Home শেয়ারবাজার পুঁজিবাজারে সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার কারসাজি যেভাবে হয়েছিল

পুঁজিবাজারে সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার কারসাজি যেভাবে হয়েছিল

পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার কারসাজিতে বর্তমানের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরোর সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তদন্তে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজিতে হিরোসহ ছয়জনের জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে। কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারটির দর ২৪৫ শতাংশ বাড়ানো হয়। সম্প্রতি এ ঘটনার অধিকতর তদন্তের জন্য দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি)। গত ১১ মে এসইসির পরিচালক আবুল হাসান স্বাক্ষরিত এক আদেশে এ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

ডিএসইর তদন্তে কারসাজির তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পর এসইসির দুই কর্মকর্তাকে এ কারসাজি ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এসইসি উপপরিচালক মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল ও মোহাম্মদ রতন মিঞার সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কমিটিকে কারসাজির পাশাপাশি বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের, তার শ্যালক কাজী ফরিদ হাসান এবং সজীব হোসেন সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে সাফকো স্পিনিংয়ের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার পুঁজিবাজার থেকে কিনে নেন। সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির ১০ শতাংশ বা তার বেশি শেয়ার কিনতে হলে স্টক এক্সচেঞ্জ, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কোম্পানিকে জানাতে হয়। কিন্তু এ তিন বিনিয়োগকারী বিষয়টি জানাননি।

মূলত কারসাজির উদ্দেশ্যে বিপুল শেয়ার কিনে প্রথমে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হয়। এতে করে ওই শেয়ারের দাম বাড়তে থাকে। শেয়ারের মূল্যবৃদ্ধির একপর্যায়ে উল্লিখিত বিনিয়োগকারীরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে মুনাফা তুলে নেন। এ ছাড়া সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ারের দর বাড়াতে সজীব হোসেন ও তার সহযোগীরা মিলে সিরিজ লেনদেনের ঘটনা ঘটান। সজীব হোসেনের সঙ্গে এ সিরিজ লেনদেনে জড়িত ছিলেন আবদুল কুদ্দুস আমিন, মো. সুলেয়মান ও নুরুন্নেসা সাকি। এতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন অধ্যাদেশ ১৯৬৯-এর ধারা ১৭(ই)(ভি) লঙ্ঘন হয়েছে। ভিন্ন ভিন্ন বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব ব্যবহার করে কোম্পানিটির শেয়ার নিয়ে কারসাজির আশ্রয় নেন এসব বিনিয়োগকারী।

ডিএসইর তদন্ত কর্মকর্তারা মনে করছেন, কোম্পানিটির উদ্যোক্তা-পরিচালকদের সঙ্গে যোগসাজশে কারসাজির এ ঘটনা ঘটেছে। কারসাজিতে সহায়তা করতে দুই বছর লোকসানে থাকা কোম্পানিটি হঠাৎ করেই মুনাফায় ফিরে আসে। এমনকি ২০২১ সালের জুন সমাপ্ত হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ৫ শতাংশ লভ্যাংশও ঘোষণা করা হয়। মুনাফায় ফিরে আসা ও লভ্যাংশ ঘোষণা কোম্পানিটির দাম বাড়াতে সহায়তা করে।

ডিএসইর তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার নিয়ে বড় ধরনের কারসাজি হয় গত বছরের এপ্রিল থেকে আগস্টের মধ্যে। ওই কয়েক মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম তিন গুণ বৃদ্ধি পায়। ডিএসইতে গত বছরের ১৩ এপ্রিল কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ছিল মাত্র ৯ টাকা ৬০ পয়সা। ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারের দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ টাকা ২০ পয়সায়। এ কয়েক মাসের মধ্যেই এসব বিনিয়োগকারী তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে বড় অঙ্কের মুনাফা তুলে নেন।

পুঁজিবাজারের আলোচিত বিনিয়োগকারী আবুল খায়ের হিরো সমবায় অধিদপ্তরের কর্মরত প্রথম শ্রেণির একজন সরকারি কর্মকর্তা। ২০২০ সালে বীমা খাতের কারসাজির মাধ্যমে আলোচনায় আসেন। সাফকো স্পিনিং ছাড়াও ফরচুন সুজসহ পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত আরও বেশকিছু কোম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকে তার বেশকিছু বিও হিসাব রয়েছে। নিজের ও নিকটাত্মীয় ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির বিও হিসাবে লেনদেন করেন তিনি। সাফকো স্পিনিংয়ের শেয়ার নিয়ে কারসাজির ক্ষেত্রে হিরো একটি ব্যাংকের সহযোগী এক প্রতিষ্ঠানে থাকা বিও হিসাব ব্যবহার করেছেন বলে ডিএসইর তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

সুত্র: দেশ রূপান্তর