবাদ’। সংবাদে বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি তার এ আদর্শ লালন করে গেছেন। সংবাদ সব ধরনের মানুষ এবং সব ধরনের পেশার মর্যাদা তুলে ধরতে নিরপেক্ষ ভূমিকা ধারণ করতে সচেষ্ট ছিল বলেই সম্ভব হয়েছিল মানুষের শ্রেণী-পেশার বিভেদ দূর করে সংবাদের মৌলিক তথ্যকে গুরুত্ব দেয়া। তথ্যই সেখানে মূল ভূমিকা পালন করেছে। এই চেতনা তার সমকালে ছিল বিরল ও অপ্রত্যাশিত। অপ্রত্যাশিত বলা হচ্ছে এ কারণে যে, তখন সংবাদপত্র ছিল উচ্চ মার্গের একটি বিষয়, সেখানে নিম্ন শ্রেণী ও পেশার গুরুত্ব ছিল না বললেই চলে। কেউ প্রত্যাশা করতেন না সংবাদপত্রে শ্রমিক, কৃষক ও নিম্নবিত্তের খবর গুরুত্ব পাবে। আহমদুল কবির সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে এসব বিষয় প্রধান্য দিতে কার্পণ্য করেননি। এখানে তিনি ছিলেন সমকালের অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম এবং এগিয়ে থাকা চিন্তার ধারক। তার এ ধরনের চিন্তা-চেতনা ও আদর্শের প্রভাব পড়েছে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতার উত্তর প্রজন্মের মনমানসিকতায়। সংবাদপত্র এখন অত্যন্ত আধুনিক সৃজনশীল উদ্ভাবনী সক্ষমতায় পারঙ্গম এবং বর্তমানকে এগিয়ে নেয়ার মানসিকতা সমৃদ্ধ। এ অবস্থা তৈরি ছিল আহমদুল কবিরের স্বপ্ন। তিনি চেষ্টা করেছেন সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে। সুখের কথা যে, উত্তর প্রজন্ম তা অনেকটাই বাস্তবায়ন করে সংবাদপত্রের ক্ষমতাকে পোক্ত করতে পেরেছেন।
সংবাদ এবং সাংবাদিকতাকে এগিয়ে নেয়ার আগে আহমদুল কবির নিজে তৈরি হয়েছেন সামাজিক অভিজ্ঞতা ধারণ করে। এগিয়ে যাওয়ার সময়ও এই সামাজিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাই তাকে পথ দেখিয়েছে। সমাজ থেকে আহরিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও চেতনা তিনি কাজে লাগিয়েছেন যখন ‘সংবাদ’ পরিচালনা করেন তখন যেমন, তেমনি যখন তিনি রাজনৈতিক কর্মী এবং নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন তখনও। এ সামাজিক অভিজ্ঞতার ফসল আহমদুল কবির নিজে এবং তার নেতৃত্বে সংবাদও। এ অভিধা সংবাদপত্রের বরণীয় অন্য কোন স্বপ্ন পুরুষের মধ্যে সেই সময়ে ছিল বিরল। একেবারেই ছিল না বললে চলে না, ছিলেন কেউ কেউ। কিন্তু তাদের চিন্তা-চেতনায় ধর্মীয় অনুভব এবং উচ্চবর্ণের লোকদের প্রধান্য ছিল বেশি মাত্রায়, অনুপস্থিত ছিল নিম্ন বর্ণের শ্রেণীপেশা। এই স্বাতন্ত্র্য তখন স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হতো আহমদুল কবির এবং তার সমকালের অন্যদের কাজে-কর্মে। এজন্য সাংবাদিকতায় যেমন তেমনি রাজনীতিতেও আহমদুল কবির ভিন্নভাবে চিত্রিত হতেন, এখনও হচ্ছেন, তার প্রয়াণের দেড় দশক পরেও। এটা তার প্রাপ্য বললে কম বলা হবে।
অসাম্প্রদায়িক চেতনা, মুক্তবুদ্ধি এবং জাতীয় স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আহমদুল কবির ছিলেন আপসহীন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার ‘সংবাদ’ পত্রিকার কার্যালয় পুড়িয়ে দেয় এবং আহমদুল কবিরকে গ্রেপ্তার করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ‘সংবাদ’ প্রকাশের জন্য অনেক প্রলোভন দেখায়, কিন্তু আহমদুল কবির পত্রিকা প্রকাশ করেননি, কোন প্রলোভনের কাছে মাথা নত করেননি, স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করেননি। স্বাধীনতার পরপরই তিনি জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন এবং সংবাদ পুনঃপ্রকাশ করেন। এক্ষেত্রে আদর্শ ও আপসহীন মনোভাব তাকে উজ্জীবিত করেছে।
সংবাদপত্রে আহমদুল কবিরই প্রথম সমাজের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার জন্য আলাদা পাতা প্রকাশের সূচনা করেছিলেন। মহিলা পাতা, কৃষকদের পাতা, শিশুদের পাতা, সাহিত্যিকদের পাত, খেলাধুলার পাতা, সংস্কৃতি পাতা, কৃষি সংবাদ, শ্রমিক সংবাদ ইত্যাদি ছিল সংবাদপত্রে আহমদুল কবিরের সৃজনশীলতার ছাপ এবং বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষকে সংবাদপত্রে তুলে ধরার প্রত্যশার বাস্তবায়ন। তার আগে এমন অবস্থা কেউ সৃষ্টি করেননি তা বলা যাবে না, কিন্তু এমন বিস্তারিত এবং পরিকল্পিতভাবে হয়নি তা বলা যায়। আহমদুল কবির তখন আধুনিক মানসিকতাসম্পন্ন ছিলেন বলেই এসব কাজ তিনি সংবাদে বাস্তবায়ন করেছেন।
আহমদুল কবির একই সঙ্গে সাংবাদিকতা ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বহমান ছিলেন। সাংবাদিকতা এবং রাজনীতি তার আদর্শে সহাবস্থান করেছে এবং একটি আরেকটির পরিপূরক ছিল বললেও বলা যায়, তা কখনও সাংঘর্ষিক ছিল না। একটি থেকে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা অন্যক্ষেত্রে কাজে লাগিয়েছেন। এতে তার কাজ অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে। তার সময়ে দ্বিমত থাকতে পারে-রাজনীতি কিছুটা হলেও ছিল সংবাদপত্র প্রভাবিত। কিন্তু আহমদুল কবির রাজনীতি ও সাংবাদিকতাকে গুলিয়ে ফেলেননি, একটি থেকে সুবিধা নিয়ে অন্য মাধ্যমকে প্রভাবিত করেননি, করার ইচ্ছাও তার ছিল না। একটি থেকে অভিজ্ঞতা নিয়ে অন্যটির কাজে প্রয়োগ করলেও দুই মাধ্যমকেই তিনি আলাদা অবস্থানে রেখেছেন। এটাও এক ধরনের সক্ষমতার পরিচায়ক। এটা পেরেছিলেন তিনি।
আহমদুল কবিরের রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী রাজনীতিতে নিবেদিত প্রাণ ছিলেন তিনি। এর মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান এবং নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে।
একজন সংবাদপত্রসেবী, একজন রাজনীতিবিদ এবং মেহনতি মানুষের একজন বন্ধু হিসেবে আহমদুল কবির বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের স্মরণে বেঁচে থাকবেন। বুধবার তার জন্মদিন। এদিনে তাকে যেমন স্মরণ করব তেমনি স্মরণ করব তার আদর্শকে।