‘আমি তো কর্পোরেশনের ১০০কোটি টাকার সম্পদ ১ লাখ টাকা ভাড়ায় ৩০ বছরের জন্য কাউকে দিয়ে দেইনি। আমি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান কাউকে ১০ বছর বা ২০ বছরের জন্যও দেইনি। আমি সাবেক মেয়র নাছিরের বিতর্কিত কাজ বাতিল করেছি।’
‘দল যদি মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে আগামীতে সংসদ নির্বাচনে আমাকে নমিনেশন দিবে। আর চট্টগ্রাম- ১১ আসনই আমার পছন্দের আসন।’
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ খোরশেদ আলম সুজন। তিনি সাবেক সিটি প্রশাসক। পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ সংকট, জলাবদ্ধতাসহ নগরবাসীর বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আন্দোলন করেছেন, এখনও করছেন।
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধির সাথে উত্তর কাট্টলীর বাড়িতে একান্ত আলাপচারিতায় সিটি কর্পোরেশন প্রসঙ্গে তিনি বললেন, দুর্নীতির সবচেয়ে বড় খাত কর্পোরেশনের জ্বালানি খাত। আমি কম দুর্নীতিবাজ ধরি নাই। কর্পোরেশনের সাড়ে ৪ কোটি টাকা তেলের খরচকে ৩ কোটিতে নামিয়ে এনেছি। হাক্কানী থেকে তেল নিয়ে ২ সপ্তাহে আমি কর্পোরেশনের ৩৬ লাখ টাকা সাশ্রয় করেছি। হাক্কানী সরকারি ভ্যাট দিয়েই তেল কিনে। কিন্তু কর্পোরেশনে তেল দিলে আবার ভ্যাট দিতে হয়।
সুজন বলেন, কর্পোরেশনের জায়গায় জায়গায় দুর্নীতি, আমি বন্ধ করার উদ্যোগ নিয়েছিলাম। এতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত তারাই এখন আমার বিরুদ্ধে নানা বানোয়াট অভিযোগ তুলছে।
সিটি কর্পোরেশনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এক বড় সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, আমি প্রশাসক থাকাকালে কিছু অসাধু কর্মচারির অপরাধ দমন করতে সক্ষম হয়েছিলাম। এরা এখন আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এরা প্রশাসনকে নানাভাবে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
সুজন বলেন, কর্পোরেশনের জায়গা কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দখল করে রেখেছিলো। আমি এমন ২৯ টি জায়গা উদ্ধার করেছি। যেগুলো কর্পোরেশনের জানাই ছিলো না। বেদখল জায়গাগুলো উদ্ধার করলে আবারও দখল হয়ে যায় তাই আপাতত রক্ষা করার জন্য টেন্ডার কমিটির মাধ্যমে টেন্ডার দিয়েছি। আমি তো ১ বছরের জন্য দিয়েছি। দীর্ঘ সময়ের জন্য দিইনি। টেন্ডার কমিটি টেন্ডার দিয়েছে। ‘আমি শপথ করে বলতেছি আমি কর্পোরেশনে থাকা অবস্থায় কাউকে ফেবার করি নাই। আমি তো কর্পোরেশনের ১০০কোটি টাকার সম্পদ ১ লাখ টাকা ভাড়ায় ৩০ বছরের জন্য কাউকে দিয়ে দেইনি। আমি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান কাউকে ১০ বছর বা ২০ বছরের জন্যও দেইনি। কেউ যদি মনে করে এটা অন্যায় হয়েছে তাহলে তারা বাতিল করে দিবে। আমি সাবেক মেয়র নাছিরের বিতর্কিত কাজ বাতিল করেছি।’
তিনি বলেন, মানুষ আগে আমার কথা শুনেছে প্রশাসক হওয়ার পর আমার কাজ দেখেছে। আমার অসীম জনপ্রিয়তা দেখে অনেকেই এটা নষ্ট করার চেষ্টা করছে। যারা আগে ম্যাসেজ পার্লারের ব্যবসা করতো, এখন সাংবাদিকের উর্দি পরে মিথ্যা তথ্য দিয়ে মহল বিশেষের ইংগিতে আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপপ্রয়াস চালিয়েছে।
স্বৈরাচারি এরশাদ সরকারের পতনের পর থেকে এ পর্যন্ত প্রতিটি সংসদ নির্বাচনে দলের কাছে মনোনয়ন চেয়েছিলেন জননেতা খোরশেদ আলম সুজন। কপালে জোটেনি। কখনও বঞ্চিত হয়েছেন মনোনয়ন পাওয়া থেকে, আবার কখনও পেয়েও পাননি শেষ পর্যন্ত। তিনি বলেন, যেকোন রাজনৈতিক কর্মীর মনের আশা সে একবার হলেও পার্লামেন্টে যাবে, মানুষের জন্য কাজ করবে। আমারও ইচ্ছা পাপার্লামেন্টে যাবো। আমার জন্ম চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বন্দরে অনেক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠি আছে। হয়তো তাদের সাথে আমি কুলিয়ে উঠতে পারিনি। তাদেরকে মোকাবিলা করতে পারিনি। দল যদি মনে করে আমি যোগ্য, তাহলে আগামীতে আমাকে নমিনেশন দিবে। আর চট্টগ্রাম- ১১ আসনই আমার পছন্দের আসন।
খোরশেদ আলম সুজন জানালেন, আমি ক্লাস এইট থেকে রাজনীতি করি। এখন পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সাথে আছি। আমার শেষ বয়সে যদি দলের কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদ পাই, তাহলে আমি খুশি হবো। আমার রাজনৈতিক জীবন সার্থক হবে। না হলেও আমার কোনো আক্ষেপ নেই। আমি চাই সংগঠন মানুষের জন্য হোক। সংগঠন মানুষের পাশে দাঁড়াক।
তিনি বললেন, ক্ষেতে শত ফুল ফুটলেও যে ফুলের সুঘ্রান ছড়াবে তা থেকেই সবাই সুগন্ধি নিবে। শেষ বয়সে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পেলে সে দায়িত্ব আমি নেবো।