বিজনেসটুডে২৪ ডেস্ক
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অন্তত পাঁচটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে হরতাল সমর্থকরা। রবিবার (২৮ মার্চ) সকালে মহাসড়কের সাইনবোর্ডের কাঁচপুর এলাকায় দুইটি ট্রাক, একটি বাস ও একটি কাভার্ড ভ্যানসহ পাঁচটি গাড়িতে আগুন দেয় তারা। সেই সঙ্গে আরও শতাধিক গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে শাকিল (২৫) নামে একজন ফার্নিচার মিস্ত্রি গুলিবিদ্ধ হন।
এদিন সকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে হরতাল সমর্থকরা। এ সময় বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যান চলাচল। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয় ও আগুন নিভিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু করে। তবে এর কিছুক্ষণ পর আবারো অশান্ত হয়ে ওঠে পুরো এলাকা। সড়কের যানবাহন ভাঙচুর ও আগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। একপর্যায়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে বিজিবির সদস্যরা। এসময় উভয়পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষে শাকিল (২৫) নামে একজন ফার্নিচার মিস্ত্রি গুলিবিদ্ধ হন বলে জানা গেছে। বর্তমানে তিনি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
হরতালের সমর্থনে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় জড়ো হতে থাকেন হেফাজতের নেতা-কর্মীরা। এরপর হরতালের সমর্থনে মিছিল করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শিমরাইল এলাকায় অবস্থান নেয় তারা। এ সময় মহাসড়কে বেশ কয়েকটি স্থানে টায়ারে আগুন ধরিয়ে এবং রাস্তায় ইট বিছিয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পরে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডিআইটি, চাষাঢ়া, সাইনবোর্ড, শিমরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি ও র্যাব সদস্যরা।
ঢাকা, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নেতাকর্মী ও প্রতিবাদী মুসল্লিদের হত্যা ও হামলার প্রতিবাদে আজ রবিবার (২৮ মার্চ) সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। গত শুক্রবার রাতে পুরানা পল্টনে এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী এ ঘোষণা দেন।
হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতালের মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ
রবিবার বেলা ১১টার পর থেকে জেলা সদর, আশুগঞ্জ, সরাইলের একাধিক স্থানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বেলা ১১টার পর জেলা পরিষদ ভবনে আগুন দেওয়া হয়। নিচতলার অনেক কক্ষে আগুন দেওয়ার পর এসির বিস্ফোরণ হয়।
এছাড়া সদর উপজেলা ভূমি অফিস, সুরসম্রাট আলাউদ্দিন সংগীতাঙ্গন ও পৌরসভায় ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের মূল সড়কের অনেক স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ট্রেন চলাচলে বাধা দিতে ড্রেন থেকে কংক্রিটের স্ল্যাব উঠিয়ে রেললাইনে রাখা হয়েছে। রেললাইনের ক্ল্যাম খুলে ফেলা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ এবং হরতালের প্রতিবাদে দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের গুলি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় হতাহতের প্রতিবাদে রবিবার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় হেফাজতে ইসলাম।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে প্রতিবাদে নেমে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা। জুমার নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদ এলাকায় সংঘর্ষ শুরু হয়। এ ঘটনায় অর্ধশতাধিক আহত হন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে চট্টগ্রামের হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিক্ষোভ মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। এতে হাটহাজারীতে চারজন আর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন নিহত হন।
শনিবার বিকেলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিজিবি ও পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে হেফাজত নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে কমপক্ষে পাঁচজন নিহত হন।