- রুবি ফুডের অভিযোগ লাঠিসোটা নিয়ে ভয়-ভীতির
- পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে: সংগ্রাম কমিটি
বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
ঢাকা: চট্টগ্রামের বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনকারি বাল্কহেডসহ সিরিয়ালবিহীন নৌযানের বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়েছে। শনিবার মু্ক্তারপুর, গজারিয়া, মেঘনাঘাটসহ কয়েকটি এলাকা থেকে এ ধরনের ২০টি নৌযানের ডকুমেন্টস আটক করা হয়েছে।
নৌযান ব্যবসা রক্ষা সম্মিলিত সংগ্রাম কমিটি এ অভিযান পরিচালনা করেছে নৌ পুলিশের সহায়তা নিয়ে। রাজধানীর লালকুঠি ঘাট থেকে ‘সোনার তরী’ জাহাজে যাত্রা শুরু করে দাউদকান্দি পর্যন্ত অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) ‘র সিরিয়ালের বাইরে পণ্য নিয়ে যাওয়া নৌযানসমূহের ডকুমেন্টস আটক করা হয়। নৌ পুলিশ সেগুলো নৌ পরিবহন অধিদপ্তরে পেশ করবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। জুনের শেষ সপ্তাহেও একদিন অনুরূপ অভিযান পরিচালিত হয়েছিল।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনে ডব্লিউটিসি’র ছাড়পত্র নেয়ার বিধান রয়েছে। ৪ জুন এ ব্যাপারে বাংলাদেশ শিপহ্যান্ডলিং এন্ড বার্থ অপারেটরস এসোসিয়েশন চেয়ারম্যানকে পত্র দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। স্টিভিডোররা দীর্ঘদিন ডব্লিউটিসির ছাড়পত্রবিহীন নৌযানকে লাইটারিংয়ে ব্যবহার করেনি। সাম্প্রতিককালে সেটা এড়িয়ে যাচ্ছে তারা।
নৌযান ব্যবসা রক্ষা সম্মিলিত সংগ্রাম কমিটি জানায়, ডব্লিউটিসিকে এড়িয়ে সরাসরি বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে এখাতে। বহু লাইটার জাহাজ দিনের পর দিন অলস পড়ে আছে। এখন জাহাজ মালিকদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। জাহাজের কর্মিদের বেতন-ভাতা দেয়া এবং ব্যাংকের টাকার সুদ পরিশোধ অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ট্রিপের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় মাসের পর মাস। বিভিন্ন আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান আমাদের ভেসেলগুলোর পণ্য খালাস না করে আটকে রাখে। এভাবে যতদিন আটকে রাখা হয় ততদিনে তাদের নিজস্ব নৌযানগুলো ৪/৫ ট্রিপ দেয়। কোন কোন শিল্পগ্রুপ আমাদের নৌযানসমূহ ৩ মাস পর্যন্ত আটকে রেখেছে। ডব্লিউটিসি ‘র দুর্বল নেতৃত্বের কারণে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা যাচ্ছে না এবং নৌ পরিবহনের এই খাতটি ধ্বংসের উপক্রম। এ অবস্থায় প্রতিবাদ কর্মসূচি নিয়ে রাস্তায় নামা ছাড়া আমাদের কোন গত্যন্তর নেই।
এদিকে, দেশের শীর্ষস্থানীয় ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বিএসএম গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান রুবি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেড অভিযোগ করেছে নৌযান ব্যবসা রক্ষা সম্মিলিত সংগ্রাম কমিটির বিরুদ্ধে। নৌ পরিবহন অধিদপ্তরকে তারা জানিয়েছে যে রুবির নিজস্ব জাহাজ চলাচলকে বাধাগ্রস্ত করা হচ্ছে। সংগ্রাম কমিটির লোকজন লাঠিসোটা নিয়ে ওঠে জাহাজের কর্মিদের ভয়-ভীতি প্রদর্শণ করছে। তাতে ভোগ্যপণ্য মাদারভেসেল থেকে খালাস এবং যথাসময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড কেবলমাত্র অভ্যন্তরীণ নৌপথে স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য তৈরি। সেগুলো এখন চলছে বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনে বেআইনিভাবে। আর তা কর্ণফুলী চ্যানেল এবং আউটার এ্যাংকরেজে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে হুমকি সৃষ্টি করেছে বলে জানিয়েছে নৌ পরিবহন অধিদপ্তর।
গত ১৫ অক্টোবর মধ্যরাতে বন্দরের ডলফিন জেটি এলাকায় ডুবে গিয়েছিল একটি বাল্কহেড। জাহাজ চলাচল পথেও বাল্কহেড ডুবির ঘটনা ঘটেছিল। তাতে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল বন্দরে জাহাজ চলাচল। এ রকম ঘটনা আরও বহু। বন্দরের জন্য ভয়াবহ আশংকার কারণ হওয়া সত্ত্বেও কতিপয় পণ্যের এজেন্ট বাল্কহেড দিয়ে বেপরোয়াভাবে বহির্নোঙরে মাদার ভেসেল থেকে পাথর, কয়লাসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করছেন। শিপিং সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, স্বল্প দূরত্বে অভ্যন্তরীণ নৌপথে চলাচলের জন্য তৈরি বাল্কহেড দিয়ে বহির্নোঙর থেকে পণ্য পরিবহনে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। কারণ, জাহাজ চলাচল ও বন্দরকে ঝুঁকির সম্মুখীন করেছেন তারা।