বিজনেসটুডে২৪ প্রতিনিধি
চট্টগ্রাম: দেশে চাকরি-বাকরির অবস্থা কি? যেন সোনার হরিণ। হণ্যে হয়ে খুঁজছেন তরুণ-তরুণীরা। কোথাও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিলে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন।
সিটি কর্পোরেশন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে কয়েকটি পদের জন্য। আজ আবেদনের শেষদিন। বেলা ১১ টায় গিয়ে দেখা গেল টাইগারপাস থেকে কর্পোরেশন কার্যালয়মুখী গলিতে শ’ শ’ তরুণ-তরুণী। কারও পিঠে ব্যাগ, কারও হাতে আবেদনপত্র ভর্তি খাম। কর্পোরেশনে জমা দিতে যাচ্ছেন। গলিতে প্রবেশ করতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের শেড। সেখানে অনেকে ব্যস্ত আবেদনপত্র তৈরি, আনুষঙ্গিক ডকুমেন্টস সংযুক্ত করে খামে ভরতে। এরপর যতই এগিয়ে যাওয়া কর্পোরেশন কার্যালয় পর্যন্ত একই অবস্থা। চাকরিপ্রার্থি তরুণ, তরুণীদের ছুটে চলা চতুর্থ তলায় সংস্থাপন শাখায় আবেদনপত্র জমা করতে।
৪০৬ নম্বর কক্ষে জমা নেয়া হচ্ছে। ওপরে ওঠার সিঁড়িও ঠাসা।কেউ জমা দিয়ে নামছেন, কেউ জমা দিতে ওঠছেন। আর চতুর্থ তলার দৃশ্য অন্যরকম। প্রচণ্ড রকম ভিড়। কর্পোরেশনের এক কর্মী বললেন, ‘আজ অনেক কম ভিড়। গত কয়েকদিন তো নিঃশ্বাস ফেলতে পারিনি এমন অবস্থা।’
সংস্থাপন শাখার সেই কক্ষের দুই দরজার সামনে বস্তা নিয়ে বসে আছেন কর্পোরেশন কর্মী। আবেদনপত্র তাতে ড্রপ করছেন। কিছুক্ষণ পরপর বস্তাভর্তি দরখাস্ত ভিতরে নিয়ে রাখা হচ্ছে। আর চারশ’ ছ’ নম্বর কক্ষের সবখানে ছড়িয়ে অগুণতি খামে ভরা আবেদনপত্র। কয়েকজন কর্মীর বিরামহীন ব্যস্ততা এসব আবেদনপত্র বস্তায় ভর্তিতে। এভাবে কত বস্তা দরখাস্ত এ পর্যন্ত জমা হয়েছে জানতে চাইলে কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানালেন, ‘আনুমানিক ৪০ বস্তার কম না। আজ সারাদিনে আরও তো জমা হবে।’
আরও জানালেন, ১০ম গ্রেডের সহকারি এস্টেট অফিসার এবং ১৬তম গ্রেডের কর আদায়কারি, ক্রোকি অফিসার, হিসাব সহকারি, যানবাহন পরিদর্শক, অনুমতিপত্র পরিদর্শক এবং বাজার পরিদর্শক পদের জন্যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। যে পরিমাণ আবেদনপত্র জমা হয়েছে সেগুলো খাম থেকে বের করে যাচাই করতে প্রচুর সময় প্রয়োজন হবে।এখানে কথা হয় সিলভি রহমানের সাথে। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে ওঠা। চট্টগ্রামের একটি খ্যাতনামা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি, এইচএসসি এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স মাস্টার্স।ফলাফলও চমৎকার। দু’বছর ধরে চাকরির আবেদন করে চলেছেন। সকাল-বিকাল অনলাইনে বেসরকারি চাকরির আবেদন করেন। চাকরির বিভিন্ন পত্রিকাও কিনেন। আবেদন করেন, ইন্টারভিউ দেন। কম শিক্ষাগত যোগ্যতার চাকরির জন্যও আবেদন করেছেন অনেক। এ পর্যন্ত। আর কোন খবর আসে না। বললেন: সে এক অবিশ্বাস্য যন্ত্রণা, মুখ লুকিয়ে চলা। ‘মা-বাবা অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা করিয়েছেন। এখনও তাদের ঘাড়ে বোঝা আমি। তাদের টাকা নিয়ে চলতে হয়। কলেজ-ভার্সিটি থেকে শুধুমাত্র প্রাতিষ্ঠানিক সার্টিফিকেটই পাওয়া যায়। তাতে কোনো চাকরি পাওয়া যায় না অনেকেরই।’ তবুও তো হয় অনেকের। এ প্রসঙ্গে বললেন, ‘চাকরি পেতে হলে ফোনের জোর লাগে।’
চাকরির বাজার প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের এক শিল্পপতি বললেন, সাধারণত বেসরকারি খাতের চাকরিতে ৭০ শতাংশ প্রয়োজন কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কর্মী। আর মাত্র ৩০ শতাংশ দরকার প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাসম্পন্ন। অফিসিয়াল কাজের জন্য। কিন্তু ৯০ শতাংশ উ্রচ্চ শিক্ষিতের নেই কারিগরি জ্ঞান।তাই এমন অবস্থা বিরাজমান চাকরি বাজারে। বললেন, চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করলে চাকরি সংকট এমন থাকবে না।