ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ১৮ কোটি টাকা এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে লভ্যাংশ দেয়ার কথা বলে স্ট্যাম্পে চুক্তি করে নেয়া ৩০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছিলেন ব্রোকার হাউজ ক্রেস্ট সিকিউরিটিজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তারা গ্রাহকের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান।
সোমবার নোয়াখালীর মাইজদী এলাকা থেকে ক্রেস্ট সিকিউরিটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও তার স্ত্রী এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক নিপা সুলতানাকে গ্রেফতার করে ডিবির রমনা বিভাগের একটি টিম।
আবদুল বাতেন বলেন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের অধীনে একটি ব্রোকার হাউজ ক্রেস্ট সিকিউরিটি। প্রতিষ্ঠানটিতে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা লেনদেন করেন। সারাদেশের ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ২২ হাজার বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে। গত ২২ জুন প্রতিষ্ঠানটি ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ১৮ কোটি টাকা সরিয়ে অফিস বন্ধ করে দেয়। তিনি বলেন, ১৮ কোটি টাকা প্রতিষ্ঠানটি সরিয়েছে। কিন্তু সেই বার্তা ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের মোবাইলে যায়নি। এরপর বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠানের পল্টন ও জনসন রোডের অফিসে গিয়ে দেখেন অফিস তালা দেয়া। তারপর তারা মামলা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা হয়েছে।

ব্রোকার হাউজটির স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ, পরিচালক তার স্ত্রী নিপা সুলতানা ও ভাই ওয়াহিদুজ্জামান। তারা সবাই মিলে গ্রাহকের শত শত কোটি টাকার বিনিয়োগ ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। আরও জানান, বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে স্ট্যাম্পে চুক্তির মাধ্যমে ৩০ কোটি টাকা নিয়েছিলেন তারা। এই টাকার জন্য ওই ব্যক্তিদের লভ্যাংশ দিতেন। এটা বেআইনি। সেই টাকাটাও তারা আত্মসাৎ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) ২ প্রতিনিধিসহ ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। কমিটি বিনিয়োগকারীদের অর্থ লুপাটের পরিমাণসহ বিস্তারিত তুলে ধরবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রি করলেও তারা কেনো মুঠোফোনে ম্যাসেজ পায়নি, এজন্য সিডিবিএলের কোন ঘাটতি আছে কিনা, তা অনুসন্ধান করবে।
হাউজটির মালিকরা যেনো বিদেশে যেতে না পারে, সেলক্ষে ডিএসই থেকে পল্টন থানায় অভিযোগ করা হয়। একইসঙ্গে মালিকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করে। এখন তাদের ১০টির বেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এ হাউজটির ৩টি শাখা – নারায়ণগঞ্জ, ঢাকার বারিধারা ও কুমিল্লায়। সবগুলো শাখাই বন্ধ ।
বন্ধ করার আগে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ থেকে প্রায় ৭০ লাখ টাকার শেয়ার কেনা হয়। তবে এর বিনিময়ে ডিএসইকে দেওয়া চেক বাউন্স করে। ফলে হাউজটির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে ডিএসই। তাদের কাউকে না পেয়ে কেনা শেয়ারগুলো সাময়িকভাবে ফ্রিজ করে রাখে। পরবর্তীতে ওই শেয়ারগুলো বিক্রি করে পাওনা পরিশোধ করে ডিএসই।
কিছু কিছু বিনিয়োগকারীকে ক্রেস্ট সিকিউরিটিজ থেকে দেওয়া চেকও বাউন্স করেছে। হাউজ থেকে তাদেরকে চেক দেওয়া হয়েছে টাকা তোলার জন্য। কিন্তু ব্যাংকে গিয়ে তারা দেখে একাউন্টে কোন টাকা নেই।