সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করতে হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি লাগবে। বেসরকারী ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশে স্বাস্থ্য সেক্টরে নৈরাজ্য থামবে না এবং রোগীদের বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির মাত্রা ভয়াবহ হবে বলে আশংকা করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম।
মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, যুগ্ন সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব নেতৃবৃন্দ বলেন, বাংলাদেশে প্রচলিত ভ্রাম্যমাণ আদালত আইন ২০০৯ এর অধীনে পরিচালিত অভিযান পুরো বিশ্বে সহজ একটি আইনি প্রতিকার মাধ্যম হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মানুষ ভোগান্তিতে পড়লে অতিসহজে এই আইনের মাধ্যমে প্রতিকার পেতে পারছেন। যার মাধ্যমে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য, জীবন রক্ষাকারী ওষুধ, গণপরিবহনসহ অনেকগুলি অত্যাবশ্যকীয় সেবা নিয়ে ভোগান্তির সহজ আইনি প্রতিকার পাবার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের একটি মহল গোড়া থেকেই এই অভিযানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আইনটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা করেছেন।
আরও বলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এমনিতেই ত্রিমুখী প্রশাসন চলছে। সরকারী প্রশাসনের বাইরে বিএমএ ও স্বাচিপ এর পৃথক নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য প্রশাসন এমনিতেই বিপর্যস্ত। অন্যদিকে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরা একদিকে চিকিৎসক আবার অন্যদিকে তারা বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক। কিছু চিকিৎসকদের দু’ধরনের ভূমিকার কারনে মানুষ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পায় না আর বেসরকারি ক্লিনিকে গিয়েও জিম্মি।
নেতৃবৃন্দ বলেন বেসরকারি ক্লিনিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের দাবির মুখে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনার আগে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেবার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আজকে ক্লিনিক মালিকরা এ দাবি করছে, কালকে গণপরিবহন মালিক, পরের দিন হোটেল রেস্তোরা, তারপরের দিন দোকান মালিক সমিতিসহ সকল ব্যবসায়ী এ ধরনের দাবি উত্থাপন করবে। যার চুড়ান্ত বলি হবেন দেশের সাধারন ভোক্তারা। ভোগান্তি ও প্রতারনার শিকার হলে তখন আর কোন জায়গায় প্রতিকার চাওয়ার সুযোগ থাকবে না।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন হাসপাতালে অভিযান দরকার নেই এ ধরনের মন্তব্য করার অর্থ তারা এখন যেভাবে রোগীদের হয়রানি, অতিরিক্ত বিলের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে পকেট কাটছে, ভুয়া ও মনগড়া টেস্ট রেজাল্ট দিয়ে প্রতারনা করছে, ভুয়া ডাক্তার, মেয়াদহীন রিএজন্টে, ওষুধের ব্যবসা করছে সেসবকে বৈধতা দেয়া। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাসপাতালে অভিযানের স্বচ্ছতা ও আইনের অপব্যবহার না করার নির্দেশনা হিসাবে চলমান ভেজাল বিরোধী অভিযানের আদলে অভিযান চলাকালে ক্লিনিক মালিক সমিতি ও ক্যাব প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের নির্দেশনা দিতে পারতো। তা না করে ক্লিনিক মালিকদের পক্ষে পরোক্ষ ভাবে অভিযান বন্ধের দাবিকে সমর্থন করলেন। যা কোন ভাবেই কাম্য নয়। ক্লিনিক মালিকরা যদি স্বচ্ছতার সাথে দেশীয় আইন অনুযায়ী হাসপাতাল পরিচালনা, সেবা মূল্য আদায় ও রোগীদের সেবা দিয়ে থাকেন তাহলে তাদের ভীত হবার কোন কারণ নেই।